অভিনেতা, পরিচালক ও প্রযোজক মাসুদ পারভেজ, যাঁর পরিচিতি সোহেল রানা নামে। গতকাল ছিল তাঁর ৭৬তম জন্মদিন। করোনা ও অন্যান্য জটিলতায় মাসখানেকের বেশি সময় ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। এখন বাসায় বিশ্রামে আছেন তিনি। জন্মদিন উপলক্ষে তিনি কথা বললেন প্রথম আলোর সঙ্গে
শুভ জন্মদিন।
ধন্যবাদ। আমি তো ভাবছিলাম এবারের জন্মদিন পালন করতে পারব কি না। আইসিইউ থেকে ফিরে এসেছি, এটাই তো বড় শুকরিয়া।
আপনার বয়স কত হলো। অনেকে বলে নায়কদের বয়স বাড়ে না
কে বলে নায়কদের বয়স বাড়ে না। যারা এমন কথা বলে, তারা মিথ্যাবাদী, তারা গর্দভ। আমি ’৭৬–এ পা দিচ্ছি।
জন্মদিন আসে যায়। আপনার কাছে এ ব্যাপারটা কেমন লাগে?
প্রতিবারই জন্মদিন এলে আমরা আনন্দ, হইচই করি। কিন্তু ভুলে যাই যে জীবনের আয়ু থেকে এক বছর কমে গেল, এটা কেউ মনে করি না। আমার ছবির একটা গান ছিল ‘দমে দমে বয়স কমে এ কথা কি মনে রাখি’। মানে প্রতি নিশ্বাসে কিন্তু বয়সটা বাড়ছে, আয়ুটা কমছে। প্রতি জন্মদিনে এটা আমার সব সময় মনে পড়ে। তারপরও মা–বাবাকে দেখেছি ছোটবেলা থেকে তাঁরা এ দিনটা ধর্মীয়ভাবে উদ্যাপন করতেন। মিলাদ পড়াতেন। এক রকম হইচই করে কাটত।
ছোটবেলার সেই উদ্যাপন কি এখনো হয়?
চলচ্চিত্রে আমি ৪৬ বছর কাজ করেছি। ২১ ফেব্রুয়ারি তারিখটা আমার বাসায় চলচ্চিত্রের সবাই আসত, পরিচালক–প্রযোজক, নায়ক–নায়িকা–গায়ক–গায়িকা মিলে চলচ্চিত্র মেলার মতো হতো বলা যেতে পারে। আমি কিন্তু কেক কাটি না, সামনে কেক থাকে ঠিকই। কেক কাটার বিষয়টা আমার ভালো লাগে না।এবারের জন্মদিন কেমন কাটল?
করোনার আগপর্যন্ত সবাই তো বাসায় আসত। মেলার মতোই হতো। হইচই করত। এবার যেহেতু আমি অসুস্থ, আমার কথা ভেবে কেউ বাসায় আসেনি। তবে রাত ১২টার পর থেকে ফোন এসেছে, অন্য বছরের চেয়ে বেশি। এবার সবচেয়ে বেশি ফোন পেয়েছি, দেশের বাইরে থেকে। এ ছাড়া ফেসবুকে সবাই তাঁদের ভালোবাসা জানাচ্ছে—এসব আমাকে আপ্লুত করেছে, নস্টালজিক করেছে।
এবারের জন্মদিন কেমন কাটল?
করোনার আগপর্যন্ত সবাই তো বাসায় আসত। মেলার মতোই হতো। হইচই করত। এবার যেহেতু আমি অসুস্থ, আমার কথা ভেবে কেউ বাসায় আসেনি। তবে রাত ১২টার পর থেকে ফোন এসেছে, অন্য বছরের চেয়ে বেশি। এবার সবচেয়ে বেশি ফোন পেয়েছি, দেশের বাইরে থেকে। এ ছাড়া ফেসবুকে সবাই তাঁদের ভালোবাসা জানাচ্ছে—এসব আমাকে আপ্লুত করেছে, নস্টালজিক করেছে।
ফেলে আসা জীবনে অনেক কিছুই করেছেন। তারপর অনেকে বলেন, আরও অনেক কিছুই করার ছিল...
জীবনে এটা–ওটা করা হয়নি, অনেক অপূর্ণতা রয়ে গেছে—এমনটা ভেবে দুঃখ করি না। বরং আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি, এতটা বছর সুন্দরভাবে পার করে এসেছি। জীবনে সফলও হয়েছি। একজন মানুষের জীবনে যা যা প্রয়োজন, আমি সবই পেয়েছি।
ছোটবেলায় কী হতে চেয়েছিলেন?
আমার মনে হয়, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি সময় মানুষের উদ্দেশ্য বদল হতে থাকে। মা–বাবার আমাকে নিয়ে হয়তো এক রকম চিন্তা ছিল। তবে ছোটবেলা থেকে আমি যেটাই করতাম, ভালো করতাম। ফুটবল যখন খেলেছি, ফুটবল টিমের ক্যাপ্টেন ছিলাম। ক্রিকেট খেলেছি, সেখানেও ক্যাপ্টেন ছিলাম। যে দলের রাজনীতি করেছি, ময়মনসিংহ বিভাগে সেই দলের জেনারেল সেক্রেটারি ছিলাম। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ইকবাল হলের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলাম। অভিনয় না শিখে ফিল্মে এসেছি, অভিনয় করেছি, অভিনেতা হিসেবে সৃষ্টিকর্তা যথেষ্ট পপুলারিটি দিয়েছে। আমি ৩৪টি সিনেমা বানিয়েছি, সেগুলোও সুপারহিট। এখন একটাই চাওয়া, চতুর্দিকে আপনজনঘেরা অবস্থায় যেন আমার মৃত্যু হয়।
বলছিলেন কখনো অভিনয় শেখেননি।
আমি সিনেমায় আসার আগে কখনো কোনো নাটক দেখিনি। অভিনয় ব্যাপারটা জন্মগত, সেটাও মনে করি না—এটা পুরোপুরি আল্লাহর রহমত।
কিন্তু শোনা যায়, পরিচালক চাইলে একজন সাধারণ মানুষকেও দারুণ জনপ্রিয় এবং অসাধারণ অভিনেতা বানিয়ে দিতে পারেন।
ওসব বাজে কথা। অভিনয়শিল্পীর মধ্যে যদি যোগ্যতা, দক্ষতা না থাকে তাহলে কোনো পরিচালকই কিছু করতে পারবে না। একজন পরিচালক কিন্তু অনেক নায়ক–নায়িকা নিয়ে কাজ করেন, সবাই কিন্তু সমানভাবে জনপ্রিয় হয় না। তার মানে শিল্পী যদি মেধাবী না হয়, পৃথিবীর কোনো ডিরেক্টরই পারে না তাকে স্টার বা সুপারস্টার বানাতে। অনেক সময় শুনি, আমিই (পরিচালক) অমুক নায়ক–নায়িকা বা অভিনয়শিল্পী তৈরি করেছি। আমি বলব, হু আর ইউ, আপনি শিল্পী তৈরি করার কে? এটা পুরোপুরি আল্লাহ তৈরি করেন। শিল্পী সব সময় নিজের গুণেই মহিমান্বিত হয়। শিল্পী তৈরির ক্ষেত্রে কখনোই পরিচালকের ভূমিকা আছে বলে আমি মনে করি না। আমার যেমন অ্যাসিস্ট্যান্ট সাত–আটজন ছিল। আমি তো সবাইকে শিখিয়েছি, শেখানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু সবাই তো ভালো পরিচালক হয়ে উঠতে পারেনি, শহীদুল ইসলাম খোকন হতে পারেনি। এটা অবশ্যই শিল্পীর নিজের একটা গুণ। পরিচালক শুধু মানুষটার মধ্যে থাকা গুণটাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করেন, দ্যাটস ইট।
আপনার এখনকার সময় কাটে কীভাবে?
পড়াশোনা করি। পড়াশোনা করেই সময় কেটে যায়।