নতুন একটি চলচ্চিত্রের কাজ শেষ করেছেন চিত্রনায়িকা তমা মির্জা। শেষ করেছেন একটি ওয়েব ফিল্মও। সম্প্রতি ‘ব্লেন্ডারস চয়েস-দ্য ডেইলি স্টার ওটিটি অ্যান্ড ডিজিটাল কনটেন্ট অ্যাওয়ার্ড ২০২১’–এ সমালোচক বিভাগে ‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনয়শিল্পীর পুরস্কার জিতেছেন। পুরস্কারপ্রাপ্তি, নতুন কাজ ও ভবিষ্যতের পরিকল্পনা নিয়ে কথা হলো তাঁর সঙ্গে।
সেরা অভিনয়শিল্পী নির্বাচিত হয়েছেন, অভিনন্দন।
ধন্যবাদ। চরকি প্রযোজিত এ কাজের জন্য শুরু থেকেই সবার কাছ থেকে প্রশংসা পাচ্ছিলাম। এটি আমার ভীষণ ভালোবাসার একটি কাজ। যাঁরাই দেখেছেন, অভিনয় থেকে শুরু করে নির্মাণ—সবকিছুর প্রশংসা করেছেন। আমরা সবাই খুব পরিশ্রমও করেছি। এবার যখন পুরস্কার পেলাম, তা–ও আবার সমালোচক বিভাগে, মনে হয়েছে পরিশ্রম সার্থক। এমন পুরস্কার ভবিষ্যতে ভালো কাজের জন্য খুবই অনুপ্রেরণার।
নতুন কাজের কী অবস্থা?
আমার একটু দেশের বাইরে যাওয়ার কথা রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে। ২০ থেকে ২৫ দিনের জন্য।
ঘুরতে?
অনেকটা সে রকম।
শুনলাম, নতুন একটি ছবির কাজ শেষ করেছেন...
শাহনেওয়াজ কাকলীর সঙ্গে আমার দ্বিতীয় ছবি ফ্রম বাংলাদেশ-এর শুটিংয়ের পর ডাবিংও শেষ হয়েছে। এখন হয়তো মুক্তি পেতে পারে। এদিকে রবিউল আলম রবি ভাইয়ের একটি ওয়েব ফিল্মের কাজ করেছি। গত জুন মাসে শুটিং করেছি।
‘ফ্রম বাংলাদেশ’ ছবিটি সম্পর্কে আগাম ধারণা দেওয়া যায় কি?
এই পরিচালকের সঙ্গে প্রথম করেছিলাম নদীজন চলচ্চিত্রের কাজ, জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছিলাম। এবারের ছবিটিতে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার দুটি পরিবারের গল্প—একটি মুসলমান ও আরেকটি হিন্দু পরিবার। নদীজন-এ অনেক দিন শুটিং করলেও এবারের ছবিটিতে অতটা সময় দিতে হয়নি। তবে চরিত্রটি আমার কাছে চ্যালেঞ্জিং লেগেছে। কারণ, আশীষ খন্দকারের মতো একজন শিল্পীর সঙ্গে কাজ করেছি। ছবিতে তিনি আমার স্বামীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এ ছাড়া আগে কোনো দিন অন্তঃসত্ত্বা নারীর চরিত্রে অভিনয় করিনি, এটাতে করেছি। চরিত্রটি বড় না হলেও ছবির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। সে জায়গা থেকে সবকিছু মিলে ভিন্ন রকম একটি চরিত্র মনে হয়েছে।
‘ফ্রম বাংলাদেশ’–এ আপনার চরিত্রটি হয়ে উঠতে পরিচালক ছাড়াও অন্য কারও সহযোগিতা নিতে হয়েছে?
না না, পরিচালক শাহনেওয়াজ কাকলী একাই এক শ। কীভাবে কী হবে, তিনি সবই জানেন। তাই তাঁর সঙ্গে কাজ করার মজাই আলাদা। কোনো টেনশন করতে হয় না। লুক থেকে শুরু কীভাবে হাঁটব, কথা বলব—সবই তিনি ঠিক করে দেন। তিনি যেহেতু চারুকলায় পড়েছেন, সেটারও একটা ছাপ তাঁর কাজে পাওয়া যায়। আমার পরিচালক ক্যামেরাও দারুণ অপারেট করেন। স্ক্রিপ্ট খুব ভালো করেন। তাৎক্ষণিক সংলাপেও তাঁর জুড়ি নেই। মনে হয়, তাঁর অনেক বেশি ফিল্মের প্রতি ভালোবাসা যেমন আছে, তেমনি স্টাডিও আছে । তাই তো আমার চোখে তিনি একজন গুণী নির্মাতা। এখন যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের চেয়ে কোনো অংশে কম নন। আমার তো এ–ও মনে হয়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে তিনি অন্যদের চেয়ে এগিয়েও আছেন। একজন গুণী নির্মাতা হয়ে তিনি কেন কাজ কম করেন, সেটা বুঝি না। কাকলী আপাদের মতো যাঁরা গুণী, তাঁদের আরও বেশি কাজ করা উচিত। ২০১৫ সালেও আমি মূলধারার বাণিজ্যিক সিনেমায় কাজ করেছি। ওই সময়ই আমাকে দিয়ে নদীজন-এ তিনি নন–গ্ল্যামারাস কাজ করিয়ে নিয়েছেন। একটা কাজই তাঁর সঙ্গে করলাম, সেটাতেই জাতীয় পুরস্কার পেলাম। আমার মনে হয়, এই পরিচালকের হাতে ম্যাজিক আছে। যাঁরাই তাঁর সঙ্গে কাজ করেছেন, সবাই একমত।
পরিচালক রায়হান রাফিও আপনাকে নতুনভাবে উপস্থাপন করেছেন বলে অনেকে মনে করেন...
তা তো অবশ্যই। রাফির সঙ্গে যারাই কাজ করেছে, প্রত্যেক শিল্পীকে আমরা ভিন্নভাবে দেখেছি। পূজা, মাহি, নাজিফা তুষি ও সর্বশেষ বুবলীকেও দেখেছি ভিন্নভাবে উপস্থাপন করতে। আমি তো আছিই। তাসনিয়া ফারিণের ক্ষেত্রেও তেমন দেখলাম। এটাই একজন পরিচালকের মুনশিয়ানা, যখনই যাকে নিয়ে কাজ করেন, সেই শিল্পী বা কাজটা আলোচিত হয়।
ভিন্নভাবে উপস্থাপনের কারণে নাকি রায়হান রাফির সঙ্গে আপনার আলাদা একটা বন্ধুত্ব তৈরি হয়েছে?
শাহনেওয়াজ কাকলী আপা, সাদাত হোসাইনের সঙ্গেও যখন কাজ করেছি, তাঁদের সঙ্গেও বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। আমি মনে করি, যেকোনো ক্রিয়েটিভ মানুষের কাছ থেকে আমার অনেক কিছু শেখার আছে। আমি নিজে থেকে চাই যে এই মানুষগুলোর সঙ্গে একটা ভালো সম্পর্ক থাকুক, তাহলে কিছু শিখতে পারব। সেটা বন্ধুত্বের হোক, ভাই–বোনের হোক কিংবা অভিভাবকের। রাফি ও আমার বয়স কাছাকাছি হওয়ায় আমাদের বন্ধুত্বটা হয়তো ভালো।
কেউ কেউ তো বলছিলেন আপনারা প্রেমিক–প্রেমিকা?
আমি যাদের সঙ্গে কাজ করেছি, কমবেশি সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক। প্রেমিক তো হওয়ার প্রশ্নই আসে না। ভালোবাসার মানুষ হয়তো। প্রেমিক হিসেবে ভাবিনি, তাই প্রেমিক নয়।
নাকি আপনার প্রেমে কেউ ভাগ বসিয়েছে?
রাফি একা মানুষ। কাঙ্ক্ষিত ব্যাচেলর। হিরোইনরা যেমন তার সঙ্গে সঙ্গে সম্পর্ক করতে চায়, মিডিয়ার বাইরের অনেকেও চায়।
কদিন ধরে শোনা যাচ্ছে, চিত্রনায়িকা বুবলীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের কারণে আপনার সঙ্গে সম্পর্কটা ভালো যাচ্ছে না।
প্রথমত, এ রকম কথা আমিও শুনেছি। প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে রাফি ও বুবলীর সঙ্গে কথা বললেই ভালো। এ বিষয়ে আমার কথা বলাটা মোটেও ঠিক হবে না। এটা একান্তই তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। এই কারণে সম্পর্ক থেকে সরে আসছি কি না, এটাও আমার একদম ব্যক্তিগত বিষয়। তবে এটাও বলতে চাই, আমাদের বন্ধুত্ব কিন্তু নষ্ট হয়নি।
নতুন করে সংসার নিয়ে কোনো ভাবনাচিন্তা আছে?
আগামী পাঁচ বছর কাজ নিয়ে থাকতে চাই। এরপর হয়তো বিয়ের কথা ভাবব। আপাতত এসব নিয়ে কিছুই ভাবতে চাই না, শুধু কাজ করতে চাই।
কাজ শুরু করবেন কবে?
অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে আমার শিডিউল নেই। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরেই কাজে ডুব দেব। এই তিন মাসে সব ওটিটির কাজ। নেক্সট ইয়ারে বড় পর্দায় ফিরব। বড় করে ঘোষণা দেব। আপাতত বলা বারণ, তাই বলতে পারছি না। তবে সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে।