গত শুক্রবার ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বঙ্গতে মুক্তি পেয়েছে নতুন ওয়েব কনটেন্ট ‘সেকশন ৩০২’। এর প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রান্তর দস্তিদার, এটি ছাড়াও চলতি বছর বেশ কয়েকটি আলোচিত কাজে দেখা গেছে এই তরুণ অভিনেতাকে। ক্যারিয়ার ও নানা প্রসঙ্গে গত সোমবার তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন লতিফুল হক
পূজা কেমন কাটল?
প্রান্তর দস্তিদার : মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরেছি, সবাই মিলে সিনেমা দেখেছি, বাইরে খেতে গেছি; সব মিলিয়ে পরিবারের সঙ্গে আনন্দে কেটেছে। আমি চট্টগ্রামের ছেলে, এবার বাড়ি যেতে পারিনি, এ–ই যা আফসোস।
পূজায় তো আরেকটা আনন্দের উপলক্ষ ছিল, আপনার স্ত্রীর (নিদ্রা দে নেহা) প্রথম সিনেমা ‘শরতের জবা’ মুক্তি পেয়েছে...
প্রান্তর দস্তিদার : পরিবারের সবাই এতে খুব খুশি। গান, অভিনয় মিলিয়ে সিনেমাটি ভালো লেগেছে। সবচেয়ে ভালো লেগেছে ক্লাইমেক্স।
আপনাকে বড় পর্দায় কবে দেখা যাবে?
প্রান্তর দস্তিদার : আমার কাছে অভিনয়টাই আনন্দের, পর্দা নিয়ে আলাদা করে ভাবিনি। তবে আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকজন নির্মাতার কাজের প্রস্তাব আছে, এগুলোর মধ্যে কয়েকটি চিত্রনাট্য নিয়ে রোমাঞ্চিত। আশা করি, বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না। সব সময়ই চেয়েছি মনের মতো চিত্রনাট্য, চরিত্র দিয়ে সিনেমা শুরু করতে। আমি সৌভাগ্যবান, এ ধরনের কয়েকটি চিত্রনাট্য হাতে আছে।
আপনার আর নিদ্রার জুটি শুরু হয়েছিল ‘আন্তঃনগর’ দিয়ে, এরপর বাস্তব জীবনেও জুটি। পর্দায় দুজনকে আবার কবে দেখা যাবে?
প্রান্তর দস্তিদার : তৌহিদ আশরাফের ‘শখের নারী’তে আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি। এটা সম্ভবত চলতি মাসেই আসবে। আমাদের অভিনীত দুটি চরিত্রই বেশ অন্য রকম। তবে নিদ্রার সঙ্গে বড় কোনো কাজ—সিরিজ বা সিনেমা করতে চাই।
চলতি বছরই অভিনেতা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। এর মধ্যে কোন কাজ বা চরিত্র আপনার প্রিয়?
প্রান্তর দস্তিদার : আমার অনেকগুলো কাজ এখনো মুক্তি পায়নি, যেগুলো নিয়ে আমি খুব রোমাঞ্চিত। এখন পর্যন্ত করা প্রিয় কাজের কথা বলা মুশকিল। কারণ, মুক্তি পাওয়া কাজের কোনোটিই আমার প্রিয় চরিত্র বলা যায় না। পরিশ্রম করছি, ফলও পাচ্ছি; কিন্তু নিজের কোনো কাজ নিয়ে শতভাগ সন্তুষ্ট নই। আশা করি, দ্রুতই নিজের প্রিয় চরিত্র খুঁজে পাব। তবে শঙ্খ দাশগুপ্তর সঙ্গে একটি বিজ্ঞাপনচিত্র করেছিলাম, যেখানে আমাকে আধুনিক দরজির চরিত্রে দেখা যায়। যে কথা বলে না, এক্সপ্রেশন দিয়ে সব প্রকাশ করে। কাজটি করে খুব মজা পেয়েছিলাম।
সম্প্রতি দেখা দেশি বা বিদেশি কোন কোন কাজ ভালো লাগল?
প্রান্তর দস্তিদার : ‘তুফান’ ভালো লেগেছে। বিশেষ করে ‘লাগে উরাধুরা’ গানটি দেখে প্রচণ্ড ভালো লেগেছে। তিনি (শাকিব খান) যেভাবে পর্দায় নিজেকে উপস্থাপন করেছেন, দেখলেই মনে হয়, এ–ই না হলে হিরো! এ ছাড়া নেটফ্লিক্সে ‘সেক্টর ৩৬’ দেখলাম, বিক্রান্ত ম্যাসির পারফরম্যান্সটা জাস্ট অন্য রকম। তাঁর চরিত্র, পুরো সিনেমাই এত নিখুঁত, জাদুকরি যে বলে বোঝাতে পারব না।
আপনি তো প্রশিক্ষিত অভিনেতা নন। অভিনয়দক্ষতা বাড়াতে কী করেন?
প্রান্তর দস্তিদার : ‘আন্তঃনগর’ দিয়ে যখন শুরু করি, তখন এটা নিয়ে ভেবেছি। মনে হয়েছে, ক্যামেরার সামনে যত কাজ করব, তত শিখব। তবে উন্নতির জন্য বেশি নির্ভর করি পর্যবেক্ষণের ওপর। কোনো চরিত্র পেলে সেটা নিয়ে নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করি—চরিত্রটি এভাবে কেন কথা বলে, কেন এভাবে হাঁটে? নিশ্চয়ই একটা কারণ আছে। নিজের পর্যবেক্ষণ দিয়ে সেটার একটা ব্যাকগ্রাউন্ড তৈরি করি, এরপর অনুশীলনের মাধ্যমে সেটা পর্দায় তুলে ধরার চেষ্টা করি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপনার ছবির নিচে অনেকেই ‘দক্ষিণি নায়ক’ বলে মন্তব্য করেন। এটা উপভোগ করেন, নাকি বিব্রত লাগে?
প্রান্তর দস্তিদার : যাঁরা বলেন, ভালোবাসা থেকেই বলেন। তবে মনেপ্রাণে বাঙালি হওয়াটাই আমার পছন্দের। কেউ যদি বলেন, আপনাকে দেখতে বাঙালি মনে হয়, তাহলেই বেশি খুশি হব।
নতুন শিল্পী হিসেবে বিনোদন অঙ্গন, বিশেষ করে ছোট পর্দায় কী কী উন্নতির প্রয়োজন মনে করেন?
প্রান্তর দস্তিদার : একই রকম কাজ চাই না, নানা বিষয়ে বৈচিত্র্যময় কাজ হোক। কিছু কিছু কাজে সামাজিক বার্তা থাকুক। ছোট পর্দা কিন্তু দর্শকের সবচেয়ে কাছের, তাই এই মাধ্যমের কনটেন্ট মানুষকে প্রভাবিত করতে পারে।
আপনার ঘরেই যেহেতু অভিনয়ের মানুষ আছে, দুজন নিজেদের কাজ নিয়ে পরামর্শ করেন?
প্রান্তর দস্তিদার : অবশ্যই। নিদ্রা আমার সবচেয়ে বড় সমালোচক। একটা কাজে সব ভালো করে দু-একটা বিষয় খারাপ হলেও সে এটা নিয়ে কথা বলে। আমিও এটা করি, আমাদের মধ্যে এই বোঝাপড়া আছে। পেশাদার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা দুজনই দুজনকে বিশ্বাস করি। দুজন একসঙ্গে প্রচুর সিনেমা দেখি; গল্প, অভিনয়, চিত্রনাট্য—সব দিক নিয়ে কথা বলি। পরিকল্পনা করি, কোনো দিন হয়তো আমরা নিজেরাও বানাব। এই প্রক্রিয়া আমাদের দুজনকেই কাজের ক্ষেত্রে সাহায্য করে।
‘সেকশন ৩০২’ মুক্তি পেল। কাজটা নিয়ে বলুন...
প্রান্তর দস্তিদার : এটা মার্ডার মিস্ট্রি ধরনের কাজ। এখানে ‘মনির’ নামের এক শিক্ষিত তরুণের চরিত্র করেছি; যে চাকরি পাচ্ছে না, বাধ্য হয়ে ডেলিভারি বয়ের চাকরি করে। হঠাৎই সে জড়িয়ে পড়ে এক উটকো ঝামেলায়। ধীরে ধীরে গল্পে আসে আরও নতুন নতুন চরিত্র। শেষ পর্যন্ত কী হয় ছেলেটির জীবনে—এমন গল্প দর্শককে শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাবে।