‘বলব না গো আর কোনো দিন ভালোবাসো তুমি মোরে’খ্যাত বাউল সুকুমার বৈরাগীর আজ নতুন গান ইউটিউবে মুক্তি পাবে। তাঁর গাওয়া বেশ কয়টি গান মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এসব গান করেও বেঁচে থাকতে কঠিন জীবনসংগ্রাম করে যেতে হচ্ছে। বগুড়ার গ্রামের বাড়ি থেকে বর্তমান ব্যস্ততাসহ নানা প্রসঙ্গে কথা বললেন তিনি।
কেমন আছেন?
হ্যাঁ দাদু (হাসি), আমি যেভাবে আছি এই ভালো। বেঁচে তো আছি। শারীরিক অবস্থা খুব একটা ভালো না। মাথায় একটু সমস্যা ছিল। শরীর দুর্বল দুর্বল ভাব। কদিন ধরে যা খাই, তাই বমি হয়ে যায়। এখন কিছুটা ভালো।
চিকিৎসা করিয়েছেন?
আমি ছোটকাল থেকেই ওষুধপাতি খুব কম খাই। আমাদের বাউলের পথে থাকতি হলি বিশ্বাস করে চলতি হয়। এটাই বড় জিনিস।
এখন কোথায় আছেন?
আমি তো বগুড়াতেই গ্রামের বাড়িতে আছি। এখন তো আর ঢাকায় বেশি যাওয়া হয় না। কদিন আগে কাজ ছিল, গেছিলাম। এখন কাজ একটু বন্ধ হয়ে আছে। কোনো প্রোগ্রাম নেই, কেউ ডাকলে যাই। সবাই কাজের জন্যি ডাকেও না। কাজ কম।
কাজ কম হলে চলছেন কীভাবে?
এখন আর কী করব। গরিব মানুষের আর কী হবে, দুঃখে যাদের জীবন গড়া...এভাবেই জীবনটা কেটে যাচ্ছে।
দেশের গানের দর্শকদের কাছে আপনি পরিচিত, সেই জায়গা থেকে আপনার অনেকটাই ব্যস্ততা বাড়ার কথা ছিল?
গান করতে গেলে যা হয়, কেউ প্রথম কথা দিয়ে কথা রাখল, তার পরেরবার থাকল না। এগুলো কষ্ট দেয় দাদু। এই জন্যি গান বাঁধছি, ‘এই শখের ঘর ভাঙে হায়রে আপন মানুষেরা, দুঃখের কথা শুনে মানুষ আরও বেশি দুঃখ দিতে চায় রে রে’...দেখলেম দাদু, কেউ কথা দিয়ে কথা রাখতি চায় না। ঢাকা থেইক্যা এক ছেলে আইস্যা, সন্ধ্যার সময় পা ধরল। আমি বললাম, আমার বাড়িতে আসি এই ক্যাম কেন করো? সে বল্লো, আমি গরিব মানুষ দাদা। সে আমার কাছ থেকে কম টাকায় একটা গান চাইল।
সে গানের পারিশ্রমিক কম দেবে?
আমি বল্লাম, এত কম টাহায় আমি কাউরে গান দেই না। অনেক করে বল্ল জন্যি করলেম। তাকে বল্লেম, কেউ যেন না জানে। তখন আবার সবাই কম টাকা দেবে। কিন্তু দাদু আমি কোনো দিন এই কথা ভুলব না, সে ঢাকা গিয়ে সবাইকে বলে দিছে, কম টাকায় আমার কাছ থেকা গান নিছে। এখন অন্যরাও বলছে কম টাকা দিয়ে গান করি দিতে। বাচপ আর কয়দিন। দেখতেছি বিশ্বাস আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে, বুঝলেন। কী বলব দাদু, আমি জানিই না, মানসে লোক জমানির জন্য অনুষ্ঠানে আমার নাম দেয়। পরে মানুষের কাছে শুনি।
মানুষ কী বলেন?
তারা বলে, আপনার নাম দেখলেম। আপনি তো গেলেন না। তখন খারাপ লাগে। মানুষ মিথ্যা বলে শান্তি পাইলে বলুক। আমার মনে হয়, এসব হচ্ছে আমার কর্ম দোষে।
আপনার স্ত্রী গান নিয়ে এখন কী বলেন?
সে গান ভালোবাসে। গান গাইতে উৎসাহ দেয়। আমি সব সময় গান গাই দাদু। সে জানে গান আমার সবকিছু। আর কিছু নেই। গানই আমার ধ্যান, গানই আমার সাধন, গানই আমার কর্ম, আমার জীবন।
গানের মধ্য দিয়ে নিজেকে কীভাবে খুঁজে পান?
দাদু, যখন আমি গান গাই, তখন আর আমি, আমি থাকি না। আমার কাছে সংগীত এমন একটা জিনিস, সারা বছর গান নিয়া পথে পথে ঘুরতে ঘুরতেই সুখ। কত রাত কেটে গেল গান নিয়া। এই সাধনাতেই বাঁচা আছি। এতেই আমার সুখ। কিন্তু মানুষের কথার বরখেলাপ মেনে নিতে কষ্ট হয়। আমার একটা গান আছে, ‘দুখের কথা বলব কারে শোনার মানুষ নাই এই দেশে, তাই দুঃখ লয়ে নিজেই আমি চেপে রাখি মোরে, বলিব কারে।’
আজ আপনার গাওয়া ‘ভালোবাসি গো’ শিরোনামে একটি গান মুক্তি পাচ্ছে জানেন?
আপনার কাছ থেকে শুনলেম দাদু। জসিমের লেখা। (গানের প্রথম দুই লাইন গেয়ে শোনালেন)। গানের মধ্যেই আমি বাঁচার আশা খুঁজে পাই দাদু।
বর্তমান ব্যস্ততা আর কী কী গান নিয়ে?
বাড়িতেই গান বাঁধি দাদু। আপনারো শোনাই, ‘আসবে না গো তুমি যদি কেন কথা দিলে-এ, কথা দিয়ে রাখলে না গো গেলে আমায় ভুলে’ এই গানটি করেছি। আর করছি ‘হায়রে শান্তির দুনিয়ায়, কেউ তো কারও না, যারে তুমি আপন ভাবো সেই তোমার না।’ নিয়মিত গান করার সুযোগ পালি ভালো থাকতেম। অভাব আছে কিন্তু তিনি যা লিখেছেন তাই হবে। কিন্তু কিছু মানুষের আচারণে কষ্ট লাগে।