৭৫ বছর বয়সটা তেমন কিছুই না

আলী যাকের। ছবি: কবির হোসেন
আলী যাকের।  ছবি: কবির হোসেন


যাকের ভাই, ভালো আছেন?
হ্যাঁ! ভালো। তোমরা ভালো তো?

জি, আমরা ভালো আছি। আমাদের তো খুব ইচ্ছা ছিল আপনাকে সারপ্রাইজ দেব, আসব বাড়িতে। কিন্তু আপনি একটু ক্লান্তি বোধ করছেন জেনে ফোনে কথা বলার সিদ্ধান্ত নিই। কাল (আজ) আপনার বয়স ৭৫ পূর্ণ হবে। ৭৫টা কেমন আপনার জন্য? কেমন লাগছে জীবনটা?
৭৫ বছর বয়সটা তেমন কিছুই না।

কিন্তু জন্মদিন কাছে এলে যদি পেছন ফিরে তাকাতে বলি, তাহলে কি কারও কারও কথা মনে পড়ে যায় না?
হ্যাঁ, অনেকের কথাই মনে পড়ছে। শুরুতেই মনে পড়ছে উজ্জ্বল মানুষগুলোর কথা। আমার বন্ধুদের কথা। এর মধ্যে যেমন নূর (আসাদুজ্জামান নূর) আছে। জিয়াউদ্দীন তারিক আলী আছে। আমার কাজিনরা আছে। যেমন শাহেদ, আমার খালাতো ভাই। আমার ছোট বোনটার কথাও বলব। ও মারা গেছে। সব সময় আমার খেয়াল রাখত। এ রকম আরও অনেকে আছে। নাটকের লোকেরা আছে। এত নাম যে তা বলে শেষ করা যাবে না। তাদের সাপোর্ট না পেলে আমার পথচলাটা সত্যিই কঠিন হয়ে যেত। আবার নতুন করে কাজ যখন শুরু করলাম, তখন নাগরিকের তরুণতর মানুষগুলোর কথাও আমাকে বলতে হবে। পান্থ শাহরিয়ারের মতো এখনকার নাগরিকের ছেলেমেয়েদের কথাও আমাকে বলতে হবে। আর সারার কথা তো সর্বাগ্রে বলতে হয়। বলতে হয় পরিবারের সদস্যদের কথা। আমার জীবনে এদের অবদান চিরস্মরণীয়।

গ্যালিলিওর অভিনয়ে শেষ দৃশ্যটায় আপনি চেয়ার থেকে পড়ে যাচ্ছিলেন। এটা গত বছরের কথা। যখন অভিনয় করছিলেন, তখন আপনার বয়স ৭৪। কী করে এ রকম সাহস হলো আপনার?
হা হা হা। আমি আসলে ভাবছিলাম, বুড়ো বয়সে যদি মানুষ পড়ে যায়, তাহলে এভাবেই পড়বে। তখন তো তার কোনো বাহ্যজ্ঞান থাকে না। ভাবে না, শরীরের কী হবে। তাই আমিও সে অভিনয়টাই করেছি। ভাগ্য ভালো, যেভাবে পড়তে চেয়েছিলাম, সেভাবেই পড়েছি। মহড়ার সময় যা করেছি, সেভাবেই মঞ্চে পড়ে গেছি। তাই সমস্যা হয়নি।

সব সময় দেখে এসেছি, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, বাঙালি—বিষয়গুলো আপনাকে তাড়িত করে। আপনার লেখালেখিতেও এ বিষয়গুলোর প্রাধান্য থাকে। কেন?
সবচেয়ে বড় কথা, আমরা এক পরাধীন বাংলায় ছিলাম। পাকিস্তানে থাকা মানে পরাধীন বাংলায় থাকা। এখন আমরা স্বাধীন দেশে বাস করছি। আমি বাঙালি। এটাই আমার সবচেয়ে বড় পরিচয়। আমি জন্মসূত্রে বাঙালি। এরপর আমার অন্য পরিচয়গুলো। একজন জাপানির কথা বলি। তিনি বৌদ্ধধর্মাবলম্বী ছিলেন। এরপর তিনি ধর্ম পরিবর্তন করে হিন্দু বা মুসলমান হলেন। সেটা তিনি পারবেন। কিন্তু তিনি জাপানি পরিচয় ছেড়ে বাঙালি হতে পারবেন না। এটাই হলো সবচেয়ে বড় কথা। এটা আমি মনে রাখি।

তরুণদের জন্য কী বলবেন?
প্রথমেই তাদের ভাবতে হবে, তারা কোন পথ অবলম্বন করবে। বঙ্গবন্ধু তাদের পরিচয়, রবীন্দ্রনাথ তাদের পরিচয়, বাংলা ভাষা তাদের পরিচয়। এ কথা মনে রাখলেই তারা সামনের দিকে এগোতে পারবে।