রোশান বললেন, ‘নায়িকাদের কারও সঙ্গেই ভালো বন্ধুত্ব হয়নি। এখন যে অবস্থা, নায়িকাদের সঙ্গে ভালো বন্ধুত্ব হয়ও না। কাজ করতে অনস্ত্রিন যতটা বন্ধুত্ব হওয়ার হয়, শুটিং শেষ হলে সেই বন্ধুত্বও শেষ হয়ে যায়। সিনেমার জগতে কেউ কারও বন্ধু না। এখানে পেশাদার সম্পর্কটাই প্রাধান্য পায়।’
গত বছর একটি অনুষ্ঠানে ঢালিউডের সুদর্শন নায়ক জিয়াউল রোশানের পরিবেশনা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা। তাঁর লুক, শারীরিক গঠন আর কথা বলার স্টাইল ভালো লাগার কথাও জানান তিনি। সম্ভাবনাময় নায়ক রোশান সম্প্রতি সরকারি অনুদানের একটি সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। নতুন ছবিসহ অন্যান্য প্রসঙ্গে শুক্রবার বিকেলে কথা হলো তাঁর সঙ্গে
ফেসবুকে দেখলাম কক্সবাজারে, ঘুরতে গেলেন নাকি শুটিংয়ে?
ঘুরতে গিয়েছিলাম। করোনার কারণে লম্বা সময় ধরে ঘরে থেকে একঘেয়েমি লাগছিল। অনেক বেশি হতাশ ছিলাম। কোথাও ঘুরতে যাওয়ার জন্য ছটফট করছিলাম। সবাই যখন কক্সবাজার যাচ্ছিল, তা দেখে স্কুল ও কলেজের ১২ জন বন্ধু মিলে আমরাও গেলাম। কয়েকটা দিন কাটিয়ে এলাম। অনেক দিন পর অসাধারণ সময় কাটল।
করোনার কারণে আপনার কয়েকটি ছবি আটকে আছে?
‘মেকাপ’ আর ‘জিন’ ছবির কাজ পুরোপুরি শেষ। আর ‘ওস্তাদ’, ‘সাইকো’ আর ‘অপারেশন সুন্দরবন’ ছবির কয়েক দিনের কাজ বাকি আছে। অক্টোবরের মধ্যে এই তিনটি ছবির কাজও শেষ হবে। এর মধ্যে নতুন ছবির শুটিংও শুরু হবে।
নতুন ছবি আশীর্বাদের জন্য চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করলেন। এই ছবি আপনার আগের সব ছবি থেকে কেন আলাদা?
আমি এখন পর্যন্ত যে কয়টা ছবিতে কাজ করেছি, আশীর্বাদ তা থেকে পুরোপুরি আলাদা। কারণ, এটি পুরোপুরি মুক্তিযুদ্ধের পটভূমির একটি গল্প। এর আগে কখনোই মুক্তিযুদ্ধের গল্পে কাজ করিনি। আমি আসলে প্রতিনিয়ত নিজেকে ভাঙতে চাইছি। এই ধরনের গল্পে কাজ করলে তা সম্ভব হবে।
আশীর্বাদ ছবিতে আপনার বিপরীতে অভিনয় করবেন মাহিয়া মাহি। এর আগেও এই নায়িকার সঙ্গে কাজ করার কথা ছিল। কেন হলো না?
সত্যি কথা বলতে ব্যাটে–বলে মেলেনি। একটি ছবিতে অভিনয়ের ব্যাপারে সবকিছু একদম চূড়ান্ত হয়েছিল, কিন্তু প্রযোজকেরা কিছুটা এগোনোর পর আবার জটিলতার কারণে পিছিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত আর ছবিটাই হয়নি।
করোনার কারণে একটা লম্বা সময় ঘরে থাকার সুযোগ হয়েছে। চলচ্চিত্র নিয়ে নিজেকে কীভাবে তৈরি করেছেন?
করোনার শুরুতে তো হতাশ হয়ে পড়ছিলাম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যখন জানাল, করোনা এক-দুই বছরেও পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে না, তখন টেনশন আরও বেড়ে যায়। মনে মনে এ–ও ভাবতে থাকি, আর মনে হয় কাজ করার মতো পরিবেশ থাকবে না। পরে যখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করল, তখন আশাবাদী হতে থাকলাম। করোনায় ঘরে বসে দেশ–বিদেশের প্রচুর সিনেমা দেখেছি, ঘরে থেকে ব্যায়াম করেছি, ফিটনেস ডেভেলপ করার চেষ্টা করেছি।
বাপ্পি, সাইমন, আরিফিন শুভ, সিয়াম, ইমন, নিরব অনেকে কাজ করছেন। কাউকে কখনো প্রতিদ্বন্দ্বী মনে হয় কি?
কখনোই আমি কাউকে অন্য কারও প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করিনি। ভক্ত ও দর্শকেরা হয়তো মনে করতে পারেন, আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে। এটা ঠিক, একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা পর্দায় ঠিকই হয়। তবে আমি মনে করি, এখনো নিজেকে প্রস্তুত করার অনেক বাকি। আগের ছবি থেকে পরের ছবিতে নিজেকে কতটা এগিয়ে নেওয়া যায়, এর বাইরে কিছু ভাবি না। এর বাইরে সিয়ামের সঙ্গে একটা ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে। সাইমনের সঙ্গে বোঝাপড়া চমৎকার। ইমন-নিরবের সঙ্গে সম্পর্কটা অনেক বেশি ক্লোজ—এই আরকি।
নায়কদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না হলেও কোনো নায়িকার সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়েছে?
নায়িকাদের কারও সঙ্গেই ভালো বন্ধুত্ব হয়নি। এখন যে অবস্থা, নায়িকাদের সঙ্গে ভালো বন্ধুত্ব হয় না। কাজ করতে পর্দায় যতটা বন্ধুত্ব হওয়ার হয়, শুটিং শেষ হলে সেই বন্ধুত্বও শেষ হয়ে যায়। আসলে সিনেমার জগতে কেউ কারও বন্ধু না। এখানে পেশাদার সম্পর্কটাই প্রাধান্য পায়। তা ছাড়া সময়টা এমনই, শুটিংয়ের পর সবার সময়ও হয় না সম্পর্কটা এগিয়ে নেওয়ার। তবে পরিচালকের সঙ্গে একটা সুন্দর সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
আপনি নিজে একজন নায়ক। দেশে ও দেশের বাইরে এমন কোনো নায়ক আছেন, যাঁদের দেখে ঈর্ষা হয়?
দেশের বাইরে রণবীর কাপুরকে অন্য রকম লাগে। অসাধারণ অভিনয়। তিনি যে লেভেলের অ্যাক্টিং করেন, মুগ্ধ না হয়ে পারি না। তাঁকে দেখলে সত্যি হিংসা হয়। বাংলাদেশে শাকিব ভাই নিঃসন্দেহে অসাধারণ নায়ক, অভিনয়শিল্পী—তার তুলনা তিনি নিজে। ইম্প্রেসিভও বলতে পারেন। চঞ্চল ভাই ও মোশাররফ করিম ভাইয়ের অভিনয় প্রতিনিয়ত আমাকে মুগ্ধ করে। খেলাচ্ছলে যেভাবে অভিনয় করেন, তা মনে বিস্ময় জাগায়।
নায়ক রোশানের কোনো নায়িকাকে দেখলে আলাদা আগ্রহ তৈরি হয়?
দেশের কোনো নায়িকাকে দেখলে বাড়তি আগ্রহ তৈরি হয় না। কারণ, কমবেশি সবারই সঙ্গে কাজ করা হয়েছে। ভারতের দক্ষিণী ছবির নায়িকা রাকুল প্রীতকে দেখলে ভাবি, ইশ্ ওর সঙ্গে যদি পর্দায় শেয়ার করতে পারতাম।
এবার ভিন্ন প্রসঙ্গ। আপনার বাবা নুরুল হক ভূঁইয়া লম্বা সময় ধরে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছেন। এলাকায় তিনিও পরিচিত। আপনি নায়ক হওয়ার পর আপনার এলাকায় কে বেশি জনপ্রিয়, রাজনীতিবিদ বাবা নাকি নায়ক ছেলে রোশান?
আমাদের এলাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া, আমার বাবা তিনবারের চেয়ারম্যান ও দুবারের পৌরসভা মেয়র। নায়ক হওয়ার আগে রাজনীতিবিদ বাবার ছেলে হিসেবে সবাই আমাকে চিনত। সিনেমায় কাজ করার পর আমার নিজেরও একটা পরিচিতি তৈরি হয়েছে। এলাকার তরুণেরা আমাকে খুব ভালোবাসেন। আব্বুর বন্ধুরাও রোশানের বাবা বলে। আব্বুর বন্ধুরা আমি নায়ক হয়েছি, তাতে বেশ খুশি। আমার খুব ভালো লাগে, যখন আব্বুর বন্ধুরা দল বেঁধে আমরা ছবি দেখতে সিনেমা হলে যান। মুক্তির প্রথম দিনই তাঁরা ছবি দেখতে যান। আমার নামে আব্বুকে ডাকলে বেশ খুশি হন, এটা বুঝতে পারি।