ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে কাজ করে আবারও আলোচনায় বিজরী বরকতউল্লাহ। সম্প্রতি বিঞ্জ–এ মুক্তি পেয়েছে ভিকি জাহেদ পরিচালত ‘দ্য সাইলেন্স’। সম্প্রতি ঢাকার মহাখালীতে স্টার সিনেপ্লেক্সে নতুন এই ওয়েব সিরিজের প্রিমিয়ার অনুষ্ঠিত হয়। এই ওয়েব সিরিজসহ অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা বলল ‘বিনোদন’
‘দ্য সাইলেন্স’ কী ধরনের সিরিজ?
কিছুটা ভৌতিক, কিছুটা সাসপেন্স থ্রিলার। ট্রেলারে অনেক ঘটনার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। একটা দরিদ্র পরিবার, যাদের শুধু বড়লোক হওয়ার ইচ্ছাই না, বড় ধরনের বাসনা রয়েছে হঠাৎ কোটিপতি হওয়ার। এ কারণেই তারা বিভিন্ন খারাপ কাজ করতে থাকে। কিন্তু তারপর এক দম্পতির দেখা হয় আরেক দম্পতির সঙ্গে। এই দম্পতির রয়েছে রহস্যময় কিছু বিষয়। সেটা কী, এই গরিব পরিবারের থেকে তারা কী চায়, সেটাই মূলত গল্পের রহস্য।
পরিচালক ভিকি জাহেদের সঙ্গে তো আগে কাজ হয়নি?
ভিকি জাহেদ ও তাঁর টিমের সঙ্গে আমার প্রথম কাজ। এমনকি আমি এই পরিচালকের কোনো কাজও আগে দেখেনি। নতুন ধরনের ভাবনাচিন্তা নিয়ে তাঁরা এগিয়েছেন। এই কাজের প্রস্তাব পাই গত বছরের সেপ্টেম্বরে। প্রিপ্রোডাকশনের কাজটাও খুব ভালোভাবে করেছে। প্রিপ্রোডাকশন ভালোভাবে করার কারণে শুটিং করতেও অনেক ভালো লাগে। বেশ গোছানো টিম। ওরা নতুন নতুন ভাবনাচিন্তা নিয়ে কাজ করে। আমি নিজেও সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা মানুষ; নতুনদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখছি। এই সময়ের অনেক নির্মাতা গল্প জেনে, বুঝে, ভেবে তারপর নির্মাণে এসেছে। আমি তো খুব আশাবাদী—ভাবি, কোথায় ছিল তারা এত দিন! তারা ঠিকঠাকভাবে কাজটা করতে চায় বলে ওটিটি থেকে একটু ভালো বাজেট দিয়ে কাজ করছে।
ভালো কাজে শুধু বাজেটই গুরুত্বপূর্ণ নাকি ভাবনাচিন্তাও?
বাজেটের পাশাপাশি অবশ্যই ভালো ভাবনা চিন্তা। কাজের ক্ষেত্রে আপসহীনও থাকতে হবে। কোনো আপস করা যাবে না। যখন কোনো কাজ করব, এটা নাই, ওটা নাই বলা যাবে না। কাজ যে দেখে না, এটার জন্য দর্শকের কিন্তু দোষও দেওয়া যাবে না। আমার অভিজ্ঞতায় বলতে পারি, এখন বেশির ভাগ টেলিভিশন চ্যানেল কর্তৃপক্ষ ভাবছেন, তাদের অনলাইনে বা ইউটিউব প্ল্যাটফর্মে নাটক, সিনেমা দেখে নেবে। এটা ভাবারও কারণ আছে।
কী সেই কারণ?
আমাদের জীবনযাত্রা এখন জটিলতাপূর্ণ হয়ে গেছে। কোথাও যাব, আমি হয়তো জানি ২০ মিনিট লাগবে, কিন্তু আমি জানি না কখন সেখানে পৌঁছাব। সে হিসেবে একটা নির্দিষ্ট টাইমে নাটকটা অনএয়ার হবে, বসে দেখব সেই অবস্থাও নেই। প্রত্যেকটা টেলিভিশনের ধারণা হয়ে গেছে, টেলিভিশন দেখুক আর না দেখুক, অনলাইনে বা ইউটিউবে ঠিকই দেখবে যখন যার সময় হবে। নাটকের সবাই এখন ভিউ গুনছে। জানতে চাইছে না, এত লাখ মানুষ একসঙ্গে টেলিভিশনে নাটক দেখছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এখন অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। সময়ের সঙ্গে মানুষের ভাবনাচিন্তা ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন হয়। টেলিভিশন নাটক বলতে ও রকম কিছুই নেই। এখন সবাই দেখছি ভিউ গুনছে। ওই নাটকের ভিউ কম, ওই নাটক বন্ধ করে দাও। সিরিয়াল হলেও ভিউ নেই তো বন্ধ করে দিচ্ছে!
অনেকেই বলছেন, ওটিটির কারণে অভিনয়ে আপনার দ্বিতীয় ইনিংস শুরু হয়েছে...
এভাবে ভাবিনি। এই জীবনে যত কাজ করেছি, তার চেয়ে বেশি ছেড়েছি। সমস্যাটা হচ্ছে, দেশে নারীকেন্দ্রিক গল্প সেভাবে তৈরি হয় না। যখনই এ ধরনের গল্পের আলাপ কারও সঙ্গে করা হয়, বলে ওঠে, না না না, এ ধরনের গল্পের ভিউ নেই। মানুষ দেখতে চায় না। অথচ প্রতিটা বয়সের একটা গল্প আছে, জার্নি আছে, সৌন্দর্য আছে—ও রকম গল্প আমাদের এখানে লেখা হচ্ছে না। প্রায়ই দেখি হয় প্রেমিকা, না হয় মা ভাবে। নারীদের কি মা আর ভাবির বাইরে ভাবা যায় না? নারীর নিজস্ব সত্তা ও ম্যাচিউরিটি আছে, এ ধরনের ভাবনা নিয়ে কোনো গল্প লেখা হয় না। তবে আমাদের ধারণা, এখন বদলাতে হতে শুরু করেছে। নতুনদের অনেকে ভালোও করছে। এ জন্যই শাওকীর সঙ্গে কারাগার নিয়ে আলাপে একবারেই ওকে বলেছিলাম। তখন আমি বিষণ্নতায় ভুগছিলাম। ‘কারাগার’ ছিল করোনার প্রথম ওয়েবের পর আমার প্রথম আবির্ভাব। শুটিং করতে গিয়ে পারব না কি না, এটা নিয়েও সেন্দহ ছিল। আত্মবিশ্বাস কম ছিল।
কী কারণে?
করোনায় পরিবারের অনেককে ভুগতে হয়েছে। দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়ার পর এটাই ছিল প্রথম কাজ। আমি পরিচালককে তাই বলেছিলাম, শাওকী, আমি আত্মবিশ্বাস পাচ্ছি না। এত বছর কাজ করার পরও নিজের এমন মানসিকতা আমাকে অবাক করেছে। জীবনে আমি সব কাজ ডিরেক্টরকে ট্রাস্ট করেই করেছি। দ্য সাইলেন্সও ডিরেক্টরকে ট্রাস্ট করে করেছি।
এই যে বিশ্বাস নিয়ে কাজ করেন, বিশ্বাসের মর্যাদা পান?
কাজটা আমি খুব আনন্দ নিয়ে করি। করার সময় কখনোই মনে করি না, এটা কেউ দেখবে না বা দেখবে। কাজের সময় মনে হয়, আরও এফোর্ট দিই। সবাই যখন মনোযোগ দিয়ে কাজটা করছেন, তখন ঘড়ির দিকেও তাকাই না। ফুটবল খেলার সময় একটা গোল দেওয়ার পর খেলোয়াড় কি মনে করে, এই গোলটা দিয়েই ট্রফি পেয়ে যাব? না। ওই খেলোয়াড় মনে করে, ওই গোলটাই আমার দরকার, যেভাবেই হোক দেব। নাটকে অভিনয়ের ক্ষেত্রেও তাই দর্শক দেখবে কি দেখবে না ভাবি না, মন দিয়েই শুধু কাজ করি।