চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার চলচ্চিত্র ‘মেইড ইন চিটাগং’ ১৮ নভেম্বর চট্টগ্রামের দুটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে। ইমরাউল রাফাত পরিচালিত ছবিটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন সোলস ব্যান্ডের অন্যতম সদস্য পার্থ বড়ুয়া। তাঁকে এর আগে ‘আয়নাবাজি’ চলচ্চিত্রে অতিথি চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গেছে। বেশ কয়েকটি নাটকেও অভিনয় করেছেন। চলচ্চিত্রের কেন্দ্রীয় চরিত্রে প্রথমবার অভিনয়ের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল, তা জানতে যোগাযোগ করা হয় তাঁর সঙ্গে
‘মেইড ইন চিটাগং’ চলচ্চিত্রটি মুক্তির পর কেমন প্রতিক্রিয়া পাচ্ছেন?
ফাইন। খুবই ফাইন। প্রত্যাশা সেভাবে ছিল না। তাই এখন পর্যন্ত প্রত্যাশা ফাইন পর্যায়ে আছে। এত হাইপ হবে নিজেও ভাবিনি।
মুক্তির আগে চট্টগ্রামের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরছেন, ছবিটি নিয়ে তরুণদের সঙ্গে কথা বলছেন। গানের মানুষ আপনাকে ছবির প্রচারে কীভাবে গ্রহণ করেছেন?
খুবই ভালোভাবে গ্রহণ করেছেন। এ সময়ের তরুণেরা এতটা কানেক্টেড হবে, ভাবিনি। যেখানেই গেছি তরুণদের একটা স্বতঃস্ফূর্ততা ছিল। মুক্তির পর তরুণেরা প্রেক্ষাগৃহ যাচ্ছে। ছবিটি নিয়ে কথা বলছে। চট্টগ্রামের সব তরুণেরা যেভাবে প্রেক্ষাগৃহমুখী হয়েছে সেই দৃশ্যটা ভালো লেগেছে।
চট্টগ্রামের বাইরের সিনেমাপ্রেমীরা কবে মেইড ইন চিটাগং দেখতে পাবেন?
এরই মধ্যে ঢাকা থেকে স্টার সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করেছে। আমরা ২ ডিসেম্বর ঢাকায় ছবিটি মুক্তির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছি। নারায়ণগঞ্জের জয় প্রেক্ষাগৃহে ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে।
আপনি চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার নাটকে অভিনয় করেছেন। নাটকটি নিয়ে দেশের বাইরের, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে দর্শকের বেশ আগ্রহ দেখা গেছে। মধ্যপ্রাচ্যে বাংলা ছবিরও একটা বিশাল দর্শকশ্রেণি আছে।
একদম ঠিক কথা। মধ্যপ্রাচ্যের তিন দেশ থেকেও অলরেডি ছবিটি মুক্তির ব্যাপারে যোগাযোগ করেছে। তারা জানিয়েছে, ছবিটি সম্পর্কে তারা নানাভাবে জানতে পেরেছে। ওখানে মুক্তি দিতে চায়। তাই আমরাও সেখানে মুক্তির পরিকল্পনা ঠিক করেছি।
সিনেমাটি যাঁরা দেখেননি, তাঁদের উদ্দেশে কী বলবেন?
এটা দেখতে হবে। না দেখলে বলে বোঝানোটা একটু ডিফিকাল্ট। এটা একদম আসল চট্টগ্রামের গল্প। চট্টগ্রামের মানুষের হাসি–কান্না, দুঃখবোধ, ভালো লাগা—সবই আছে। এই ব্যাপারগুলোই মূলত ছবিটিতে তুলে ধরা হয়েছে। মেইড ইন চিটাগং ছবির পুরো ব্যাপারটাই খুব এন্টারটেইনিং।
গানের মানুষ পার্থ বড়ুয়াকে নিয়ে চলচ্চিত্র–সংশ্লিষ্ট নানান গ্রুপে আলোচনা হচ্ছে। কেমন লাগছে?
এটা ভাগ্য আরকি। সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদ। এভাবে চলচ্চিত্রে গ্রহণ করবে, ভাবিনি। প্রতিদিন হল ভিজিটে যাচ্ছি। প্রতিদিনই অসাধারণ সব অভিজ্ঞতা নিয়ে বাসায় ফিরছি।
বিশ্বকাপ ফুটবল শুরু হয়েছে, এই সময়টায় ছবি মুক্তি দেওয়া কি সঠিক সিদ্ধান্ত?
বাস্তবতা হচ্ছে, আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের খেলা যখন চলবে তখন কেউই সিনেমা হলে যাবে না। প্রথম রাউন্ডের খেলা চলার সময়ে সিনেমা হলে দর্শকের সমস্যা হবে না। ছবির মেরিট ভালো হলে দর্শক অবশ্যই যাবে। আমাদের ছবির গল্পটা যেমন, তাতে এর বাইরে অন্য কোনো দলের খেলা প্রভাব ফেলতে পারবে না।
আপনার ব্যান্ডের সহকর্মীরা ছবিটি দেখেছেন?
একজন সিনেমা হলে গিয়ে দেখেছে। বাকিরা পোস্ট–প্রোডাকশনের সময় দেখেছিল। তারা সবাই আমাকে বেশ উৎসাহ দিচ্ছে। কেউ কেউ খুবই প্রশংসা করছে। আর কিছু কিছু সহকর্মী তো বিভিন্ন ধরনের কথাও বলছে। তারা সিনেমায় আমাকে দেখে অবাকও হচ্ছে। আসলে, আলোচনা যখন হবে, তার সঙ্গে সমালোচনাও হবে। সবকিছুই আন্তরিকভাবে গ্রহণ করছি।
ছবির গান ‘পেট ফুরেদ্দে’তে আপনার নাচ দেখে আপনার কেমন লেগেছে?
নিজেকে নাচতে দেখে নিজেই কনফিউজড ছিলাম। আমি নিজেও ভাবছিলাম, এটা করলে কী হবে। আমাকে তো আসলে এভাবে কেউ কোনো দিন স্ক্রিনে দেখেনি। তবে পুরো ব্যাপারটা বেশ উপভোগ্য ছিল। এটাও ভেবেছি, যখন সিনেমা করতেই নামছি, ঘোমটা দিয়ে লাভ কী। তা ছাড়া পেছনে ফিরে তাকানোর তো সুযোগ নেই।
আবার কি সিনেমার অভিনয়ে পাওয়া যাবে?
সিনেমা তো করবই। কথা হচ্ছে, কখন করব, তা ঠিক করিনি। আমি সিনেমা বানাবও।
সিনেমা বানানোর ইচ্ছা কবে থেকে?
এই ইচ্ছা অনেক আগে থেকে, যখন আমি থিয়েটারচর্চা করতাম। সিনেমা অনেক বড় ক্যানভাস, ওখানে কাজ করার ব্যাপারটাই আলাদা। এটা সম্পূর্ণই পেশাদার একটা জায়গা। শিল্পীর এখানে টিকে থাকা পুরোপুরি মানুষের গ্রহণযোগ্যতার ওপর নির্ভর করে। মানুষ যদি গ্রহণ না করে তিনি বা তারা ধ্বংস হয়ে যায়। এ মুহূতে এসে আমার মনে হয়েছে, একজন শিল্পীর জন্য সিনেমা হচ্ছে শিল্পের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা। এখানে মূল্যায়নটা সাংঘাতিক রকম নির্মম। ভালো হলে সবাই ভালোভাবে নেবে, খারাপ হলে খুব খারাপভাবে নেয়। এই জন্যই পৃথিবীতে সিনেমাকে সবচেয়ে বড় ইন্ডাস্ট্রি বলে, আবারও বুঝলাম।
তার মানে চলচ্চিত্রে যাঁরা অনেক বেশি জনপ্রিয়তা পান, দর্শক গ্রহণযোগ্যতা পান তাঁদের ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কী?
তাঁরা প্রতিনিয়ত কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে থাকেন। একটা মানুষ সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমাকে ভালো বলবে, অভিনয়শিল্পীর প্রেমে পড়বে—এটা কিন্তু সহজ ব্যাপার নয়। বাসা থেকে বের হয়ে, দুই–আড়াই ঘণ্টা একটা অন্ধকার রুমে একজন শিল্পীকে টাকা খরচ করে দেখব, এটা কিন্তু অনেক বড় ব্যাপার। এটা টেলিভিশন না যে ফ্রি ফ্রি দেখছে। যাঁরা চলচ্চিত্রে অনেক বেশি জনপ্রিয়, গ্রহণযোগ্য, ভালো অভিনয় করেন, তাঁরা প্রতিনিয়ত পরীক্ষার মধ্যে থাকেন এবং অনেক ভাগ্যবান। সৃষ্টিকর্তার তাঁদের প্রতি আশীর্বাদ থাকে, থাকে বিশেষ মায়া।
আপনি তো এখন চলচ্চিত্রের মানুষ। নায়কদের মধ্যে কাদের ভালো লাগে।
আমার চোখে একটা সময় রিয়াজ আর ফেরদৌস খুবই চমৎকার ছিল। আমি রীতিমতো তাঁদের ভক্ত ছিলাম। ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ দেখে তো আমার এমন মনে হয়েছিল, দীর্ঘদিন পর একজন ফ্যান্টাস্টিক অভিনয়শিল্পীকে পেয়েছি। দারুণ ছবি, বিউটিফুল অভিনয়। ইদানীং ‘দামাল’ ছবিতে শরীফুল রাজকে অসাধারণ লেগেছে। ওকে নিয়ে আমি অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি। রাজকে লম্বা রেসের ঘোড়া মনে হয়েছে, যদি ঠিকঠাকমতো কাজ করতে পারে। সিয়ামের কাজও দেখলাম। চঞ্চল চৌধুরী তো দুর্ধর্ষ অভিনেতা, বরাবরই নিজের জাত চিনিয়েছে। আর শাকিব খান কমপ্লিট প্যাকেজ। চলচ্চিত্রের সফল একজন মানুষ। খুবই সুদর্শন, অসাধারণ অভিনেতাও। আমার মনে হয়, দেশে ভালো গল্প খুব একটা পায়নি। দেশের বাইরের ছবিগুলোতে রীতিমতো ফাটিয়ে দিয়েছে। সারা দেশে রয়েছে তার বিশাল ফ্যানবেজ। দেশের পরিচালকদের তাকে নিয়ে ভিন্ন ধরনের গল্পেও ভাবা উচিত।
দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্রগুলো দেখা হয় কি?
সময় পেলেই আমি সিনেমা দেখি। হোক তা দেশে কিংবা দেশের বাইরে। সর্বশেষ সিনেমা হলে দেখেছি ‘দামাল’। আমার কাছে কিন্তু পুরো ছবিটি বেশ ভালোই লেগেছে।
এবার গানের প্রসঙ্গ।
২৪ ও ২৫ নভেম্বর আমাদের ব্যান্ডের দুটি শো ছিল। জানুয়ারিতে নতুন গান ছাড়ব, সেটার পরিকল্পনা চূড়ান্ত। এরপর থেকে প্রতি মাসে একটি করে ব্যান্ডের গান ছাড়ব।