বছরের শুরুতে নতুন গান প্রকাশ করলেন গায়ক ও সংগীত পরিচালক বাপ্পা মজুমদার। ‘অবশেষে’ শিরোনামের গানটি শিল্পীর নিজের ইউটিউব প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত হয়েছে। আগামী মাসে আসছে ব্যান্ডদল দলছুটের অ্যালবাম ‘সঞ্জীব’। নতুন গান, অ্যালবামসহ অন্যান্য প্রসঙ্গে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁর সঙ্গে কথা বলল বিনোদন
‘অবশেষে’ গানটির সঙ্গে ‘ঘাসফড়িং কয়্যার’ও যুক্ত আছে। এই ভাবনা কীভাবে এল?
কয়্যারের ব্যবহার কিন্তু গানে আমরা আগেও করেছি, তবে এভাবে করিনি। এমনিতে ‘ঘাসফড়িং কয়্যার’কে আমার খুব ভালো লাগে। তাদের ভয়েসিংয়ের মধ্যে একধরনের নতুনত্ব আছে। মাঝখানে একবার এই দলের আরমীনের (আরমীন মুসা) সঙ্গে কথা হচ্ছিল, তখন তাকে আমার ভাবনাটা বলার পর আগ্রহী হলো। এর পরিপ্রেক্ষিতে আসলে এই গান করা। নতুন একটা ডাইমেনশন আসবে ভেবেছিলাম, তাই এমনটি করা। প্রকাশের পর সবার কাছ থেকে ফিডব্যাক পেয়ে তেমনটি লাগল।
নতুন নতুন গান বানাচ্ছেন। কয়েকটি গান তৈরিও আছে। নতুন বছরের প্রথম গানটি ‘অবশেষে’ হোক, কী কারণে মনে হলো?
(হাসি)... ‘অবশেষে’ দিয়ে নতুন বছর শুরু করার নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। আসলেই কোনো কারণ নেই। বেসিক্যালি এর আগে আমার নিজেরই একটা গান ছিল, ‘কি করি’ শিরোনামে। এখন আসলে ‘কি করি টু’ করতে চাইনি। সে কারণে আমি শাহান কবন্ধকে বললাম, গানটা যেহেতু তোর লেখা, এটার অন্য একটা থিম চিন্তা কর। ফরগেট অ্যাবাউট কী করি। পরে শাহান বলল, এটার টাইটেল তাই ‘অবশেষে’ দিই। আমিও বললাম ঠিক আছে।
এটা কি তাহলে ‘কি করি’ গানের সিকুয়েল?
আমি সিকুয়েল করতে চাই না। সিকুয়েলে একটা সমস্যা আছে। শ্রোতাদের প্রত্যাশা তৈরি হয়। প্রত্যাশা ঠিকভাবে পূরণ করতে না পারলে আরেক মুশকিল। তাই আমি সিকুয়েল করার পক্ষপাতী না।
গানটা প্রকাশের পর কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
প্রকাশের পর থেকে যা ফিডব্যাক পাচ্ছি, তা মোটেও খারাপ না।
ইউটিউবে গানের মন্তব্যের ঘরে চোখ বুলাচ্ছিলাম। আপনি কি মন্তব্য দেখেন?
আমি মন্তব্যগুলো দেখি আসলে। আপনার ফোন কল আসার আগপর্যন্ত মন্তব্যই দেখছিলাম।
বেশ কয়েকটি মন্তব্যের মধ্যে ‘আপনি আমাদের বাংলা সংগীতের অন্ধকার আকাশে কয়েকটি উজ্জ্বল নক্ষত্রের একজন’ মন্তব্যও দেখছিলাম
আরে বাপরে...ভালোবেসে কতজন কত কী কথা যে বলে। নিঃসন্দেহে শ্রোতা ও ভক্তরা যখন এমন কথা বলে, তা অনেক বেশি অনুপ্রেরণার। এমন মন্তব্য কাজের গতি আরও বাড়িয়ে দেয়। তবে এমন মন্তব্যে আবার ভেসে গেলে চলবে না।
আপনি মাঝে বলেছিলেন, বেশি বেশি গান প্রকাশ করা উচিত। আপনার সমসাময়িক কয়েকজন শিল্পীও এখন তেমনটি বলছেন।
গানের সংখ্যা আসলে বাড়াতেই হবে। আমি যখন থেকে বলছি তখন থেকে তা পালন করছিও। প্রথমত, ভালো গান দিয়ে মানহীন কনটেন্ট রুখে দিতে পারে। দ্বিতীয়ত, বেশি বেশি গান প্রকাশের ফলে যারা গান করছে, তাদের জীবনে যেন একটা সম্পদ থেকে যায়। গান তো একটা অমূল্য জিনিস। এগুলো সম্পত্তি না, সম্পদ। এই সম্পদ যেন থেকে যায়। শিল্পী তার জীবনের একটা পর্যায়ে গিয়ে যেন এটা উদ্যাপন করতে পারে। তৃতীয়ত, মানুষ তো চিরস্থায়ী নয়। একদিন সব শিল্পীকে চলে যেতে হবে। যাওয়ার আগে সে যেন কিছু রেখে যায়। পৃথিবীতে গানটাই শিল্পীর উপস্থিতি হিসেবে থাকবে। শিল্পীর কাজটাই তার উপস্থিতি।
গান প্রকাশের ক্ষেত্রে এখন তো শিল্পীদের স্বাধীন প্ল্যাটফর্মও আছে, চাইলেই তো একের পর এক গান প্রকাশ করতে পারে, তাই না?
আমি মনে করি, যেভাবে হচ্ছে হোক। এভাবে হওয়ার মধ্যে শিল্পী স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। যদিও অনলাইন বা ডিজিটাল ডোমেইনে রেভিনিউর পরিমাণ এত কম, এত নগণ্য, যেটা আসলে হিসাবের মধ্যে আসে না। একটা গান তৈরির খরচের সঙ্গে এটা কোনোভাবেই সামঞ্জস্য নয়। যদি গান করার খরচ এক শ টাকা হয়, তাহলে ডিজিটাল ডোমেইন থেকে আসবে এক পয়সা, ব্যাপারটা এ রকম।
এটা তো তাহলে বেশ হতাশাজনক
এটা একদিকে হতাশাজনক বটে। একই সময়ে এটাও সত্যি, আমি যে গান বানাচ্ছি, তা আজীবনের জন্য আমারই থেকে যাচ্ছে। এটা শিল্পীর সম্পদ। আমার এমন কিছু কাজ রেখে যাচ্ছি, যার স্বত্বাধিকারী শুধুই আমি। আমার অবর্তমানে আমার পরবর্তী প্রজন্ম এসবের একমাত্র উত্তরাধিকার। আমি বলতে চাচ্ছি, একজন শিল্পীর মধ্যে আর্থিকভাবে অনিশ্চয়তা তৈরি যেমন করে, কিন্তু সেই সঙ্গে শিল্পীর মনস্তাত্ত্বিক জায়গায় স্বস্তিও দিতে পারে—আমি কিছু কাজ করে যাচ্ছি। কিছু কাজ রেখে যাচ্ছি। এ কাজগুলো আমাকে হয়তো কোনো একদিন সাপোর্ট করবে। সে কারণে নাম্বার অব সং যত বাড়বে, রেভিনিউর পরিমাণ তত বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। আবার একটা গান বানিয়ে পড়ে থাকলে হবে না, একের পর এক গান বানাতে হবে, যেটা আমার রেভিনিউকে জেনারেট করবে। কে জানে আমার একটা গান হয়তো মিলিয়ন বা বিলিয়ন ভিউ হয়ে যেতে পারে। এমনটি ঘটলে অর্থনৈতিকভাবে ইতিবাচক ঘটনা ঘটতে পারে।
গান প্রকাশের নানা পদ্ধতি পেরিয়ে এখন ডিজিটাল ডোমেইনে প্রধান ভরসা। এই যে ডিজিটাল ডোমেইনে গান প্রকাশ করা হচ্ছে, এটা আসলে কতটা নিরাপদ বলে মনে করছেন।
অন্য সব পদ্ধতির মতো এটারও পরিবর্তন হবে, ব্যাপারটা মাথায় রাখতে হবে। আমরা যে একসময় অ্যালবাম প্রকাশ করতাম, তা–ও কিন্তু পরমুখাপেক্ষী ছিল। তখনো আমাদের গান কেউ যদি সিডি বা ক্যাসেটে প্রকাশ না করত, তাহলে বাজারে আসত না। সত্যি বলতে আমরা কেউই সব জায়গায় স্বয়ংসম্পূর্ণ নই। জীবনের প্রতিটি জায়গায় কারও না কারও মুখাপেক্ষী হতে হবেই। এটাই সমাজের ধারা। এটাই সিস্টেম। আমার মনে হয়, ডিজিটাল ডোমেইনে যেভাবে গান প্রচার হচ্ছে, প্রকাশ করা হচ্ছে—এখানে অনিরাপদ হওয়ার অনেক সুযোগ আছে। এই জায়গাগুলো নিজেকে সুরক্ষিত করতে হবে। আমার কথা হচ্ছে, যদি একটা সৌরঝড় হয়, এটার ব্যাপ্তি যদি অনেক বড় হয়, তাহলে পৃথিবীর চারপাশে স্যাটেলাইটগুলো যেভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে, এগুলো তো তখন ফেল করবে। আমাদের সব তথ্য তো ডিজিটাল ডোমেইনে। সে কারণে আমি মনে করি, যে কাজগুলো আমরা করছি, এগুলোর একটা কপি যেন আমাদের কাছে সংরক্ষিত থাকে। ক্যাসেট বা ট্যাপে যেভাবেই হোক—একটা সুযোগ থাকে কাজগুলো থেকে যাওয়ার। তাই আমি আমার সব কাজ সংরক্ষণ করে রাখছি।
গান নিয়ে সামনের পরিকল্পনা কী?
ফেব্রুয়ারিতে যেমন করে হোক দলছুট ব্যান্ডের অ্যালবাম রিলিজ করবই। ১১ গানের এই অ্যালবাম ডিজিটাল এবং ফিজিক্যাল দুই আকারেই করব। দুটো গান অবশ্য আগে সিঙ্গেল আকারে রিলিজ করেছিলাম। দলছুটের সর্বশেষ অ্যালবাম প্রকাশ করেছি, ২০১২ সালে। প্রায় এক যুগ পর এবার আনছি ‘সঞ্জীব’ নামের এই অ্যালবাম। এটা হবে দলছুটের সপ্তম অ্যালবাম, ২০২০ সালে এটি প্রকাশের কথা ছিল। এরপর কোভিড মহামারির কারণে সব এলোমেলো হয়ে গেল। এখন আবার জোরেশোরে কাজ চলছে।
নতুন কোনো চলচ্চিত্রের গান করছেন?
না, নতুন কোনো গান করছি না। তবে মাসুদ হাসান উজ্জ্বলের ‘বনলতা সেন’ ছবির আবহসংগীতের কাজ করছি।