দুই বছর পর শনিবার ঢাকার একটি মঞ্চে গাইলেন ডলি সায়ন্তিনী। অথচ একসময় সংগীতাঙ্গনে এই শিল্পীর বিচরণ ছিল নিয়মিত। তারপর হঠাৎ করেই কমে যায় তাঁর কাজ। কী কারণে এখন অনিয়মিত এবং নতুন পরিকল্পনাই–বা কী, এসব নিয়েই কথা বললেন সংগীতশিল্পী
দুই বছর পর মঞ্চে ফিরে কেমন লাগল?
স্টেজই একজন শিল্পীর প্রধান জায়গা। শিল্পী প্রাণশক্তি পায় এই জায়গা থেকেই। সত্যি কথা বলতে কি, করোনায় যে অবস্থা হয়েছিল, ভাবতেই পারিনি আবার স্টেজে ফিরতে পারব। ভীষণ ভালো লেগেছে। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে সবাই শেষ গানটি শোনার সময় পর্যন্ত বসে ছিলেন। এই যে ভালো লাগা, ভালোবাসা—এটার তুলনা হয় না।
সামনে নতুন স্টেজ শো কী?
নতুন শোর ব্যাপারে কথা হচ্ছে, তবে চূড়ান্ত নয়। তবে কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেলে সরাসরি গানের অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়ে আছে। গেল বৃহস্পতিবারও দুটি চ্যানেলে দুপুরে ও রাতে গাইলাম। বেশ কয়েকটি নতুন গানও গাইছি। কয়েকটি সাউন্ডেটেক থেকে, বাকিগুলো আমার ইউটিউব থেকে আসবে। গানে এখন অনেক নিয়মিত।
একটা সময় স্টেজ, প্লে–ব্যাক এবং অডিওতে আপনার ব্যস্ততা ছিল অনেক।
মানুষের এক অবস্থা তো সারা জীবন থাকে না। উদাসীনতাও ছিল। তবে শেষের দিকের কথা যদি বলি, নিজে থেকেই বিরতি নিয়েছিলাম। গানবাজনাই ছেড়ে দেব, এমন একটা পরিকল্পনাও ছিল।
মত পরিবর্তনের কারণ কী?
করোনায় আমি ফেসবুকে সক্রিয় হই। এই সময়ে আমার ফেসবুক ফ্যানপেজে ভক্তদের অনুরোধ উপেক্ষা করতে পারিনি। অনেক মেসেজ পড়ে আবেগপ্রবণ হই। করোনার সময় তাই ভাবলাম, একটা গান করিই না। একটা গান করে ইউটিউবে দিলাম, যে সাড়া পেলাম, তা আমাকে ভীষণ গতি এনে দিয়েছে। শ্রোতারা এখনো আমার নতুন গান শুনতে চান। চিন্তা করলাম, দর্শকদের এভাবে ঠকিয়ে লাভ নেই।
অনিয়মিত হওয়াটা কি শুধুই উদাসীনতা, নাকি অন্য কারণও ছিল?
বঞ্চিতও হয়েছি। এখন বুঝি আমি পলিটিকসের শিকার। নতুন করে কাজে ব্যস্ত হওয়ায় তা কানে আসছে। কে বা কারা আমাকে বাদ দিয়েছে, দেওয়ার চেষ্টা করেছে—কিছুটা কানে আসে, কিন্তু পাত্তা দিই না। এই ইন্ডাস্ট্রিতে ছদ্মবেশী কাছের মানুষ দ্বারাই বঞ্চিত হয়েছি। এখন আমি বোবার শত্রু নেই, এই থিওরি মেনে চলছি। এই ইন্ডাস্ট্রিতে নোংরা রাজনীতি সব সময় ছিল, কিন্তু এসব বেশি দিন থাকে না। যোগ্যতা থাকলে পলিটিকসে কাউকে দাবায়ে রাখা যায় না।
এসব খবর কানে এলে কেমন লাগে?
ভীষণ মন খারাপ হয়। আমার কথা হচ্ছে, আমরা তো পলিটিকস করতে আসিনি, এসেছি গান করতে। আর কারও জায়গা কেউ নিতে পারে না। পলিটিকস করে সাময়িক হয়তো কেউ এগোতে পারে, সারা জীবন পারে না। আমাদের সিনিয়রদের মধ্যেও তো পলিটিকস হয়েছে। মিতালি মুখার্জি তো পলিটিকসের শিকার হয়ে বাংলাদেশই ছেড়ে দিলেন।
মিতালি মুখার্জি পলিটিকসের শিকার হয়ে বাংলাদেশ ছেড়েছেন, নিশ্চিত হলেন কীভাবে?
আমি তো এই অঙ্গনেরই মানুষ। অনেক বছর ধরে কাজ করেছি। আমি সবার কাছ থেকে শুনেছি। সবাই জানেনও।
এতে লাভ কী হয়েছে?
কার কী হয়েছে জানি না, তবে বাংলাদেশের অনেক লস হয়েছে। উফ্, কী যে সুরেলা কণ্ঠ। তাঁর গানগুলো শুনলেই মনে দোলা দেয়। আমি নিজেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁর অনেক গান গাই। ভালো শিল্পী যত বেশি থাকবে, ততই দেশের লাভ। এতে ভালো মানের কাজের সংখ্যাও বাড়বে। কারও জায়গা কেউ নিতে পারে না। যার যোগ্যতা যতটুকু আছে, ততটুকই সে পাবে।
আপনি কাদের দ্বারা কোণঠাসা হয়েছেন?
আমার পরের যারা এসেছিল, তাদের দ্বারাই কোণঠাসা হয়েছি। তাই বলতে চাই, গান গাইতে এসে নোংরা পলিটিকসে মেধা না খাটিয়ে গান শেখার মাধ্যমে নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করো। সুরে গাওয়ার চর্চা করে যাও। যোগ্যতাটা বাড়াও, পলিটিকস করতে হলে রাজনৈতিক দলে যোগ দাও।
করোনায় গানে আবার নিয়মিত হলেন।
যত দিন পর্যন্ত সুস্থ থাকি এবং যত দিন পর্যন্ত সুরে গাইতে পারব—তত দিনই গাইব। যখন দেখব গান গাইতে গেলে বেসুরো হয়ে যাচ্ছে, নিজেই ছেড়ে দেব।
আপনার সন্তানদের মধ্যে কি কেউ শিল্পী হবে?
এই ইন্ডাস্ট্রিতে আমি যে পরিমাণ ভুক্তভোগী হয়েছি, আমার বাচ্চারা এখানে গান করবে? এসব নোংরা পলিটিকসের জায়গায় কখনোই আসতে দেব না। আমাকে অনেকেই বলেছে, ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য হলেও তোমার একটা মেয়েকে অন্তত গান করাও—কিন্তু আমি বলেছি, না। আমার তিন বাচ্চাকে অ্যাট লিস্ট আমার পেশায় আনব না। ওরা শখে গান করবে, সেটা আলাদা। আমি এত বেশি কষ্ট পেয়েছি, প্রতারিত হয়েছি, বঞ্চিত হয়েছি—তাই এই অঙ্গনকে তাদের জন্য না।