গত শুক্রবার দেশের ৫৪টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে সৈকত নাসির পরিচালিত তালাশ। মুক্তির আগে থেকে এখনো সিনেমাটির প্রচারণায় আছেন ছবির নায়িকা বুবলী। এ ছবিসহ অন্যান্য সিনেমার কাজ ও ব্যক্তিজীবন নিয়ে কথা বলেছেন এই ঢালিউড নায়িকা।
এই কয়েক দিনে ‘তালাশ’-এ কেমন সাড়া পেলেন?
মুক্তির প্রথম দিনই সিনেপ্লেক্সসহ কয়েকটি সিঙ্গেল হলে গিয়েছিলাম। দর্শকের সাড়া পেয়েছি। ছবিটি নিয়ে তাঁদের রিভিউও চমৎকার। বর্তমান দেশের কয়েকটি জায়গায় বন্যা, টানা বৃষ্টিতে একটা বৈরী পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতেও দর্শক যে হলে আসছেন, এটিই বড় পাওয়া।
এই বৈরী পরিস্থিতিতে ছবিটি নিয়ে আপনার প্রত্যাশা ব্যাঘাত ঘটেনি?
দেখুন, মুক্তির আগে থেকেই তালাশ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দর্শকের দারুণ উন্মাদনা দেখেছি। মুক্তির দিন সকাল থেকে দর্শকের একটা আলাদা আগ্রহ ছিল ছবিটিতে কিন্তু ওই দিনই দুপুর থেকে সিলেটে বন্যার খবর আসে। সারা দেশে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। এটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। মানুষের জীবন তো আগে। সব মিলে ছবিটি নিয়ে প্রত্যাশায় কিছুটা আঘাত তো হয়েছেই।
হেলিকপ্টারে করে বগুড়ায় প্রচারে গেলেন, কেমন অভিজ্ঞতা হলো?
খুবই মজার অভিজ্ঞতা হয়েছে। এর আগে আমি কোনো সিনেমায় এভাবে ঢাকার বাইরে প্রচারে যাইনি। ঢাকার বাইরের ভক্তদের সঙ্গে এভাবে সরাসরি অভিজ্ঞতা কখনো ছিল না। হেলিকপ্টার থেকে নেমে হল পর্যন্ত দর্শকের যে ভালোবাসা পেয়েছি, কোনো দিন ভুলব না। মধুবন সিনেপ্লেক্সে দুপুরের শোর শেষ ২০ মিনিট দর্শকের সঙ্গে বসে আমি, পরিচালক, নায়ক সিনেমাটি দেখেছি। শো শেষ হলে দর্শকেরা কাছে পেয়ে আমার সঙ্গে কথা বলেছেন, ছবি তুলেছেন। আমিও তাঁদের সঙ্গে বগুড়ার ভাষায় কিছু কিছু কথা বলেছি। আমাকে কাছে পেয়ে তাঁদের চোখের যে ভাষা দেখেছি, বর্ণনা করতে পারব না। বগুড়ায় প্রচারে গিয়ে বহু স্মৃতি সঙ্গে এনেছি।
কেমন সেসব স্মৃতি, বলবেন?
বগুড়ার দর্শকের কাছ থেকে রাজকীয় রিসেপশন পেয়েছি। চলে আসার সময় হাতে তৈরি সুতির শাড়ি, পাঞ্জাবি, টুপি, হাতে তৈরি ছোটদের খেলনা, সালোয়ার–কামিজের পিস, দইসহ কত কিছু যে আমার হাতে তুলে দিয়েছেন তাঁরা! সত্যিই অসাধারণ একটা সফর ছিল এটি। বহুদিন মনে থাকবেন।
বগুড়ার ভাষা আগে থেকে জানতেন?
না, আগে জানা ছিল না। ছবির নায়ক আদরের কাছ থেকে শিখেছি। শো শেষ হলে দর্শকদের উদ্দেশে বলেছি, ‘কেংকা আছেন আপনারা?’ শুনে তারাও মজা পেয়েছেন। তবে তাঁদের কথা দিয়ে এসেছি, এরপর কখনো গেলে বেশি করে বগুড়ার আঞ্চলিক ভাষা শিখে সেখানে যাব।
অনেকেই বলেন, বাংলা সিনেমার একটা ক্রান্তিকাল চলছে। আপনার কি মনে হয়?
আমার জায়গা থেকে এই পরিস্থিতিতে আমি হতাশ নই। কারণ, কিছুদিন আগে নায়ক জসীম স্যারের অনেক আগের একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকার দেখছিলাম। সেখানে সে সময়ের সিনেমার অবস্থা সম্পর্কে স্যারকে উপস্থাপকের প্রশ্ন ছিল, সিনেমা নিয়ে হতাশ কি না? উত্তরে স্যার বলছিলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে নেপাল, শ্রীলঙ্কা বা বাংলাদেশের সিনেমা হলিউড কিংবা বলিউডের সঙ্গে তুলনা করা যাবে না।’ জসীম স্যারদের শেষের দিকের সময়েও সিনেমা অবস্থা যে খুব ভালো ছিল, তা নয়। তাই আমি এখনকার পরিস্থিতি নিয়ে হতাশ নয়। কারণ, কিছু পাওয়া না পাওয়া তো থাকবেই। তবে ভিন্ন ধরনের গল্প বলা সিনেমা আগের চেয়ে বেশি হচ্ছে। স্মার্ট সিনেমা তৈরি হচ্ছে এখন। যতটুকু সমস্যা আছে, সবার সমন্বিত উদ্যোগ থাকলে, তা–ও কেটে যাবে। আমি আশাবাদী।
আগামী ছবির খবর কী?
ক্যাসিনো ও রিভেঞ্জ নামে দুটি সিনেমা মুক্তির অপেক্ষায় আছে। লিডার, আমিই বাংলাদেশ; লোকাল, মায়া, প্রেম পুরান, বিট্রে—এই ছবিগুলোর অল্প অল্প কাজ বাকি আছে। আগস্ট থেকে কুহেলিকা নামে নতুন একটি ছবির শুটিং শুরু হবে। তা ছাড়া দুটি নতুন ছবির কথাবার্তা চলছে।
অনেক দিন হলো শাকিব খানের বিপরীতে নতুন ছবিতে দেখা যাচ্ছে না আপনাকে। কেন?
এটি তো আমি বলতে পারব না। কারণ, এর পুরোটাই নির্ভর করে প্রযোজক ও পরিচালকের ওপর। সে ধরনের গল্প এলে, প্রযোজক চাইলে অবশ্যই নতুন ছবিতে একসঙ্গে কাজ হবে।
ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকিতে আপনার পরপর দুটি ওয়েব ফিল্ম ‘টান’ ও ‘৭ নাম্বার ফ্লোর’ আলোচিত হয়েছে। ওটিটিতে কাজের প্রতি আগ্রহ কি বেড়েছে?
কিছুটা তো বেড়েছেই। কারণ, ওটিটিতে সিনেমা মুক্তি পেলে সারা পৃথিবীর বাঙালিরা দেখতে পারেন। আর বড় পর্দায় একটা নির্দিষ্ট হলে দর্শক সিনেমা দেখার সুযোগ পান। এ জন্য আমার কাছে মনে হয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বড় পর্দার চেয়েও বড় পর্দা। ওটিটিতে গল্প বলার স্বাধীনতা বেশি থাকে। ভালো কাজের সুযোগ থাকে। তবে আমার কাছে মাধ্যম ব্যাপার না, ভালো কাজ হলে দুই জায়গাতেই কাজ করতে চাই।
বিয়ে করছেন কবে?
আপাতত বিয়ে নিয়ে ভাবছি না। এটি ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিয়েছি। যেদিন ঘটনাটি ঘটবে, সুখবরটি নিজ থেকেই সবাইকে জানাব।