>নাটক, বিজ্ঞাপনচিত্র, মিউজিক ভিডিওতে অভিনয় করে অল্প সময়েই মিডিয়ায় নিজের জায়গা করে নেন মডেল এবং অভিনেত্রী সুজানা জাফর। প্রায় ১৬ বছর কাজ করে সম্প্রতি অভিনয় ক্যারিয়ারকে বিদায় জানালেন তিনি। মিডিয়া থেকে বিদায় নেওয়াসহ নানা প্রসঙ্গে দুবাই থেকে কথা বললেন তিনি।
হঠাৎ অভিনয় ছেড়ে দিচ্ছেন কেন?
হঠাৎ নয়, ২০১৮ সালের নভেম্বর মাস থেকে আস্তে আস্তে নিজেকে সরিয়ে নিতে শুরু করেছি। গত তিন বছর নিজের ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত হওয়ার পর মনে হয়েছে, মিডিয়া ও ব্যবসা—দুটো একসঙ্গে চালিয়ে নেওয়া অসম্ভব। সে জন্য অভিনয় থেকে দূরে সরে ব্যবসা গোছানোয় বেশি সময় দিয়েছি। ব্যবসাটা একটু দাঁড়িয়ে গেলে একটি নাটক ও একটি মিউজিক ভিডিওর শুটিং করি। তখনই চিন্তা ছিল, বেছে বেছে বছরে একটি বা দুটি কাজ করব। পরে একটা গ্যাপ তৈরি হয়ে গিয়েছিল। শুটিংয়ে গিয়ে শুনতে পাচ্ছিলাম, মিডিয়ার পরিবেশ বদলে গেছে।
অনলাইনে অনেকে প্রশ্ন ও মন্তব্য করেছেন, আপনি নাকি বিয়ে করার জন্য অভিনয় ছাড়ছেন। এটাও কি অন্যতম কারণ?
মোটেও সে রকম নয়। বিয়ে করার জন্য মিডিয়া ছাড়ার প্রশ্নই আসে না। জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে—এগুলো নিয়তির হাতে। বিয়ের সঙ্গে মিডিয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। যখন বিয়ের সময় হবে, তখন বিয়ে করব, সেটা সবাই জানবে। বিয়ে তো লুকানোর কিছু নয়। বিয়ে হলে অন্তত ফেসবুকে সেটা জানান দেব। বিয়ের বিষয়টা আমি বিধাতার হাতে ছেড়ে দিয়েছি। বিয়ে নিয়ে চিন্তা করি না।
আপনি তো এখন শুটিং করছেন না, তো এখনই এই ঘোষণা দেওয়ার কোনো কারণ আছে?
লকডাউনে তিন মাস দুবাইতে আটকে আছি। এই সময়ে বাসায় থেকে মানুষ বোর হচ্ছে। যে কারণে অনেকেই টিভি সিরিজ দেখছে, নেটফ্লিক্সে মুভি দেখছে। কিন্তু আমার ভেতর এসব কাজ করছে না। আমাদের দেশের মানুষ, বিভিন্ন দেশে আমাদের প্রবাসী ভাইদের নিউজ দেখে খারাপ লাগত। অনেকেই খুব কষ্টে আছেন। এসব দেখে তাঁদের জন্য দোয়া করতাম। শুধু তা–ই নয়, আমি তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছি। এই সময় আমার মধ্যে কিছু উপলব্ধি তৈরি হয়, মনে হয় মিডিয়াটা আমার জন্য নয়। তখন সিদ্ধান্ত নিই, আর অভিনয় করব না। ধার্মিক মানুষের মতো জীবন যাপন করব এবং ব্যবসাটাই চালিয়ে যাব।
শুনেছি সে সময় আপনি অনেক প্রবাসীর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন? কীভাবে জানলেন তাঁদের কথা?
শুরুতে সহযোগিতা চেয়ে আমার ফেসবুক মেসেঞ্জারে দুটি এসএমএস আসে। জানতে পারি, তাঁরা বাংলাদেশি শ্রমিক, আমার ফেসবুক-ফলোয়ার। লকডাউনের কারণে কাজ বন্ধ। খাদ্যসংকটে আছেন তাঁরা। কিন্তু আমি তাঁদের চিনি না, তাঁদের সম্পর্কে জানি না। নিশ্চিত হওয়ার জন্য তাঁদের পরিচয়পত্রের ছবি পাঠাতে বললাম। তাঁরা পাঠালেন। দেখলাম ঘটনাটি সত্য। দুবাইয়ের ডেইরা এলাকায় ১৩ জন এবং বানিয়াস এলাকায় ১৫ জন থাকেন। তাঁরা সবাই ২০ দিনের মতো ঘরবন্দী অবস্থায় ছিলেন। দেশে বিপদে পড়লে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুরা পাশে থাকেন। কিন্তু এই বিদেশের মাটিতে তাঁদের পাশে কেউ নেই। তাঁদের অসহায়ত্বের বিষয়টি সুজানার খুব খারাপ লেগেছে। জানার পরপরই তাড়াতাড়ি সুপারশপ থেকে খাবার কিনে এক কাজিনকে দিয়ে শ্রমিকদের কাছে তা পাঠিয়ে দিয়েছি। চেষ্টা করব ভবিষ্যতেও এমন অসহায় মানুষদের পাশে থাকতে। আসলে প্রবাসীদের কষ্ট দেখলে মনটা খুব কাঁদে।
মিডিয়ায় প্রায় ১৬ বছরের ক্যারিয়ারের দিকে তাকালে কী মনে হয় এখন?
আমার ক্যারিয়ার ১৬ বছর হলেও বিভিন্ন কারণে মাঝখানে ৮ বছর অভিনয় থেকে দূরে ছিলাম। এখন পেছনে তাকিয়ে সময় নষ্ট করতে চাই না। সেটা এখন অতীত। আমার একটা নীতি আছে, যখন যেটা করি, সেটা সিরিয়াসলি করি। যখন অভিনয় করেছি, তখন সিরিয়াসলি করেছি। কেউ বলতে পারবে না শুটিংয়ে কাউকে ফাঁসিয়েছি বা দেরি করে গেছি। যখন ব্যবসা করি, তখন সিরিয়াসলি করি। এখন ধর্ম-কর্ম নিয়েই সিরিয়াস থাকতে চাই। অভিনয় ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে ভক্তদের কাছ থেকে অনেক প্রশংসা পেয়েছি।
আপনি তো প্রতিবন্ধীদের নিয়েও কাজ করেছেন। ভবিষ্যতে আর কী কী করার ইচ্ছে আছে?
অটিস্টিকদের নিয়ে কাজ করছি প্রায় ৭ বছর। ব্যবসার বাইরে যদি অন্য কিছু করার সুযোগ থাকে, তাহলে বৃদ্ধ ও এতিমদের নিয়ে কাজ করব। এটা আমার নেক্সট প্ল্যান। এগুলো আমার শৈশব থেকেই করার ইচ্ছা। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে আমার ভালো লাগে। অনেকেই আছেন এসব কাজ করে ঢাকঢোল পেটান। কিন্তু আমি নিজের পাবলিসিটি করি না। আমি এক দিন, এক বেলা, এক সপ্তাহ, এক মাসের জন্য মানুষের পাশে দাঁড়াই না বা এভাবে সংখ্যা বাড়াতে চাই না। আমি যাকে হেল্প করি, সে যেন সব সময় আমার কাছ থেকে হেল্প পায়, সেই চেষ্টা করি।
দেশে ফিরছেন কবে?
দুবাইতে এখনো লকডাউন চলছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই ফিরব। এখন ঢাকার যে অবস্থা, ফ্যামিলির কাছে যাওয়াটাও মনে হয় নিরাপদ নয়। এখানে আমার খালারা থাকেন। মা আগামী মাসে দুবাই আসবেন।