সাধারণ সম্পাদক হয়েও আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্তে প্রার্থিতা হারিয়েছিলেন জায়েদ খান। অধিকার আদায়ে এই অভিনেতা আদালতে লড়েছেন। সোমবার আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। এবার দায়িত্ব নিয়ে নিজের চেয়ারে বসতে যাচ্ছেন জায়েদ খান। নির্বাচন প্রসঙ্গে গতকাল দুপুরে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে কথা বললেন জায়েদ খান
নির্বাচনের পরের সময়গুলো কেমন ছিল?
এটা আমার জীবনের একটা ভয়ংকর অধ্যায়। কারণ, শিল্পীরা শিল্পীর বিরুদ্ধে এমনভাবে লাগতে পারে কোনো দিন ধারণাই করিনি। যেখানে আমাকে শিল্পী সমিতির চেয়ারে বসে সেবা করার কথা, সেখানে আমার খাওয়া নেই, ঘুম নেই অধিকারের জন্য আদালতে দৌড়াচ্ছি। প্রতিটি মুহূর্তে আমাকে নিয়ে চক্রান্ত হচ্ছে।
আপনি আগে থেকেই জানতেন আপনার প্রার্থিতা বাতিল হবে এবং নিপুণকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করা হবে, সেই সময় আপনি পদক্ষেপ নেননি কেন?
তাঁরা কত অবৈধ কাজ করতে পারেন, সেটা আমি পর্যবেক্ষণ করছিলাম। আমাকে তো তাঁদের পরিকল্পনা বুঝে এগোতে হবে। আমি আগেই পরিকল্পনা করলে তো তাঁরা নতুন কৌশল গ্রহণ করতেন। তখন তাঁরা চিঠি দিতেন না। তাঁরা হুট করে সিদ্ধান্ত নিয়ে আমার প্রার্থিতা বাতিল করেন, নিপুণকে অযৌক্তিকভাবে আমার পদে বসিয়ে চরম অন্যায় করেছেন। দিনের আলোকে তাঁরা রাত বানাতে চেয়েছিলেন। আমি এটুকুই বলব, আমি জায়েদ শিল্পী সমিতির সঙ্গে কোনো অন্যায় হতে দেব না।
এখন আপনার সিদ্ধান্ত কী?
আমি তো ভোটে জয়ী ছিলাম। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত। এখন সংগঠনের নিয়ম মোতাবেক আমি আমার চেয়ারে বসব। সবাইকে নিয়ে কাজ করব। যাঁরা ভোট দিয়েছেন, যাঁরা দেননি, সেটা মুখ্য কিছু নয়—সবাইকে নিয়ে কাজ করে সমিতিকে এগিয়ে নিয়ে যাব। এটাই আমার সত্যের বিজয়।
কবে থেকে আপনি দায়িত্ব বুঝে নিচ্ছেন?
আদালতের রায়ের পর সকালেই আমি সভাপতি সম্মানিত ইলিয়াস কাঞ্চন ভাইকে ফোন করেছিলাম। আর বাধা নেই। আমি আজই শিল্পী সমিতিতে বসব। আজই দায়িত্ব পালন শুরু করে দেব। ডিপজল ভাই, রুবেল ভাইসহ আমাদের পরিষদের সবাইকে নিয়েই এই দায়িত্ব পালন করব।
ইলিয়াস কাঞ্চনকে ফোন দিয়ে কী বলেছেন?
বলেছি, ভাই, আমি তো নির্বাচিত ছিলাম। হাইকোর্টের রায়ে একই পদে আমাকে বহাল রেখেছে। আমরা একসঙ্গে দায়িত্ব পালন করব। ভাই শুনে বললেন, আচ্ছা।
আপিল বোর্ড ঘোষিত সাধারণ সম্পাদক নিপুণের কাছে আপনার প্রত্যাশা কী ছিল?
তিনি নির্বাচিত নন। তাঁকে সাধারণ সম্পাদক বলা ঠিক নয়। তিনি ভোটে হেরেছেন। হার–জিত থাকতেই পারে। তিনি চাইলে আমরা একসঙ্গে শিল্পীদের জন্য কাজ করতে পারতাম। শিল্পীদের স্বার্থে এখনো সেই পথ খোলা আছে। নিপুণের উচিত আমি জায়েদ খানের গলায় জয়ের মালা পরিয়ে দেওয়া। তাঁর প্রমাণ করা শিল্পীদের মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। শিল্পীদের স্বার্থে আমরা এক।
আপনাদের প্যানেলের পরাজিত সভাপতি মিশা সওদাগর গতকাল শপথবাক্য পাঠ করালেন...এতে আপনার মন্তব্য কী?
তিনি সিনিয়র মানুষ। আগে দুবার সভাপতি প্রার্থী ছিলেন। শপথ অনুষ্ঠানে এসে নতুন সভাপতিকে দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। শিল্পীদের মধ্যে তো কোনো দলাদলি নেই। তাঁকে ফোন করেছেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি গিয়ে শপথ পড়িয়ে সভাপতির দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছেন। মিশা ভাই শিল্পীসুলভ আচরণ করে আরও বড় মনের পরিচয় দিয়েছেন।
শপথ অনুষ্ঠানকে কীভাবে দেখছেন?
আসলে আমাদের শিল্পী সমিতির সংবিধানে শপথ বলতে তেমন কিছু নেই। এটা একধরনের অঙ্গীকারের মাধ্যমে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া। তবে এই শপথ প্রতীকী হলেও গুরুত্বপূর্ণ। এটি পবিত্রতা। একজন বাদে সবাইকে শুভেচ্ছা। সবার শপথ ঠিক আছে কিন্তু নিপুণের শপথ অবৈধ। তাঁর শপথ আমি মেনে নিতে পারব না। তিনি আমাকে চক্রান্ত করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সরাতে চান। নিপুণ এই শপথের জন্য যোগ্য নন। এখানে নির্বাচিতরাই শপথ নেবেন। নিপুণ গায়ের জোরে আমার চেয়ারে বসেছিলেন।
কেন আপনার কাছে মনে হচ্ছে সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে সরিয়ে দিতে চায়?
আমি বেশি কাজ করেছি। আমি ভালো মানুষ, শিল্পীদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভালো। তাঁরা আমাকে ভালোবাসেন—এটা নিপুণ মেনে নিতে পারেননি। তাঁর জোর দাবি, যেভাবেই হোক শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পোস্ট চাই। সব জায়গায় কি আর গায়ের জোর খাটে, আমি আদালতে গিয়েছি, ন্যায়বিচার পেলাম। এতে প্রমাণিত হলো বিচার বিভাগ স্বাধীন। আলহামদুলিল্লাহ, আমি খুশি। এখন সিনেমার স্বার্থে কাজ করব।