পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে গান গাইছেন উপমাহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা। বাংলা, উর্দু, হিন্দি, পাঞ্জাবি, সিন্ধি, গুজরাটি, বালুচ, পশতু, ফারসি, আরবি, স্প্যানিশ, ফরাসি, ইংরেজি ভাষাসহ মোট ১৮টি ভাষায় ১০ হাজারের বেশি গান গেয়েছেন তিনি। যুক্ত আছেন সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ড নিয়েও। ১৯৫২ সালের ১৭ নভেম্বর বরেণ্য এই শিল্পী জন্মগ্রহণ করেন, আজ জীবনের আরেকটি নতুন বছর শুরু করলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা। সময়ের হিসেবে আজ তাঁর ৭০তম জন্মবার্ষিকী। এবারের জন্মদিন উপলক্ষে দুপুরে চ্যানেল আইয়ে বিশেষ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন তিনি। দিনটি উপলক্ষে কথা হয় তাঁর সঙ্গে
শুভ জন্মদিন।
ধন্যবাদ।
এবার তো আপনার ৭০তম জন্মবার্ষিকী।
কে বলল ৭০ বছর। আমার তো ৭০ এখনো হয়নি (হাসি)।
তাহলে কত বছর হলো এবার?
১৭ নভেম্বরে ১৭ বছর হবে। তো এবার ১৭ বছর আরকি (হাসি)।
সতেরো বছরের জন্মদিনের অনুভূতি কেমন, সেটা যদি বলতেন?
মাত্র তো টিনএজার হয়েছি, সে জন্য ভালোই লাগছে।
যেহেতু টিনএজার হয়েছেন, মনে মনে নিশ্চয় জন্মদিন নিয়ে নতুন পরিকল্পনা।
তা তো আছেই। এমনিতে জন্মদিনে পরিবার আর আত্মীয়স্বজন বাসায় আসে। তাদের সঙ্গে খাওয়াদাওয়া, আড্ডা হয়। এবার বেশি বড় করে কিছুই করা হচ্ছে না। সব সময় বাসায় যা হয়, তাই–ই হবে। ১৮ হলে হয়তো একটু বড় করে করব ভাবছি (হাসি)।
গানের মানুষ রুনা লায়লার আগামী দিনের পরিকল্পনা...
গান গেয়ে যাব। ভালো গান গাওয়ার চেষ্টা করে যাব। আরও কিছু ভালো সুর করার ইচ্ছে আছে। কিছু সুর তো অবশ্য করেছিও। এবারের করা সুর থেকে আমাদের এই প্রজন্মের শিল্পীদের দিয়ে গান গাওয়াব। দেশের যাঁরা কিংবদন্তি আছেন, তাঁদের দিয়েও গাওয়াব।
আপনার এসব প্রকল্প নিয়ে কোনো পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কি কথা হয়েছে? কেউ কি এগিয়ে এসেছে এসব গান প্রকাশে?
আমার সুরে এর আগে যে গানগুলো প্রকাশ করেছি, সেখানে পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানের আন্তরিক সহযোগিতা পেয়েছি। এবারও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথাবার্তা হচ্ছে। তবে কারও সঙ্গে চূড়ান্ত কিছুই করিনি। দেখা যাক। তবে যাঁদের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ হবে, শিগগিরই হয়তো তাঁদের সঙ্গে নিয়ে গানগুলোর কাজ এগিয়ে নেব।
জন্মদিনে অনেকে এ–ও বলে থাকেন, জন্মদিন মানেই মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়া। আপনি কী বলেন?
জন্মদিন মানে আরেকটা বছর বেঁচে থাকা। সুস্থ থেকে বেঁচে থাকলাম এটাই আরকি। তবে একটা ইন্টারেস্টিং কথা আজ সবার সঙ্গে শেয়ার করতে চাই।
কী সেই কথা?
এ বছর আশাজির (আশা ভোসলে) জন্মদিনে ফোন করলাম। বললাম, আশা দিদি, হ্যাপি বার্থ ডে। শুনে হাসলেন। এরপর বললেন, কিসের হ্যাপি। এখন তো ওপরে ওঠার সিঁড়ি চালু হয়ে গেছে। হ্যাপি কোথা থেকে এল, এটা নিয়ে আমরা অনেকক্ষণ হাসাহাসি করলাম। তবে আমার এখনো ওপরে ওঠার চিন্তাভাবনা মাথায় আসে না। আল্লাহর কাছে চাই যে সুস্থভাবে আরও হায়াত দিক। যাতে আরও ভালো কিছু করে যেতে পারি। সেটাই চাওয়া। এই বয়সেও গান করছি, সুর করছি, পারফরম্যান্স করছি—এটা আল্লাহর অশেষ রহমত।
সংগীতজীবনের দীর্ঘ ভ্রমণ। অনেক অর্জন। দেশ–বিদেশেও নামডাক। আপনার কি মনে হয় এই জীবনে কোনো অপ্রাপ্তি রয়েছে?
আমার মনে হয়, এই জীবনে যা পেয়েছি তা অনেক বেশি। এতটা আমি প্রাপ্তির যোগ্য কি না ভাবি। তাই বলতে পারি, প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি প্রাপ্তি। পেছন ফিরে তাকালে তো এমনো মনে হয়, এই সবই কি আমার প্রাপ্তি? সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, দেশ–বিদেশের লাখো কোটি মানুষের যে ভালোবাসা, দোয়া, শ্রদ্ধা, আশীর্বাদ পেয়েছি—এমনটা কয়জনের ভাগ্যে জোটে। দেশ–বিদেশে সংগীতের অনুজপ্রতিমেরা যে সম্মান ও ভালোবাসা দেখায়, তা বিস্ময় লাগে। এটা তো আমার ওপর সত্যিই আল্লাহর বিশেষ রহমত। মানুষের মনের মধ্যেই আছি, তারা প্রতিনিয়ত দোয়া করছে, ভালোবাসা প্রকাশ করছে—অপ্রাপ্তির কোনো জায়গা নেই।
এমন কোনো স্বপ্ন মনে মনে পুষে রেখেছেন, যা করতে চান?
অনেক দিনের স্বপ্ন ভালো মানের একটি ক্যানসার হাসপাতাল করার। নানা ব্যস্ততার কারণে এটা নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবা হয়ে ওঠেনি। আমার বড় বোন দিনা লায়লা ক্যানসারে মারা যান, তাঁর নামে ঢাকা শিশু হাসপাতালে একটা ওয়ার্ড করেছি। এটাই যে করতে পেরেছি, একটা শান্তির জায়গা।
তার মানে স্বপ্নটা তো এখনো শেষ হয়নি?
স্বপ্ন শেষ হয়নি। এটা তো আসলে অনেক বড় প্রকল্প। ভালো মানের ক্যানসার হাসপাতাল করতে অনেক কিছুই লাগবে। দেখা যাক, বেঁচে থাকতে স্বপ্নটা পূরণ করে যেতে পারি কি না। মোটকথা, মানুষের বড় ধরনের উপকারে আসতে পারার একটা স্থায়ী সুযোগ চাইছি।
আপনার জন্মদিন উপলক্ষে অনুজ চারজন শিল্পী নতুন গান গেয়েছেন।
চ্যানেল আইয়ের উদ্যোগে গান তৈরির এই বিষয়টি আমি জানতামই না। আজ (বুধবার) সন্ধ্যায় শুনেছি। গানটি গেয়েছে কোনাল, ঝিলিক, মেজবা বাপ্পী ও তরিক মৃধা। এটা সত্যিই খুব অপ্রত্যাশিত। খবরটি শোনার পর ইমোশনাল হয়ে গেছি। কারণ, শিল্পী হিসেবে গান দিয়ে জন্মদিনের উপহার, নিঃসন্দেহে দারুণ ভাবনা। যারা গানটি গেয়েছে, আমি তো ওদের বলি, আমার বাচ্চারা। বাচ্চারা যখন আমাকে নিয়ে গাইল, এটা তো সত্যিই বিশেষ আনন্দের ও আবেগের ব্যাপার।