যেভাবে করতে চাই, তারকাশিল্পীদের দিয়ে তা হয় না

সালাউদ্দিন লাভলু
ছবি : সংগৃহীত
গতকাল শনিবার দুপুরে সালাউদ্দিন লাভলুর সঙ্গে ফোনে কথা হলে বললেন, পুবাইলে আছেন। জানালেন এক বছর পর ‘মায়া’ নামের নতুন একটি ধারাবাহিক নাটকের শুটিং শুরু করেছেন। নাটকের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতির দায়িত্বেও আছেন। কয়েক দিন আগে জানিয়েছিলেন, আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না। কথা প্রসঙ্গে জানা গেল, আজ রোববার তাঁর জন্মদিন।
প্রশ্ন

নতুন যে ধারাবাহিক নাটকের শুটিং করছেন, তা সম্পর্কে আগাম কিছু ধারণা যদি দিতেন।

১০৪ পর্বের এই নাটকের নাম ‘মায়া’। একটানা শুটিং করে শেষ করার পরিকল্পনা। এটা শেষ করেই ২০৮ পর্বের আরেকটি ধারাবাহিক নাটকের শুটিং শুরু করব। দুটিই চ্যানেল আইতে প্রচার হবে। আমি এই চ্যানেলের সঙ্গেই বেশি কাজ করি। বাজেট ও শিল্পী নির্বাচনে আমাকে তারা যে স্বাধীনতা দেয়, তা দিয়ে মনের মতো নাটক তৈরি করতে পারি।

প্রশ্ন

নাটক নির্মাণে মনে হয় আটঘাট বেঁধে নামলেন?

মাঝখানে সাংগঠনিক কাজে ব্যস্ত থাকায় নির্মাণে সময় দিতে পারিনি। এখন টানা কাজ করার কথা ভাবছি। প্রতি মাসে টানা ১০ দিন শুটিং করব। সামনে একটু ছন্দপতন হবে, কারণ, ডিরেক্টরস গিল্ডের নির্বাচনে সময় দিতে হবে। এর বাইরে এনটিভির একটি রিয়েলিটি শোতে বিচারক হিসেবে আছি। এরপর পুরোদমে নির্মাণে মনোযোগ দেব।

সালাউদ্দিন লাভলু
প্রশ্ন

আপনার পরিচালনায় নতুন নাটকে কারা অভিনয় করছেন?

নতুনদের নিয়েই কাজ করছি। আমি সব সময় নতুনদের নিয়ে কাজ করতে চাই। কারণ, পুরোনোদের শিডিউল পেতে খুব কষ্ট হয়। আমি যেভাবে করতে চাই, যতটা সময় নিয়ে করতে চাই তারকাশিল্পীদের দিয়ে তা হয় না। অনেক আপস করতে হয়। তাই নতুনদের নিয়ে কাজ করাটা আনন্দের।

প্রশ্ন

চ্যালেঞ্জও তো আছে নিশ্চয়?

আমি চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করি। আমার সব কাজে তা প্রমাণিত। তবে কাজের প্রথম থেকে আমি কনফিডেন্ট থাকি। গল্প ভালো, নির্মাণ ভালো আর শিল্পী ও কলাকুশলীরা যদি আন্তরিকভাবে কাজ করেন—তাহলে মানুষ নাটক দেখবেনই। নাটক দেখার ক্ষেত্রে তারকা কোনো ব্যাপার না। গল্প ও নির্মাণই প্রধান। সবাই তো আর অভিনয় ক্ষমতা নিয়ে জন্মায় না। আস্তে আস্তে শিখে। পরিচালকের কাজই হচ্ছে, শিল্পী তৈরি করা। তারকাশিল্পী নিয়ে কাজ করার মধ্যে কোনো বাহাদুরি নেই। তার প্রমাণ হিসেবে বলতে পারি, আমার পরিচালনায় তৈরি ‘সোনার পাখি, রূপার পাখি’ এবং ‘প্রিয় দিন প্রিয় রাত’ ধারাবাহিক নাটক দুটির কথা।

সালাউদ্দিন লাভলুর সঙ্গে ‘সোনার পাখি রূপার পাখি’ নাটকের অভিনয়শিল্পী ফারজানা চুমকী ও তাহমিনা সুলতানা মৌ
প্রশ্ন

আপনি তো কয়েক দিন আগে বলেছিলেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না।

বলেছিলাম, কিন্তু এখন করতে হচ্ছে আরকি। আমার চারপাশে পরিচিতজন যাঁরাই আছেন, তাঁদের অনেকেই বলছেন, দুই বছর যেহেতু ভালোভাবে পরিচালিত হয়েছে, আগামী দুই বছর যেন সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ একটা রূপ দিই। তাই করছি।

ডিরেক্টরস গিল্ডের গতবারের নির্বাচনের দিন সালাহউদ্দিন লাভলু, এস এ হক অলিক, মোহাম্মদ মুস্তফা কামাল রাজ ও সৈয়দ আওলাদ
প্রশ্ন

একটিমাত্র ছবি বানিয়েছেন। ব্যবসাসফল ও দর্শকপ্রিয় সেই ‘মোল্লাবাড়ির বউ’ ছবির পর আর ছবি বানাননি কেন?

‘মোল্লাবাড়ির বউ’ বানানোর পর কোনো প্রযোজকের কাছ থেকে সহযোগিতা পাইনি। দুটো ছবির গল্প একদমই রেডি। কয়েকজন আগ্রহ দেখিয়েছিলেনও। কিন্তু যে পরিমাণ বাজেটের কথা বলেন, তাতে আমার ছবি হবে না।

সালাউদ্দিন লাভলু
প্রশ্ন

আপনার ছবি দুটি বানাতে কি পরিমাণ বাজেট লাগতে পারে?

প্রতিটি ছবির বাজেট দেড় থেকে দুই কোটি টাকা হলেই বানাতে পারব। আপস করতে চাই না।

প্রশ্ন

আপনি অভিনয়ও করেন। কিন্তু নিয়মিত নন?

অভিনয়টা আমি কখনোই উপভোগ করি না। আমার কাছে অভিনয় খুবই কষ্টসাধ্য মনে হয়। নিয়মিত অভিনেতা হতেও চাই না। নির্মাণটা অনেক বেশি পছন্দের, উপভোগ করি। আমি অভিনয় গেলেও ডায়ালগ দেওয়ার সময় চোখ কো-আর্টিস্ট ঠিকমতো রিঅ্যাকশন দিচ্ছে কি না, তা খোঁজে। সারাক্ষণ নির্মাণই মাথায় থাকে।

প্রশ্ন

তাহলে ‘স্বর্ণমানব’–এ কাজ করলেন কেন?

এই টেলিছবির শুটিং সুন্দরবনসহ গভীর সমুদ্রে হয়। পরিচালককে বলেছিলাম, গভীর সমুদ্রে হলে যেন আমাকে ডাকে। তা ছাড়া এই টেলিছবির আবু হায়াত মাহমুদকে আমি ভীষণ পছন্দ করি। অনেক ভদ্র ছেলে, ভালো পরিচালক, সিনসিয়ার। তাঁর প্রযোজকও আমার পছন্দের। সবকিছু মিলে ফ্রিও ছিলাম, তাই করে ফেললাম।

স্ত্রী ফারজানা রওশনের সঙ্গে সালাউদ্দিন লাভলু
প্রশ্ন

আজ তো আপনার জন্মদিন। কীভাবে কাটবে?

১০-১২ বছর ধরে জন্মদিনে কোনো না কোনো শুটিংয়ে থাকি। এটা আমি উপভোগও করি। কারণ, শুটিংয়ের ওরা আমার দ্বিতীয় পরিবারের সদস্য। জন্মদিনে শুটিংয়ে থাকলে স্ত্রী-সন্তানেরাও চলে আসে। কাছের কয়েকজন বন্ধুও আসে। গতকাল শুটিং শেষে বাসায় চলে গিয়েছিলাম। প্রথম প্রহরটা বাসার সবার সঙ্গে কেটেছে। সকাল সকাল শুটিং স্পটে চলে এসেছি। সারা দিন এখানেই কাটবে।

প্রশ্ন

আপনার মতে, মানুষের জন্মের সার্থকতা কিসে?

কর্মে ও মানুষের ভালোবাসায়। আমি তো মনে করি, একটা মানুষের এটাই ভাবা উচিত—মৃত্যুর আগে আমি মানুষের ভালোবাসা পেলাম কি না। কী কাজ রেখে যেতে পারব। দেশ ও মানুষের কাজে কতটা আসতে পারব।

স্ত্রী ফারজানা রওশন, মেয়ে রূপ ও ছেলে রোশানের সঙ্গে সালাউদ্দিন লাভলু
প্রশ্ন

কখনো কি ভেবেছিলেন, অভিনয়ে আসবেন?

আমার বাবা মোহাম্মদ সদরউদ্দিন ছিলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, মা রোকেয়া খাতুন ছিলেন স্কুলশিক্ষিকা। মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ, কোনো স্বপ্নও দেখিনি। ভাবছিলাম, পড়াশোনা শেষে চাকরি করব। অভিনয়ে আসব, মঞ্চে ও টেলিভিশনে কাজ করব, পরিচালনা করব—স্বপ্নেও ভাবিনি। ১৯৭৭ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে ঢাকায় আসার পর আরণ্যকে যোগ দেওয়ার পর আমার চিন্তাধারা সব বদলে যায়। মামুন ভাইয়ের (মামুনুর রশীদ) সঙ্গে পরিচয়ের পর আমার জীবনের দর্শন তৈরি হলো, বেঁচে থাকার মানে তৈরি হলো। নাটক যে শুধু বিনোদন না, দেশ-জাতি-সমাজকে বদল করা যায়, তা শিখেছি। সেই সামাজিক দায়বোধ থেকে নাটকে কাজ শুরু করা। এরপর আর বের হতে পারিনি।

প্রশ্ন

বিনোদন অঙ্গনে কাজের ক্ষেত্রে আপনার পরিবার কতটা সহায়ক ছিল?

আমার পরিবার থেকে কখনোই বাধা আসেনি। যখন যা করতে চেয়েছি, তাতে সায় ছিল। আমার মা–বাবা দুজনই হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান করতেন। তাঁরা চেয়েছিলেন, তাঁদের পাঁচ ছেলের মধ্যে কেউ একজন সংস্কৃতি অঙ্গনের সঙ্গে যুক্ত থাকুক। পরে বিবাহিত জীবনে আমার স্ত্রী ফারজানা রওশনও আমাকে সাপোর্ট দিয়ে গেছে এবং যাচ্ছে।

সালাউদ্দিন লাভলু
প্রশ্ন

আপনার ছেলেমেয়ের কি বিনোদন অঙ্গনে আগ্রহ আছে?

আমার এক ছেলে, এক মেয়ে পড়াশোনা করছে। ছেলে রোশান এ লেভেল পড়ছে, মেয়ে রূপ ক্লাস নাইনে। তারা দুজন পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। মেয়েটা ছোটবেলা থেকে ভরতনাট্যম শিখেছে। ছেলের অভিনয়ে আগ্রহ আছে। আমি বলেছি, আগে পড়াশোনা শেষ করো, তারপর যা ইচ্ছে করো।