আড়াই বছর পর নতুন গান প্রকাশ করতে যাচ্ছেন গীতিকার ও কণ্ঠশিল্পী তপু। করোনাকালে নিজের উপলব্ধি থেকে গানটি লিখেছেন তিনি। নতুন গানসহ সংগীতাঙ্গনের নানা বিষয় নিয়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
নতুন এ গানের বিষয়বস্তু কী?
পৃথিবীর ওপর আমরা অনেক অত্যাচার করছি। কোনো বিশ্রাম দিইনি। এই করোনায় দেখেছি, পৃথিবীটা অনেক বিশ্রাম নিয়েছে। আকাশ আগের চেয়ে অনেক নীল হয়েছে, বাতাসও বিশুদ্ধ হয়েছে। এই ভাবনার ওপর ‘পৃথিবী ঘুমাক’ শিরোনামের গানটি তৈরি করা। গানের ভিডিওতে ফটোগ্রাফার পিনু রহমানের কোভিডকালীন তোলা ছবি নিয়ে অ্যানিমেশন করছি, মানুষ যাতে গানের কথার সঙ্গে ভিডিওকে সংযুক্ত করতে পারে। পাশাপাশি আমার আর সংগীতায়োজক রাফার পরিবেশনার দৃশ্যও থাকবে।
এই গান প্রকাশের পর কি আবার ডুব দেবেন নাকি নতুন গান প্রকাশে মনোযোগী হবেন?
আমার আবেগ-অনুভূতিতে নাড়া না দিলে গান তৈরি করতে আগ্রহ পাই না। তাই এখনই বলতে পারছি না। আমার ক্ষেত্রে বিষয়টা আরও ভিন্ন। যেহেতু নিজে লিখে সুর করি, নতুন কী দিতে পারছি, সেটাই আমার কাছে বড় বিষয়। এক শর বেশি গান গাওয়া হয়েছে আমার। হয়তো সবাই আমার সব গান শোনেননি। আমি চাই, শোনার জন্যও সময় দরকার। তাই নতুন কিছু দিতে না পারলে জোর করে কিছু করতে চাই না।
বিশ্বসংগীতের তুলনায় আমাদের দেশের সংগীত কোথায় আছে?
আমি মনে করি, বাংলাদেশের সংগীত অনেক সমৃদ্ধ। তবে বিশ্বসংগীত প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে অনেক এগিয়ে আছে। কিন্তু গান যে মানুষের মনের খোরাক হওয়ার বিষয়, মনকে নাড়া দেওয়ার, এসব ব্যাপার আমাদের গানেই বেশি বলে আমি মনে করি।
আমরা কি আসলে মনকে নাড়া দেওয়ার মতো গান দিতে পারছি?
আমরা নাড়া দিতে পারছি ঠিকই, কিন্তু তা সঠিকভাবে না। আমাদের দেশে এখন সস্তা কথার গান ভাইরাল হচ্ছে। অনেক সস্তা জিনিস মানুষের কাছে জনপ্রিয় হচ্ছে। যেহেতু আমরা ভিউ দেখে বিচার-বিবেচনা করি, যা একদমই ঠিক না। এই সব সস্তা জিনিসের নিচে মনকে নাড়া দেওয়ার মতো গান চাপা পড়ে যাচ্ছে।
ভিউয়ের কথা বলছিলেন। অনেক শিল্পী ভিউ নিয়ে অনাগ্রহ প্রকাশ করলেও নিজের গানের ভিউ বেশি হলে বেশ গর্ব করে বলতে থাকেন।
আমি অন্য কারও কথা বলতে পারব না। তবে এটা ঠিক, এক এক শিল্পীর ভাবনা এক এক রকম। এখন তো ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে ভক্ত অনুসারী দেখে মূল্যায়ন করা হয়। পৃথিবী একটা গতিতে যাচ্ছে। যে শিল্পী বিনোদন অঙ্গনে কাজ করছেন, তাঁর কাছে ভিউটা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ভিউ বেশি হলে সে স্পনসর পাচ্ছে, টাকা পাচ্ছে, অ্যাটেনশনও পাচ্ছে। একটা গতিতে চলার জন্য এটা দরকার। কিন্তু এটাও ঠিক, সবকিছুর একটা সমন্বয় দরকার আছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে, শ্রোতাদের পছন্দটা বাড়ানোর দিকে শিল্পীদের নজর দিতে হবে।
এখন তো এমনও শোনা যায়, ‘শ্রোতার চাহিদার কথা মাথায় রেখে গানটি তৈরি করলাম বা গাইলাম’। কথা হচ্ছে, শিল্পী ও সংগীত পরিচালক কি শ্রোতার চাহিদামতো গান গাইবেন বা তৈরি করবেন, নাকি শ্রোতার হাতে নিজের সৃষ্টি তুলে ধরবে?
আমার মনে হচ্ছে, শিল্পী ও সংগীত পরিচালকের দায়িত্ব হচ্ছে শ্রোতার চাহিদা তৈরি করা। শ্রোতার চাহিদামতো গান করা কখনোই নয়। প্রথমে হয়তো একজন শিল্পীর ভালো গান কোটি কোটি শ্রোতা শুনবে না। ধীরে ধীরে আইডেন্টিটি তৈরি হবে। নিজের পছন্দ ও রুচি ধরে রেখে কাজ করে গেলে একটা সময় শ্রোতাগোষ্ঠী ঠিকই তৈরি হবে। আমি বিশ্বাস করি, শিল্পী, গীতিকার ও সংগীত পরিচালক তাঁদের ভাবনা যত দূর সম্ভব ছড়িয়ে দেবেন। শ্রোতা যা পছন্দ করে, তা মেনে যদি কাজ করা হয়, তাহলে সেটা অবশ্যই নিম্নমুখী হবে।শ্রোতাদের দ্বারা আমি গাইডেড কেন হব?
এই পথটা কি কঠিন হবে?
যেকোনো পজিটিভ কাজের জন্য চড়াই–উতরাই পার হতে হয়। এই চড়াই–উতরাই পার করার মানসিকতা না থাকাটা এক রকম ব্যর্থতা। আমার মনে হয়, যত কষ্ট হোক, শ্রোতাদের ভালো কিছু দিতে হবে—এই মানসিকতা থাকা দরকার। পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান এবং প্রচারমাধ্যমকে এসবে খেয়াল রাখতে হবে। ব্যবসার পাশাপাশি ভালো শিল্পী, ভালো কাজকে সামনে বেশি বেশি তুলে ধরতে হবে।
একটি সিনেমার গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। এরপর আর সিনেমায় আপনাকে আর শোনা যায়নি। কারণ কী?
প্রস্তাব পাইনি। প্রস্তাব পেলে অবশ্যই গাইতাম। কেন যেন মনে হয়, আমার গাওয়ার স্টাইলটা হয়তো পরিচালক ও প্রযোজকদের ভালো লাগেনি।