>ট্রেলার এসেছে চিত্রনায়ক ও প্রযোজক অনন্ত জলিলের নতুন সিনেমার। ‘দিন: দ্য ডে’ নামের এই ছবি ইরানের সঙ্গে যৌথভাবে তৈরি করেছে অনন্ত জলিলের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। ছবির ২ মিনিট ১১ সেকেন্ডের ট্রেলারটি দুর্দান্ত অ্যাকশনে ভরপুর। ছবিটি নিয়ে গত সোমবার সন্ধ্যায় অনন্ত জলিল ব্যাংকক থেকে কথা বলেন প্রথম আলোর সঙ্গে।
করোনাভাইরাস আতঙ্কে সবাই বিদেশ সফর বাতিল করছে, সেখানে আপনি ব্যাংককে কেন?
ব্যবসায়িক কাজে এসেছি। আমার সঙ্গে নায়িকা বর্ষাও এসেছে। করোনার কারণে আমাদের বায়ার আসতে পারেননি, তাই ব্যাংককে মিটিংয়ের কাজটি সেরে নিতে হয়েছে।
শুধুই ব্যবসায়িক কাজ?
এই মুহূর্তে বাংলাদেশ থেকে কেউ খুব একটা বাইরে যাচ্ছে না, দুটি জরুরি কাজ বলেই আমাকে আসতে হয়েছে। অন্য কাজটি হচ্ছে, আমাদের পরের ছবিটি হবে মরক্কোর সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায়। সেই ছবির কাজ নিয়েও মিটিং করেছি। শিগগির সংবাদ সম্মেলন করে খবরটি জানাব।
পরের ছবির শুটিং কি তাহলে এই ছবি মুক্তির পরই শুরু করবেন?
‘দিন: দ্য ডে’ ছবিটি কোরবানির ঈদে মুক্তি পাবে। মরক্কোর সঙ্গে যৌথ প্রযোজনার ছবিটির শুটিং এই ছবি মুক্তির আগেই শুরু করব। খেয়াল করলে দেখবেন, একটা ছবি মুক্তির আগ মুহূর্তে আমি আরেকটা ছবির ঘোষণা দিই, শুটিংও শুরু করি। এটাও তেমনই।
‘দিন: দ্য ডে’ ছবির ট্রেলারের প্রতিক্রিয়া কেমন?
আমি ট্রেলারের নিচে মন্তব্যগুলো মন দিয়ে পড়েছি। বুঝেছি দর্শকেরা সন্তুষ্ট। এটা হলিউড মানের মুভি। এই মানের ছবি আমার পক্ষে যেমন বানানো সম্ভব নয়, তেমনি আমাদের দেশেও সম্ভব নয়। পুরো ছবি বানিয়েছে ইরানের লোকজন।
এটা না যৌথ প্রযোজনার ছবি?
যৌথ প্রযোজনার নিয়ম অনুযায়ী আমাদের কলাকুশলী ছিল। তাদের সঙ্গে কাজ করেছে, কাজ শিখেছে। তবে পুরো ছবি আসলে বানিয়েছে ইরানের লোকজন। আমি জোর দিয়ে বলব, এই মানের ছবি আমার দ্বারা বানানো কোনো দিন সম্ভব হতো না।
আপনি তাহলে বলতে চান আমরা টেকনিক্যালি অনেক পিছিয়ে আছি?
সেই অর্থে আমরা পিছিয়ে নেই। আমাদের জন্ম যেখানে যে পরিবেশে, আমরা সেভাবেই বেড়ে উঠেছি। যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া লোকজন সেখানকার পরিবেশে বড় হয়েছে। ইরানে যাঁরা জন্মেছেন, তাঁরা তাঁদের মতো। তাঁদের পড়া ও জানাশোনা সে রকম। আমরা আমাদের মতো করে জেনেছি, শিখেছি। এই ছবির সঙ্গে জড়িতদের শুটিং শেষে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ছবির বাজেট কত? আমাকে বলেছিল, ১০০ কোটি টাকার ওপরে।
তার মানে আপনিও ৫০ কোটির ওপরে বিনিয়োগ করেছেন?
একদমই না। আমি শুধু বাংলাদেশ অংশের শুটিংয়ের ব্যয় বহন করেছি। আমি ইরানকে বলেছি, আমাদের বাজার ছোট। বাংলাদেশে ছবিটির শুটিং হয়েছে মাত্র ১৪ দিন। এ কয় দিনের শুটিংয়ে যা খরচ হয়েছে, সেটা আমি দিয়েছি। সেটাও অবশ্য কোটি টাকার কাছাকাছি।
ইরানের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
এককথায় অসাধারণ! তিন লটে শুটিং করেছি। আন্তর্জাতিক মানের ছবি বানাতে কত কষ্ট করতে হয়, সেটা টের পেয়েছি। টানা তিন-চার মাস ক্যামেরা ওপেন ছিল। একই সঙ্গে ফিগার, লুক মেনটেন করতে হয়। ইরানে খুব সকালে শুটিং শুরু হয়ে চলে বেলা ১১টা পর্যন্ত। এরপর আবার শুরু হয় বিকেল ৪টার পর। একটু এদিকে-সেদিন হলে শুটিং বন্ধ করে দেয়। এই ছবির শুটিং শুরুর আগে ইরান সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কয়েক দফা মিটিং করেছি। অনেক যাচাই-বাছাই করেছেন তাঁরা। আমার ব্যাকগ্রাউন্ড, ব্যবসায়িক সুনাম, শিক্ষাগত যোগ্যতা—এসবও বিবেচনায় নিয়েছেন তাঁরা।
তার মানে এই ছবি করার জন্য আপনাকে পরীক্ষা দিতে হয়েছে?
একদমই তাই। পরীক্ষা মানে, ইরান দূতাবাস থেকে ১৩ পাতার একটা প্রতিবেদন গেছে। আমি মনে করি, এই ছবির মধ্য দিয়ে ইরানে বাংলাদেশের একটা বাজার খুলেছে। এখন বাকিরা তাঁদের চেষ্টায় এগিয়ে যেতে পারলেই হয়। ছবির ব্যবসায় কলকাতা কিন্তু বাংলাদেশকে দুই পয়সাও দেবে না, নেওয়া ছাড়া। ছবি চালাতে হলে তুরস্ক, মরক্কো, মিসর, দুবাই—এই দেশগুলোর কথা ভাবতে হবে।
বিদেশে ছবি চালাতে মানের ব্যাপারটিও তো খেয়াল রাখতে হবে...
তা তো হবেই। আমাদের দেশে যে ধরনের ছবি তৈরি হয়, হাফপ্যান্ট পরে নাচতেছে, এমন ছবি ওই দিকে চলবে না। ছবিতে দর্শক শিল্পীর অভিনয় ও নির্মাণের শিল্পমান দেখবে, মেয়েদের ফিগার দেখবে না। আমার ছবির টিজারে বর্ষা পুরো হিজাব পরা। অথচ দর্শক প্রশংসা করে ভরিয়ে ফেলেছে।
হাফপ্যান্ট পরে নাচ-গান কারা করছেন?
সাম্প্রতিক সময়ের ছবিগুলো দেখলেই সবাই বুঝতে পারবে। আমি মনে করি, হাফপ্যান্ট পরে নাচ-গান হচ্ছে নোংরামি। আগামী সপ্তাহে আমাদের ছবির একটি গান ছাড়ব, গান কাকে বলে দেখিয়ে দেব। নোংরামি ভালো লাগে নোংরা মানুষের। ভালো মানুষের নোংরামি ভালো লাগে না।
‘দিন: দ্য ডে’ ছবির মূল গল্পটা কী?
একজন মানুষের সারা দিনের কর্মকাণ্ড। এর বাইরে আর কিছু বলতে চাই না। বাকিটা দর্শকদের প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে দেখতে হবে।