‘আমাকে দ্বারে দ্বারে গিয়ে কারও কাছে কাজ চাইতে হয়নি’

সম্প্রতি দীপ্ত প্লেতে মুক্তি পেয়েছে ওয়েব ফিল্ম ‘ক্রিমিনালস’। ফরহাদ আহমেদ পরিচালিত ছবিটির অন্যতম কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন তানজিকা আমিন। ছবিটিসহ নানা প্রসঙ্গে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছে ‘বিনোদন’
তানজিকা আমিন
ছবি: প্রথম আলো
প্রশ্ন

আপনাদের ওয়েব ফিল্মটি আন্তর্জাতিক নারী দিবসে মুক্তি পেয়েছে। ঠিক এই দিনে মুক্তির আলাদা প্রাসঙ্গিকতা ছিল?

এটা তিন নারীর গল্প। বাঁধভাঙা তিন নারীর ফাঁদভাঙার গল্প। সাধারণ পরিবারের খুবই সাধারণ তিনটা মেয়ে কীভাবে ক্রিমিনাল হয়ে ওঠে, সেই গল্প এখানে তুলে ধরা হয়েছে। এখন তো পুরুষপ্রধান গল্পের পাশাপাশি নারীপ্রধান গল্পও প্রাধান্য পাচ্ছে। সেই হিসেবে দীপ্ত প্লে এমন একটা উদ্যেগ নিয়েছে। কাজটার অংশ হতে পেরে আমারও ভালো লেগেছে। একজন নারী হিসেবে নারী দিবসে এমন একটি গল্প সবার সামনে আসতে পারাটাও ভীষণ ভালো লাগার।

প্রশ্ন

আপনার জীবনে কি এমন বাঁধভাঙার কোনো গল্প আছে?

আমার জীবনে বাঁধভাঙার গল্পটা একটু অন্য রকম। ২০০৪ সালে রাজশাহীর একটা মেয়ে, যার পরিবারের সবাই রক্ষণশীল। আত্মীয়স্বজনেরাও তেমন। তেমনই একটা পরিবার থেকে বেরিয়ে এসে একটা মেয়ে বিনোদন অঙ্গনে কাজ করতে এসেছি, এটাই তো অনেক বিশাল বাঁধভাঙার ব্যাপার। বিষয়টা খুব একটা সহজ ও স্বাভাবিক ছিল না।

তানজিকা আমিন
প্রশ্ন

সবচেয়ে বড় বাধার সম্মুখীন কোথা থেকে এসেছিল?

পরিবার ও আত্মীয়স্বজন নয়, আমার পথচলায় সমাজ সবচেয়ে বড় বাধা ছিল। এখন তো আমরা সমাজের বিপরীতে গিয়ে অনেক কথা বলতে পারি। প্রতিবাদ করি। অনেকভাবে অনেক কিছু তুলে ধরার সুযোগও আছে। ২০ বছর আগে তো এভাবে কথা বলতে পারতাম না। ভাবাও যেত না। মফস্‌সল শহরে ব্যাপারগুলো আরও অনেক কঠিন ছিল।

প্রশ্ন

লোকজন কীভাবে কথা শোনাত? কোন ধরনের কথা বেশি শুনতে হতো?

আমাদের পরিবারটা যেহেতু একটু সম্ভ্রান্ত, তাই শ্রদ্ধা করত সবাই। হয়তো এ কারণে সেভাবে সামনাসামনি এসে কেউ কিছু বলত না। তবে পেছনে–পেছনে যে কথা বলত, এসব টের পেতাম। তাদের একটা কমন কথা ছিল, এ রকম পরিবারের একটা মেয়ে, মিডিয়াতে কাজ করছে! নায়কদের সঙ্গে কাজ করছে। নায়কদের হাত ধরছে। এমন কথা শুনতে হতো।

তানজিকা আমিন
প্রশ্ন

মন খারাপ হতো না?

নাহ্‌। কোনো দিন আমাকে এসব মোটেও ভাবাত না। কষ্টও পেতাম না। যেহেতু মা–বাবা ও পরিবারের সবাই আমাকে সমর্থন করত, একটা মেয়ের জন্য এর চেয়ে বড় ব্যাপার আর কীই–বা হতে পারে। আমি তো সেই বাঁধভাঙা নারী। তাই তো আমি আমার আত্মবিশ্বাস ও সাহস নিয়েই এগিয়ে গেছি। সম্মানের সঙ্গে এখনো কাজ করে যাচ্ছি।

প্রশ্ন

বিনোদন অঙ্গনে কাজ করতে গিয়ে কোনো বাধা ডিঙাতে হয়েছিল?

আমাকে কোনো বাধা ডিঙাতে হয়নি। আমি কাজ করাটা বাধা হিসেবেও দেখিনি। অনেককে অনেক স্ট্রাগল করে যেমন একটা জায়গায় আসতে হয়, আমার তেমনটা ছিল না। আমার জন্য সুবিধা ছিল, একটা স্ট্রং প্ল্যাটফর্ম পেয়েছিলাম। প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়ে এসেছিলাম। এ কারণে সুবিধা ছিল বেশি। আমাকে দ্বারে দ্বারে গিয়ে কারও কাছে কাজ চাইতে হয়নি। তবে কিছু স্ট্রাগল কমবেশি সবার থাকবে। আমারও ছিল। এটা থাকবেই।

প্রশ্ন

দীর্ঘদিন ধরে বিনোদন অঙ্গনে কাজ করছেন। গত কয়েক বছর ধরে কি আপনি অনিয়মিত?

আমার জার্নি ২০ বছরের। আরও ১০ বছর আগে যদি এভাবে পরিচালকেরা আমাকে নিয়ে ভাবতেন, তাহলে হয়তো বাংলাদেশের দর্শকেরা এ রকম আরও ভালো কাজ পেত। আমি শুধু আমার কথা বলছি না, আমার মতো আরও অনেকে আছে, যারা সত্যিকার অর্থে ভালো অভিনয় করে, তাদের বেশি বেশি সুযোগ করে দেওয়া উচিত। তাদের নিয়ে ভাবলেই চিত্রটা পাল্টে যেত।

প্রশ্ন

শিল্পীদের নিয়ে পরিচালকদের ভাবনা কতটা জরুরি?

অনেক বেশি জরুরি। শিল্পী তো কারও কাছে গিয়ে কাজ চাইবে না। চাইলেও কি দেবে? এখনকার অনেকের মাথায় তো একটা প্রি–কনসেপ্ট থাকে। শিল্পীর মিনিমাম আত্মমর্যাদা আছে, তিনি তো কারও কাছে যেচে কাজ চাইবেন না। আমরা যারা এত বছর ধরে কাজ করছি, তাদের আত্মমর্যাদা একটু বেশি। আর ওটাই আমাদের একমাত্র সম্বল।