সিডনিতে মাকসুদ

'ফিডব্যাককে তো বলতে পারি না, আমাকে নেন'

সিডনি বিমানবন্দরে মাকসুদ। ছবি: প্রথম আলো
সিডনি বিমানবন্দরে মাকসুদ। ছবি: প্রথম আলো
বাংলাদেশে ব্যান্ডসংগীতের ইতিহাসটা প্রায় চার দশকের পুরোনো। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে নতুন দেশ গড়ার পাশাপাশি যাত্রা শুরু হয় কিংবদন্তি ব্যান্ডগুলোর। সেই ব্যান্ডগুলোর একটি ফিডব্যাক। এখনো উৎসব মানেই ‘মেলায় যাই রে’ গানে মেতে ওঠে সবাই, সেই খুব জনপ্রিয় গানটিও লিখেছেন এবং গেয়েছেন মাকসুদ। এমনকি ফিডব্যাকই বাংলাদেশের প্রথম ব্যান্ড, যারা মাত্র একটি গানের অ্যালবাম বের করেছিল। অ্যালবামটির নাম ‘দেহঘড়ি’। আর সে অ্যালবামও রেকর্ড পরিমাণ বিক্রি হয়। এর বছরখানেক পরেই ব্যান্ডের অন্য সদস্যদের সঙ্গে মতের অমিল হওয়ায় ফিডব্যাক ছাড়েন মাকসুদ। তৈরি করেন নিজের ব্যান্ড ‘মাকসুদ ও ঢাকা’। এখন যাঁদের বয়স ৪০ থেকে ৫০, তাঁরা দেখেছেন বাংলা ব্যান্ডসংগীতের সেই সোনালি দিন। বড় হয়েছেন মাকসুদের জনপ্রিয় সব গান শুনে। এ মুহূর্তে একটি কনসার্টে অংশ নিতে সিডনি আছেন মাকসুদ ও তাঁর দল। ফিডব্যাক ছেড়ে যাওয়া, বাউলসংগীতের ফিউশনসহ আরও অনেক বিষয় নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন মাকসুদ


০১৩ সালে সিডনি এসেছিলেন। এরপর এবার এসেছেন। এবার অ্যাডিলেড দিয়ে শুরু করেছেন আপনার অস্ট্রেলিয়া সফর। কেমন লাগছে? 

ওই বছরের শোটাও ভালো ছিল; যদিও ভিসাসংক্রান্ত জটিলতায় পড়েছিলাম। এবার অনেক রিলাক্স। অ্যাডিলেডে আমার প্রথম শো খুবই ভালো লেগেছে। দর্শক খুবই প্রাণবন্ত ছিল। অনেক ঘোরাঘুরি করেছি।

সিডনিত নতুন কিছু দিচ্ছেন?
আমি নতুন করে আসছি আবার। পাঁচ বছর আগের ব্যান্ড এখন অনেক অভিজ্ঞ। সব সময় সংগীতকে নতুন কিছু দেওয়ার চেষ্টা থাকে। এ যুগের সঙ্গে মিল রেখেই আমরা সংগীত পরিবেশনা করি। আশা করি নতুন কিছু দিতে পারব।

আপনি নেই বলে ফিডব্যাককে প্রাণহীন মনে হয়। এটা আপনাকে কষ্ট দেয়?
আসলে ২১ বছর হয়েছে ফিডব্যাক ছেড়ে দিয়েছি। ওদের সঙ্গে আমার ডিভোর্স বা সেপারেশন হয়নি, শুধু চলে আসছি। মানুষের মুখেও শুনি হতাশার কথা। এখন আর আনন্দ, বেদনা বা কষ্ট লাগে না।

ফিডব্যাকে ফেরা যায় না?
এ রকম অনেকেই বলে। আমি যদি ওটা নিয়ে পড়ে থাকতাম, তবে আজ যেখানে আছি, এই পর্যন্ত আসতে পারতাম না। ২১ বছরে কিন্তু আমার অনেক অর্জন, ৩-৪টা অ্যালবাম আছে। অনেক আন্তর্জাতিক শো আছে। আর আমি ফিডব্যাক ছেড়ে এসেছি নতুন একটা ব্যান্ড করব বলে, করেছিও। আর এক হতে হলে অফারটা তাদের (ফিডব্যাক) কাছ থেকে আসতে হবে। আমি তো আর বলতে পারি না, আমাকে নেন। আর আমার সঙ্গে যারা ২১ বছর গান করেছে, তারা কী করবে? তাদের সঙ্গে আমি এত বড় বেইমানি করব কী করে? আমার ৪১ বছরের মিউজিক্যাল ক্যারিয়ারের ২০ বছর ফিডব্যাকে আর ২১ বছর তাদের সঙ্গে আমি কাটিয়ে দিয়েছি। আমার জন্য এটা অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত হবে।

আপনার পোশাকে এত পরিবর্তন কেন?
লালনের ভক্ত বা সাধুচর্চা কোনো কিছুই পোশাক-সাজসজ্জাকে প্রভাবিত করে না। আমি পরিকল্পনা করে কিছু করি না। আমার ভালো লাগা থেকেই করি। ইংরেজিতে একটি কথা আছে—আপনি কী পোশাক পরছেন, সেটি ফ্যাশন নয়; বরং স্বয়ং আপনিই ফ্যাশন।

অনেক বছর তো হলো বাউলগান নিয়ে আছেন। কেমন লাগে?
১৯৮৮ সাল থেকে এই পথে আছি। বয়স বাড়ছে কমিটমেন্টের জায়গাও বাড়ছে। আগে যা বুঝতাম, তা থেকে এখন আরও ভালো করে বোঝার চেষ্টা করি। নতুন নতুন তত্ত্ব আসছে। সাধকদের মধ্যে তো আমার বন্ধুর অভাব নেই। বাউল মিউজিক হলো ‘রুট রকস’। এটা বাংলাদেশের আসল রক মিউজিক।