অভিনয় দিয়েই বিনোদন অঙ্গনে পা রাখা। তবে উপস্থাপক হিসেবেই বেশি আলোচিত। এরই মধ্যে উপস্থাপনায় পাঁচ বছর পার করলেন। এই সময়ে তাঁর অতিথি হয়েছে ১ হাজার ৫৬৭ জন। উপস্থাপক হয়ে ওঠার গল্প ও নানা প্রসঙ্গে কথা বললেন শাহরিয়ার নাজিম জয়
উপস্থাপনায় পাঁচটি বছর কাটিয়ে দিলেন। কার সঙ্গে কথা বলে বেশি ভালো লেগেছে?
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের। আসলে আমার সামনে কেউ কথা বললে, তাঁর ভেতরে যা আছে, সব আমার ব্রেনে চলে আসে। মানুষটা কেমন, কীভাবে চলেন, কী খান, তাঁর ভাবনা—এসব বিষয়ে একটা ধারণা পাই। সায়ীদ স্যারের সঙ্গে কথা বলে অন্য একটা ঘোরে চলে গেছি। একটা মানুষ আরেকটা মানুষকে সামনাসামনি বসে এভাবে আলোকিত করে ফেলতে পারেন!
উপস্থাপনা করতে গিয়ে কখনো বিব্রত হয়েছিলেন?
বেশ কয়েকজনের সঙ্গে হয়েছি। সর্বশেষ বিব্রত হয়েছি মেহের আফরোজ শাওনের সঙ্গে কথা বলে, ৩০০ সেকেন্ড অনুষ্ঠানে। তিনি খুবই ট্যালেন্টেড নারী। সব সময় আমার সঙ্গে কো–অপারেশন করেছেন। সর্বশেষ তিনি আমার অনুষ্ঠানে আমাকে বোল্ড করবেন, এ পরিকল্পনা নিয়েই এসেছিলেন। আমাকে ইন্টারভিউ করার সুযোগই দেননি।
কাদের বারবার অতিথি হিসেবে চান?
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারকে বারবার অতিথি হিসেবে চাই। এর বাইরে আমি অনেক বেশি মজা পাই অপু বিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলে। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে ৩০০ সেকেন্ড নয়, ৩ হাজার, ৩ লাখ সেকেন্ডের অনুষ্ঠান করে ফেলতে পারব।
যাঁর জন্য এখনো আপনার প্রতীক্ষা?
শাকিব খানের জন্য মুখিয়ে আছি। তিনি বাংলাদেশের ১ নম্বর সুপারস্টার। শাকিব খানকে এই মুহূর্তে পেলে, আমার আর্কাইভ সমৃদ্ধ হবে।
আপনি তো মূলত অভিনয়ে ছিলেন। তবে উপস্থাপনায় আলোচিত, এ নিয়ে মন্তব্য শুনতে হয় না?
তা তো শুনিই। আমার অভিনয়ের সময়টায় তো একটু সস্তা মানের, সংখ্যায় বেশি নাটক ও প্রতিদিন ব্যস্ত থাকার প্রবণতা ছিল। আফজাল ভাই, সুবর্ণা আপা ও তৌকীর ভাইদের একটা সময় গেছে; তাঁরা নাটকের পাশাপাশি অন্য কিছু করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তাই নাটকটা ভালো ভালোই করতেন। আমাদের সময়ে ফুল টাইম ঢুকেই গেলাম প্যাকেজ অভিনেতা হিসেবে। সংখ্যা বেড়ে গেল, টাকা কামাতে হবে, মান কমে গেল। অসংখ্য চ্যানেল হয়ে গেল। আমরাও টাকা চিনে গেলাম, মানের প্রতি আপস করলাম—এ প্রবণতায় ভালো নাটক ভাগ্যে মেলা বড় কঠিন হয়ে গেল।
এখন পরিস্থিতি বদলেছে মনে হয়?
সম্পূর্ণ বদলে গেছে। এখন অদ্ভুত কিছু ভালো নাটক হচ্ছে। যদিও ঘুরেফিরে সাত-আটজনই ভালো অভিনয় করছেন।
আপনি কয়েকটি সিনেমা নির্মাণ করেছেন। কতটা সন্তুষ্ট?
সন্তুষ্টি নিয়ে আমি সিনেমা নির্মাণ করতে পারছি না। সিনেমা যতগুলো বানিয়েছি, এগুলোকে প্রজেক্ট বা অ্যাসাইনমেন্ট হিসেবে দেখছি। অ্যাসাইনড সিনেমা। আমাকে হয়তো একটা বাজেট দিল, সেই বাজেটের অর্ধেক প্রথম দিকে খরচ করিনি। আমাকে তো সারভাইব করতে হতো। তখন ২০ লাখ টাকা দিলে আমি ১০ লাখ টাকায় সিনেমা বানাতাম, ১০ লাখ টাকা পকেটে ভরতাম। আসলে ওই সব বাজেটে কারও পক্ষেই সিনেমা বানানো সম্ভব নয়। আসলে নির্মাতা ও অভিনেতা হিসেবে আমাকে অনেক কম্প্রোমাইজ করতে হয়েছে। উপস্থাপনায় আমি কম্প্রোমাইজ করি না। আমার ধারার বাইরে আমাকে উপস্থাপনা কেউ করাতে পারেনি।
এর মানে এসব সিনেমা নিজের বলেও মানেন না?
আসলে সে অর্থে এখন পর্যন্ত কোনো চলচ্চিত্রই বানাইনি। আমি অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হলে তখনই সিনেমা বানাব। অল্প বাজেটে চলচ্চিত্রে স্বাধীনতা থাকে না। তবে কত বাজেট হলে সিনেমা বানাতে পারব সেটা আমি জানি না।
নির্মাতা হিসেবে এটা আপনার ইমেজ ক্ষতি করছে না?
নির্মাতা ও অভিনেতা হিসেবে আমাকে অনেক কম্প্রোমাইজ করতে হয়ছে। উপস্থাপনায় আমি কম্প্রোমাইজ ছাড়া চলি। আমার ধারার বাইরে আমাকে উপস্থাপনা কেউ করাতে পারেনি। আমি স্বল্প বাজেটে যেসব সিনেমা বানিয়েছি, আমি মনে করি অনেকে সর্বোচ্চ মেধা এবং বাজেটে এই ছবি বানাতে পারবে না। আমি তিন দিনে সিনেমা বানিয়েছি। সাত দিনে যে সিনেমা বানিয়েছি দুটি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছে। তিন দিনে বানানো সিনেমাও পুরস্কার পাবে বলে বিশ্বাস করি।
এরপর তাহলে শুরু হলো কীভাবে?
এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান স্যারের সঙ্গে দেখা করলাম। তাঁকে বললাম, আমাকে শেষ একটা সুযোগ দেন। তিন মাস সময় দেন। ছয়টা পর্ব করি। তিনি দয়া করে আমাকে তিন মাসের সুযোগ দিলেন। এই তিন মাসের মধ্যে সেন্স অব হিউমারের প্রথম পর্বই ক্লিক করে। অতিথি ছিলেন পূর্ণিমা ও জায়েদ খান। এরপর একে একে এলেন অপু বিশ্বাস, নুসরাত ফারিয়া ও পপি। চারটি পর্বই আলোচিত। আমার হারানোর কিছু নেই। ডু অর ডাই বেসিসে খেলেছি। ধরেই নিয়েছি, তিন মাসে তো বন্ধ হয়ে যাবে। যখন একেকটা পর্ব ধামাধাম হিট হয়ে গেল, এটিএন বাংলাই টিআরপিতে ১ নম্বর হয়ে গেল। প্রতিষ্ঠানটি আবার টিআরপি ভীষণ গুরুত্ব দিত। আমাকেও বড় স্টুডিও ও যা যা সুবিধা দেওয়ার দিলেন। এরপর থেকে তো এখনো চলছি।
উপস্থাপনায় আপনার কোনো অনুপ্রেরণা ছিল?
আমার কোনো অনুপ্রেরণা ছিল না। তবে ভেবেই নিয়েছিলাম, বিনোদন অঙ্গনে আমাকে দিয়ে আর কিছুই হবে না। উপস্থাপনাটা জাস্ট ফাজলামি করেই করছি। আমি যা, যেভাবে কথা বলি, সেভাবেই করেছি শুধু। এখানে কোনো নিয়ম মানিনি। আমার মতো করে করতে করতে আমাকে চিনে গেছি। আমি কনফিডেন্ট ছিলাম না, তবে আমার পর্ব যখন দর্শক গ্রহণ করে ফেলে, তখন আমি কনফিডেন্ট হয়ে যাই।
আচ্ছা আপনার উপস্থাপনার সিদ্ধান্ত হুট করেই কি?
এটিএন বাংলায় ঈদের নাটক বানানোর প্রস্তাব নিয়ে যাই। চেয়ারম্যান স্যারের সঙ্গে কথা বলি। তিনি আমাকে বললেন, আপনি ম্যাগাজিন করেন। ম্যাগাজিন করলে ভালো হয়। এমন কথা শুনে হঠাৎ মনে নতুন একটা ধাক্কা দিল। ম্যাগাজিন নিয়ে ভাবা শুরু করলাম। কূলকিনারা পেলাম না। ডা. এজাজকে ফোন দিলাম, তিনি এখানে ব্যস্ত, ওখানে ব্যস্ত। ভাবলাম, এভাবে কী করে সম্ভব? একদিন করবে, আরেক দিন করবে না। কোনো ভবিষ্যত নেই। চেষ্টা করলাম, মীর সাব্বিরকে নিয়ে দুই বন্ধুর একটা শো করা যায় কি না। দুজনে উপস্থাপনা করব। দেখলাম, সেও ব্যস্ত। তার মধ্যে আবার ডমিনেটিং ব্যাপার ছিল। আমার মনে হয়েছে, তখন অভিনেতা হিসেবে ওর অবস্থান যেহেতু আমার চেয়ে শক্ত, পরিচিতি অনেক বেশি—আমাকে অবশ্যই উপস্থাপনায় ডমিনেটও করবে। দু–একটা মিটিংয়ে এটা উপলব্ধি হয়। এটা খারাপভাবে দেখিনি, এটা হয়তো তাঁর মার্কেট ভ্যালুর কারণেই হয়েছে। সেই সময় বিচ্ছিন্নভাবে সেন্স অব হিউমার শুরু হলো। প্রথম পর্বে শহীদুজ্জামান সেলিম, জিতু আহসান, হৃদি হক, সাজু খাদেম, ভাবনাসহ সাতজন অতিথি ছিলেন। ৫ পর্বের পর অনুষ্ঠানটি অত্যন্ত দুর্বল, মানহীন, নিম্নমানের অভিযোগে বন্ধ হয়ে যায়।