লেখক, নির্দেশক, পরিচালক ও অভিনেতা আজাদ আবুল কালাম। ‘মুখোশ’ ছবিতে তাঁর অভিনয় প্রসংশিত হয়েছে। শুক্রবার মুক্তি পাচ্ছে তাঁর অভিনীত ‘গুণিন’ ছবিটি। মঞ্চ, টেলিভিশন ও সিনেমাতে কাজ করা এই শিল্পী কথা বললেন বর্তমান ব্যস্ততা নিয়ে।
‘মুখোশ’ ছবিতে আপনার চরিত্রটি নিয়ে বলুন...
লেখকের চরিত্র আমি আগেও করেছি বেশ কয়েকটা টেলিভিশন নাটকে। এই লেখকের চরিত্রটা একটু আলাদা মনে হলো। এই লেখক পর্দার অন্তরালে আছে। একধরনের বন্দী। তাঁর লেখা দিয়ে আরেকজন নাম কুড়াচ্ছে। এখানে একটু চরিত্রটা আলাদা মনে হলো। ওই লেখক একজন শুদ্ধাচারী মানুষ। আমাদের দেশে এই টাইপের মানুষ কমে যাচ্ছে। যার সব ব্যাপারে সততার জায়গা আছে। এই মানুষগুলোর সংখ্যা খুব কম। আমার কাছে মনে হয়েছে, চরিত্রটি এ ধরনের মানুষের একটা রিপ্রেজেন্টেশন। সত্যিকার অর্থেই সৎ, চরিত্রবান, লোভী নয়—এমন একটি চরিত্রের রিপ্রেজেন্টেশন। এ কারণেই আমার কাছে মনে হয়েছে চরিত্রটি আলাদা।
চরিত্রটি করার ক্ষেত্রে বাস্তবের কাউকে অনুসরণ করেছেন?
বাগাড়ম্বরপূর্ণ লেখকও আছেন, নিভৃতচারী লেখকও আছেন। পার্টিকুলার কোনো লেখককে ফলো করেছি তা নয়। শুধু আর্নেস্ট হেমিংওয়ে আমার মাথায় ছিল। তিনি খুবই নিভৃত জীবন যাপন করেছেন। এটা বলা যেতে পারে।
চরিত্র পছন্দের ক্ষেত্রে কোন বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দেন?
চরিত্রটি যেন পূর্ণাঙ্গ হয়। বেশির ভাগ চরিত্রকে হাফ মনে হয়। আগা নেই মাথা নেই। চরিত্র দেখলে মনে হয় যেন কোথা থেকে এসেছে! স্বর্গ থেকে ধাপ করে পড়েছে অথবা নরক থেকে এসেছে—এ রকম না মনে হলে চরিত্রটি পূর্ণাঙ্গ মনে হলে, নেগেটিভ না পজেটিভ এগুলো ভাবি না। কত বড় চরিত্র, সেটাও ভাবি না। যৎসামান্যও যদি হয়, একটা দুটো সিন; তা–ও আমি করি।
‘গুণিন’ মুক্তি পাচ্ছে আগামী শুক্রবার। সেখানে গুনিন চরিত্রেই অভিনয় করেছেন আপনি? সেই ছবিতে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা জানতে চাই।
কঠিন অভিজ্ঞতা। গুনিন চরিত্রটা হাসান আজিজুল হকের লেখার কারণে অন্য রকম মাত্রা পেয়েছে। ওই লোকটার বয়স কত কেউ জানে না। কেউ বলে এক শ বছর। গল্পে সে জিন পালে। ঝাড়ফুঁক দেয় আরকি। তাঁকে মানুষ ভয় পায়। তাঁর অপার্থিব কিছু ক্ষমতা আছে, মানুষ এমনটা মনে করে। প্রথমেই ওই বয়সটাকে ধরা খুব কঠিন ছিল। যেটা আমাদের মেকআপ ম্যান মিলন ও আমি সে অর্থে বলতে গেলে এই দুজন অনেক চেষ্টা করেছি। কারণ, চুল–দাড়ি সব সাদা করা। কারণ, ওই চুল–দাড়ি সব ছিল রিয়েল। প্রস্তুতিও ছিল অনেক দিনের। এখানে প্রস্থেটিক মেকআপ ব্যবহার করা হয়েছে। মেকআপ নিতেই লাগত চার ঘণ্টা। আর তুলতে লাগত এক থেকে দেড় ঘণ্টা।
এটা তো খুব কঠিন কাজ ছিল...
শুধু তা–ই না, বলা হয় যে স্টুডিওতে এই মেকআপ নিয়ে থাকা যায় ছয় ঘণ্টা। আমাদের দেশের বাস্তবতা ভিন্ন। আমরা করেছি আউটডোরে। ১০–১২ ঘণ্টা থাকতে হয়েছে। আমি রাত তিনটায় মেকআপে বসতাম। সকাল সাতটায় মেকআপ শেষ হতো। এটা ছিল বহিরাঙ্গের। আর অন্তরের ব্যাপারটাকে ধরাও ছিল কঠিন। গুনিন টাইপের চরিত্র আমরা আশপাশে অনেক দেখেছি। এ ধরনের ঝাড়ফুঁক দেওয়া লোক, জিন আনতে পারে—এ ধরনের গুনিন আমরা দেখেছি। কিন্তু গুনিনের ভেতর দেখাটা কঠিন। সে কেন এমন হয়েছে? এটা একটা বড় কঠিন জার্নি ছিল আমার। এক শ বছর বয়সী ওই গুনিন চরিত্রে অভিনয় করা কঠিন ছিল।
লেখা, নির্দেশনা, পরিচালনা ও অভিনয়—সব ক্ষেত্রেই আপনি কাজ করেন। কোন কাজটিতে সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য পান?
সব কাজ একই মনে হয়। অভিনয় যখন করি, মনে হয় একই কাজ। লিখতে বসলে মনে হয় এটাই সেরা কাজ। নির্দেশনা যখন দিই, তখন মনে হয় এটাই বড় কাজ। আসলে আমি বুঝি, সব কাজ কোনো না কোনোভাবে একটার সঙ্গে রিলেটেড। কারণ, যে কয়টা কাজ করি, সব কটিই একটা আরেকটার সঙ্গে যুক্ত। আমি মনে করি, কবিতার সঙ্গে সিনেমার প্রচণ্ড মিল আছে। সেলুলয়েডে কবিতা বলতে পারা। আবার যদি ধরি লেখা। লিখতে গেলে আপনি সবকিছু দেখছেন কল্পনায়। সবকিছু নিয়ে আমি আসলে কাজ করি। আমি মনে করি, সব বিষয়ে আমার দক্ষতা নিয়ে কনফিডেন্স আছে তা নয়, তবে আমি এনজয় করি।
মঞ্চ, টেলিভিশন, সিনেমা—সবকিছুতেই কনটেন্টের চেয়ে নির্বাচন, দুর্নীতি, নেতৃত্ব; এসব নিয়ে আলোচনা বেশি। এই তিন ইন্ডাস্ট্রিতেই আপনি কাজ করছেন। কী সমস্যা ধরা পড়ে আপনার কাছে?
আমাদের যে কনটেন্ট অনেক বেশি, তা–ও না। আমাদের দেশে সবকিছু একদমই প্রাথমিক পর্যায়ে। এই জিনিসটা বুঝতে আমরা একটু ভুল করি। সিনেমা, নাটক—সবকিছুই আমার কাছে একদমই প্রাথমিক পর্যায়ের মনে হয়। থিয়েটার তো বটেই। পাশাপাশি সিনেমা ধারাবাহিকভাবে আগায়নি। যে ভালো সময়টা ছিল; পরিবারের লোকজন গিয়ে সিনেমা দেখে—এ অবস্থা যদি থাকত, তাহলে আজকে যাঁরা সিনেমা বানাচ্ছেন, তাঁরা অনেকগুলো অ্যাডভান্টেজ পেতেন। এখন অনেক প্রতিভাবান ছবি বানাচ্ছেন। বোঝা যায়, তাঁদের বড় কিছু করার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু এই জেনারেশনটাকে সিনেমা বানানো আবার শুরু করতে হয়েছে। এটা একটা সমস্যা। আর ইলেকশন–টিলেকশন কী কী যেন হয় টয়...এগুলো আসলে খুব আননেসেসারি। কাজের চেয়ে অকাজের প্রতি ঝোঁক। কাজকে যাঁরা গুরুত্ব কম দেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এসব বেশি হয়। কাজের অপরিহার্য অঙ্গ হিসেবে যদি কিছু আসে ভালো। কিন্তু অপ্রয়োজনীয় অঙ্গগুলো যখন কাজের চেয়ে ইম্পরট্যান্ট হয়ে যায়, তখন বোঝা যায় এটা পুরোটাই একটা দুরভিসন্ধি। দুরভিসন্ধি কার আমি জানি না।
মঞ্চের নির্দেশনা কী দিচ্ছেন?
মঞ্চে একটা কাজ শুরু করেছি। অচলায়তন নিয়ে কাজ শুরু করেছি। মহড়া শুরু হয়েছে।