বিস্তারিত বলে কাউকে ছোট করতে চাই না

আজ রাতে মাছরাঙা টেলিভিশনে প্রচারিত হবে ধারাবাহিক নাটক অদল বদল–এর শততম পর্ব। এই নাটকে অভিনয় করেছেন জাহিদ হাসান। নাটকটিসহ অন্যান্য প্রসঙ্গে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় কথা হলো তাঁর সঙ্গে।

প্রশ্ন

কোথায় আছেন?

উত্তরায়। ঈদের এক ঘণ্টার নাটকের শুটিং করছি। বিটিভির জন্য তৈরি এই নাটকের নাম রিটার্ন টিকেট, প্রযোজক মাহবুবা ফেরদৌস।

জাহিদ হাসান
প্রশ্ন

শুটিং করছেন যেহেতু, নিশ্চয় ভালো একটা গল্প। কতটা ভালো যদি বলতেন?

খারাপ গল্পেও অনেক সময় কাজ করতে হয়। মাতিয়া বানু শুকু গল্প লিখেছেন। ছয়–সাতজন আর্টিস্ট, তাঁরাও ভালো ভালো।

প্রশ্ন

মাঝেমধ্যে খারাপ গল্পে কাজ করা হয় কেন?

অত বিস্তারিত বলে কাউকে ছোট করতে চাই না। সবাই তো আমাদের লোক। খারাপ গল্পে কাজ করা হয়, কারণ অনেক সময় সবকিছু হয়েও ওঠে না। উপায়ও থাকে না। আমাদের এখানে ভালো গল্পের অভাবও আছে। নাই মামার চেয়ে এখন কানা মামা ভালো হয়ে গেছে টাইপ ব্যাপার চলছে।

প্রশ্ন

অভিনয় যেহেতু পেশা, তাই অভিনয়ের সঙ্গে থাকতে হবে বলেই এমনটা করছেন?

পেশার জন্য কিছুটা আছে। আর কিছুটা হচ্ছে সমষ্টিগত, কমিটমেন্ট, একসঙ্গে থাকার ব্যাপার। বিষয়টা অনেকটা বাজেটের মতো, এই খাত, ওই খাত—সবকিছু অল্প অল্প করে যেমন বাজেট হয়, তেমনি ভালো গল্প ও খারাপ গল্প মিলিয়ে কাজ করা হয়।

জাহিদ হাসান
প্রশ্ন

এবারের ঈদের কাজ কী পরিমাণ করছেন?

খুবই কম। গত রোববারও কয়েকটা গল্প পেয়েছি, পছন্দ হচ্ছে না। ওই যে একই রকম গল্প, হয় এলাকার বড় ভাই। না হয় গল্পে আপনি টিকটক করবেন, আপনার ফলোয়ার বাড়বে—কেমন জানি। উদ্ভট গল্প। এগুলো ভালো লাগে না। পরিচালকদের বলেছি, কী করব বলো তো, ভাই। যাও করব না। যখন অনেকে বলে, ‘না করলে আমরা চলব ক্যামনে।’ এ রকম অনেক ঘটনা আছে।

প্রশ্ন

উদ্ভট গল্পের প্রস্তাব বেশি?

কেমন জানি টেনডেন্সি—সবাইকে হাসাতে হবে। আমাদের জীবনের যে অনেক গল্প আছে, সেদিকটায় তাকাচ্ছি না। তা ছাড়া প্রত্যেকটা মানুষের একেকটা বয়স আছে না। বয়সের ওপর অসাধারণ সব গল্প হয়। আমরা তো সমাজের মধ্যে বিলং করি। উদ্ভট সব গল্প নিয়ে ভাবতে গিয়ে সমাজ থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। এ জন্য এখন নাটকও দেখছে না কেউ। কারণ, জীবনের সঙ্গে মিল খুঁজে পাচ্ছে না। এখনকার নাটকে তাই সমাজের কোনো প্রতিফলন পাওয়া যাচ্ছে না।

জাহিদ হাসান
প্রশ্ন

কী কারণে এমনটা হচ্ছে?

আমাদের এখানে গুণী লেখকের অভাব। আরেকটা বিষয়, যে কয়েকজন আছেন, তাঁদের অনেক ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। একটা নাটকের গল্প লিখে যে পরিমাণ অর্থ পাওয়ার কথা, সেটাও পাচ্ছেন না। তাঁদের একাধিক কাজ করতে হচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে তাঁরাও মানসম্মত গল্প দিতে পারছেন না।

প্রশ্ন

গুণী লেখকের অভাব, নাকি গুণীদের সুযোগ কম? অনেকে তো আবার সিন্ডিকেটের কথাও বলেন।

সিন্ডিকেট শব্দটা আমি উচ্চারণ করব না। এটা ব্যাড অর্থে ব্যবহৃত হয়। সব সময় কারও না কারও সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকতেই পারে। যখন একজন ভালো রাইটার, তাঁকে ভালো অর্থ দিতে হবে। ভালো অর্থ দিতে ভালো বাজেট লাগবে। শুটিংও বেশি দিন ধরে করতে হবে। কথার কথা, এখন কাউকে দেওয়া হলো দুটি রুটি, লোকসংখ্যা হলো ২০, তাহলে তো হবে না। আমাদের নাটকের অবস্থা এখন ঠিক এই অবস্থায় আছে। আমার কাছে কষ্ট লাগে তখন, একটা টেলিভিশন চ্যানেল যখন নাটক থেকে কত টাকা পাবে, হিসাব করে, ইউটিউব থেকে কত পাবে, তা নিয়ে ভাবে বেশি—এটা খুবই দুঃখজনক। ইউটিউব তো একটা পার্ট। আগে তো ইউটিউব ছিল না, নাটক থেকে লাভ হয়নি সবার?

জাহিদ হাসান
প্রশ্ন

আজ আপনার অভিনীত ‘অদল বদল’ নাটকের শততম প্রচার। টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক প্রচারের পর কেমন সাড়া পান?

আগে তো নাটকের ১০০ পর্ব হতোই না। ২৬ পর্বের বেশি নাটক খুব কমই হয়েছে। তারপর ধীরে ধীরে যখন প্যাকেজ এল, ১০০–১৫০ পর্ব প্রচার হতে লাগল, উৎসবের মতো লাগত। সবাই দেখত। এখন এই যে ১০০ পর্ব যাচ্ছে, অন্য চ্যানেলেও কয়েকটা নাটক চলছে, তারপরও অনেকেই কিন্তু বলেন, ‘আপনি এখন নাটক করছেন না কেন?’ কারণ, তাঁরা নাটক দেখছেন না। অথবা আমারটা যখন প্রচারিত হচ্ছে, তখন তাঁরা অন্য কিছু দেখছেন। বেশির ভাগ মানুষ তো টেলিভিশনই দেখে না। খুব অল্প লোকে টেলিভিশন দেখে। বেশির ভাগই এখন মুঠোফোনে সবকিছু দেখে। টেলিভিশন দেখে যখন নেটফ্লিক্স দেখে বা খুব জরুরি খবর হয়, তখন দেখে। তা–ও কম দেখে। খেলা বা রিয়েলিটি শো থাকলে দেখে।