শুরুটা গান দিয়ে। নিজেও চাইতেন নিয়মিত গান করবেন। কিন্তু সেই জান্নাতুল হিমি এখন ছোট পর্দার অভিনেত্রী। কচ্ছপগতিতে অভিনয় নিয়েই এগিয়ে যেতে চান। নাটক, ক্যারিয়ার ও ব্যক্তিগত বিষয়ে কথা বললেন তিনি।
ঈদে আপনার অভিনীত কয়টি নাটক প্রচারিত হয়েছে, কাজগুলো থেকে দর্শকদের রেসপন্স কেমন?
এবার ঈদে ১৬টির মতো নাটক প্রচারিত হয়েছে। বেশির ভাগই বিনোদনের জন্য। কারণ, ঈদের সময়ে দর্শক এই কাজগুলোই পছন্দ করেন। নাটকগুলো থেকে দর্শকদের কাছ থেকে শুনতে হচ্ছে, প্রায় সব নাটকে আমি কেন ঝগড়া করছি। আসলে এবার ‘নানা বাড়ি বরিশাল’, ‘অস্থির দম্পত্তি’, ‘গ্যাংস্টারের বিয়ে’সহ ঈদে সাত থেকে আটটি নাটকেই আমাকে ঝগড়া করতে হয়েছে। নাটকগুলো দেখে আম্মু বলেন, নাটক থেকে আমি ঝগড়া শিখছি। পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে আমি কখনোই ঝগড়া করিনি।
আপনার অভিনীত নাটকের সবচেয়ে বড় সমালোচক কে?
২০১৪ সাল থেকে টেলিভিশনে প্রধান চরিত্রে অভিনয় শুরু করি। তখন থেকেই আব্বু আমার ‘মোহর আলী’ থেকে শুরু করে এখনো নিয়মিত নাটক দেখেন। বাবা আমার অভিনয়ের প্রশংসা কম করেন, শুধু ভুল ধরেন। আমি সেগুলো সংশোধন করার চেষ্টা করি।
অভিনয়ে শুরুটা কীভাবে?
কচিকাঁচা ও ছায়ানটে মেলায় গান, নাচ, আবৃত্তি শিখতাম, নাটিকায় অভিনয় করতাম। আমার ঝোঁক ছিল গানে। প্রথম দিকে সাধনা মিত্র ম্যাডামের কাছে গান শিখেছি। বিটিভিতে গানের অনেক প্রোগ্রাম করেছি। কিন্তু ২০১৪ সালে ‘রঙ আরটিভি ২০–২০ কালার মডেল’ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে অভিনয় শুরু করি। এর আগে অভিনয় করব ভাবিনি, বুঝিনি। বলা যায়, গায়িকা হতে এসেই অভিনেত্রী হয়ে গেলাম। এ জন্য আমি ফেরদৌস আরা ম্যাডামের কাছে বকাও খেয়েছি। ম্যাডামের কাছে নজরুল সংগীত শিখতাম। একদিন বললাম, অভিনয়ে ব্যস্ততার কারণে গান শেখায় সেভাবে আর সময় দিতে পারছি না। তিনি মন খারাপ করেছিলেন, বকাও দিয়েছিলেন। পরে আমার কণ্ঠের প্রশংসা করে পরামর্শ দিয়েছিলেন, ‘গান ছেড়ো না। অনেক বয়স হলেও এটা চালিয়ে যেতে পারতে, অভিনয়টা তো কিছুটা সময়ের ব্যাপার।’ সময় পেলে এখনো গান গাই।
অভিনয়ের এই জায়গা কতটা প্রতিযোগিতাপূর্ণ মনে হয়?
বিনোদন জগতে আমার পরিচিত কেউ ছিল না। আমাকে একটু একটু করে এগিয়ে যেতে হয়েছে। আমার পরে এসে অনেকেই ভালো কাজ পেয়েছে, ভালো নির্মাতা নাটকে নিয়মিত অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছে, কিন্তু আমি কারও কাছ থেকে সাপোর্ট পাইনি। আমি কি অভিনয় পারি না, এসব ভেবে মানসিকভাবেই অনেক সময় কষ্ট পেয়েছি। কাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে জানতাম না। পরিবার আমাকে পেশাগত জায়গায় স্বাধীনতা দিয়েছিল। মন খারাপ হলেও আমি অভিনয় ছেড়ে দিতে চাইনি, কচ্ছপগতিতেই কাজ করে যেতে চাই। আমি এখনো নিজেই বিভিন্ন সাইট ও সিনিয়রদের কাছ থেকে অভিনয় শেখার চেষ্টা করি।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
ঈদের পর আবার শুটিং শুরু করেছি। এখন নিয়মিত অভিনয়ের সুযোগ পাই, এখানেই আমার সেরাটা দিয়ে অভিনয়ে এগিয়ে যেতে চাই। অভিনয় ছাড়া অন্য কিছু ভাবছি না। শিখে আরও ভালো কাজ করতে চাই। এ জন্য আমি শুটিংয়ে সব সময় শেখার দিকে মনোযোগ দিই। সহকর্মীদের সবার কাছ থেকেই কিছু না কিছু শেখার আছে।
আপনার প্রায় ৭০ ভাগ নাটকের সহশিল্পী নিলয় আলমগীর, অন্যদের সঙ্গে অভিনয় কম হওয়ার কারণ কী?
কার সঙ্গে অভিনয় করব, এটা তো আমার হাতে থাকে না। আমার তো মোশাররফ ভাই, আফরান নিশো ভাইসহ সবার সঙ্গে পর্দা ভাগাভাগি করতে ইচ্ছে করে। দর্শকেরাও বলেন, একটা আর্টিস্টের সঙ্গে কেন এত কাজ করেন। এটা ডিরেক্টর, প্রযোজককে চাইতে হবে। আমার ও নিলয় ভাইয়ের জুটি দর্শক পছন্দ করেন। ভিউও হয়। আমারও ভাইয়ের সঙ্গে অভিনয় করে ভালো লাগে। আমাদের বোঝাপরাটা ভালো। দর্শক যত দিন চাইবে, কাজ করে যাব।
অভিনয়শিল্পীরা গোপনে প্রেম করেন, আপনি...
দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমি এখনো প্রেম করিনি। প্রেম ভালো একটা বিষয়। কিন্তু আমার নেই। অনেকেই ভাবে আমাদের এত বেশি ফ্যান–ফলোয়ার, আমাদের অনেক প্রপোজাল আসতেই থাকে। মনে হয় একটা লাইন ধরে গেছে। আসলে তেমন কিছু না। দেখা যায়, বাস্তব জীবনে অভিনয়শিল্পীরা অনেকেই একা, ফ্রেন্ডস সার্কেলও কম—আমার যতটা মনে হয়।
সামনাসামনি কখনো কেউ প্রস্তাব করেছে?
আমাকে কখনো কেউ সামনাসামনি প্রেমের প্রস্তাব দেয়নি। পছন্দ করেন, এটা অনেক সময় বুঝেছি। কিন্তু ফুল নিয়ে হাঁটুগেড়ে বসে সিনেমার মতো কেউ প্রেমের প্রস্তাব দেয়নি।