মঞ্চ, টিভি ও চলচ্চিত্র অভিনেতা জাহিদ হাসানের জন্মদিন ছিল গতকাল বুধবার। জন্মদিন সূত্রে তাঁর সঙ্গে কথা বলল বিনোদন।
শুভ জন্মদিন।
ধন্যবাদ।
কেমন কাটছে দিনটা?
সাধারণত অন্য সময় পরিবারকে খুব একটা সময় দেওয়া হয় না। এই দিনে কোনো শুটিং রাখিনি। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটিয়েছি। সবাইকে নিয়ে বাইরে দুপুরের খাবার খেয়েছি। সুন্দর সময় কেটেছে।
জন্মদিন নিয়ে উৎসাহ কি ছোটবেলা থেকেই ছিল?
আমি পরিবারের ছোট ছেলে। তাই আলাদা একটা নজর সবারই ছিল। ছোটবেলায় এই দিনে মা পায়েসসহ সুন্দর সুন্দর সব খাবার রান্না করতেন। কেক আনা হতো, চানাচুর, কলা আরও কত কী! আশির দশকের শেষ দিকে ঢাকা শহরে এলাম। শুরু হয় মেস ও হলজীবন। ৮৯ সালে তেমনই একদিন মেসের ঘর ঝাড়ু দিচ্ছিলাম। তখন আমার মেসের এক সঙ্গীর বাবা আসেন। তিনি আইনজীবী। আমার জন্মদিন শুনে বলেছিলেন, ‘মন খারাপ কোরো না পুলক, (জাহিদ হাসানের ডাকনাম) এমন একটা দিন আসবে, যেদিন সারা দেশের মানুষ তোমার জন্মদিন পালন করবে।’ এখন যখন জন্মদিনে রেডিও, টেলিভিশন, পত্রিকায় আমাকে নিয়ে আলোচনা হয়, তখনই ওই আঙ্কেলের কথা খুব মনে পড়ে।
আপনার সেই মেস কোথায় ছিল?
ধানমন্ডি ১৫ নম্বরের দিকে। আমরা একটা ঘরে চার–পাঁচজন থাকতাম। বুয়া রান্না করতেন। প্রায়সময়ই খাবার মুখে তোলা যেত না। পরে নিজেরা ভাজিটাজি রান্না করে খেয়ে নিতাম।
মা–বাবার ছোট ছেলে হিসেবে আদরেই তো ছিলেন। ঢাকায় এসে এভাবে থাকার কারণ কী?
কষ্টের মধ্যেও একধরনের শান্তি আছে, আবার কষ্টের মধ্যে অশান্তিও আছে। জীবনে কোনো কিছুই সহজে পাওয়া যায় না। তাই কষ্টের পরের সুখটা আসলে অন্য রকম। অভিনয়ের স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় এসেছিলাম। সিরাজগঞ্জেও থিয়েটার করতাম। ঢাকায় তো থিয়েটারে এসে শুরুতে ঘরটর মোছার কাজ করতাম। এ রকম করতে করতে একটা সময় আমাদের দল নাট্যকেন্দ্র গঠিত হলো।
তাহলে এই জীবনে কষ্টের সেই জীবন কী শিখিয়েছে?
অনেক কিছুই শিখিয়েছে। অনেক সময় ছাড় দিতে শিখিয়েছে। শেয়ারিং শিখিয়েছে। মেসজীবনের শুরুতে এমনও দেখেছি যে বাথরুমে সাবান, শ্যাম্পু রেখে আসতাম, পরে আরেকজন এসে বলত, ‘বাথরুমে রেখে এসেছ কেন? আরেকজন তো ব্যবহার করবে।’ আমি বলতাম, করুক। সমস্যা কী? অথচ সাবান পাতলা কাগজের মতো হয়ে যেত। শ্যাম্পুর বোতল থাকত না।
অনেক চড়াই–উতরাইয়ের জীবন। এখন আপনি যে অবস্থানে আছেন, তারপরও জীবনটাকে কীভাবে দেখেন?
জীবনটা আসলে আয়নার মতো। আয়নায় আমি ভেঙচি কাটলে আয়নাও ভেঙচি কাটবে। হাসলে আয়নাও হাসবে। আবার অনেক সময়, আসলে জীবনটা কাঁঠালের মতো, কোনো কিছুই ফেলনা নয়। এই জীবনে দুঃখ, কষ্ট, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, অবহেলা, তাচ্ছিল্য সবই পেয়েছি। সবাই পায়, কমবেশি। সঠিকভাবে সামলে নিতে পারলেই হয়। কম্প্রোমাইজ করা, শেয়ার করা, ক্ষমা করে দেওয়া, মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা—এসবই শিখেছি। এটাই করে যাওয়ার চেষ্টা করছি। ভালোবাসার কারণে আবার অনেকের প্রতি অভিমান বেশি হয়েছে। আমি যেহেতু জন্মগতভাবে সবার ছোট ছিলাম, তাই অভিমানটা বেশি ছিল। বলা যায়, আমার একদম পেটভরা অভিমান। তারপরও আমি মনে করি, জীবন সুন্দর।
তাচ্ছিল্য আর অবহেলায় অনেকেই হতাশা হয়ে পড়েন!
আমিও হয়েছি। আবার কাটিয়ে উঠেছি। তাচ্ছিল্য যেমন অনেক পেয়েছি, লড়াইও করেছি। এই তাচ্ছিল্য বা অবহেলার সময় কেউ না কেউ সঙ্গী হয়ে আসে। হয় মানুষ, নাহয় বই কিংবা একটা গান। ৮৮ সালের বন্যার সময় টিএসসি থেকে হেঁটে হেঁটে রামপুরায় যাই। কারণ, পকেটে টাকাপয়সা নেই। পানি মাড়িয়ে ওখানে যাই। বলা যায়, আমার দীনহীন অবস্থা। ৯০–৯১ সালে মানসিকভাবেও জর্জরিত অবস্থা। এরপর কোথায় যেন কী পড়লাম, তারপর আর হতাশ হইনি। সত্যি কথা বলতে, যদি জীবনে সৎ থাকা যায়, নিজের মধ্যে কোনো না কোনো একটা শক্তি থাকেই, যা সেই মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
আপনার জীবনের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণাদায়ী কে?
জীবন চলার পথে একেক সময় একেকজন অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। কখনো বড় ভাই, কখনো মা, কখনো বন্ধুবান্ধব, কখনো একটা গান, কখনো মৌ।