দেশের বেশ কয়েকটি প্রেক্ষাগৃহে আজ শুক্রবার মুক্তি পাচ্ছে ‘বিশ্বসুন্দরী’ ছবিটি। চয়নিকা চৌধুরী পরিচালিত এই ছবিতে অভিনয় করেছেন চম্পা। এ ছবির মধ্য দিয়ে অনেক দিন পর আবার বড় পর্দায় দেখা দিয়েছেন তিনি। ছবিসহ নানা প্রসঙ্গে কথা হলো তাঁর সঙ্গে।
দীর্ঘ বিরতি ভেঙে প্রেক্ষাগৃহে আপনার ছবি মুক্তি পাচ্ছে। কেমন লাগছে?
কোনো অনুভূতি নেই। তবে এই সময়ে একটা ভালো ছবি মুক্তি পাচ্ছে ভেবে কিছুটা দুশ্চিন্তা হচ্ছে। মহামারিতে সব শ্রেণির দর্শক ছবিটি দেখতে পারবেন না বলে খারাপ লাগছে। তারপরও আশা করব, দর্শকেরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে সপরিবার প্রেক্ষাগৃহে যাবেন।
কেন দর্শক হলে গিয়ে ছবিটা দেখবেন?
এই ছবির গল্পটা একেবারেই অন্য রকম। আমার নিজের চরিত্রটাও অসাধারণ। ভিন্ন মেজাজের ভিন্ন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেছি। দীর্ঘ অভিনয়জীবনে এমন চরিত্রে অভিনয় করেছি বলে মনে হয় না। তাই দর্শকেরা প্রেক্ষাগৃহে এলে সবারই পরিশ্রম সার্থক হবে।
ছবিতে আপনার চরিত্রটি সম্পর্কে বলুন।
এটা তো এখন বলা যাবে না। যাঁরা আমার চরিত্র সম্পর্কে ধারণা পেতে চান, তাঁদের অবশ্যই প্রেক্ষাগৃহে আসতে অনুরোধ করছি। ছবির নাম দেখে অনেকে মনে করতে পারেন, ‘বিশ্বসুন্দরী’ হয়তো সুন্দরী প্রতিযোগিতার বিষয়। আসলে তা নয়। এখানে একটা খেলা আছে। মুক্তিযুদ্ধের পটভূমির একটা স্বাদ পাওয়া যাবে।
একজন নারী নির্মাতার প্রথম সিনেমায় অভিনয় করেছেন। কেমন ছিল সেই কাজের অভিজ্ঞতা?
দিতি (চিত্রনায়িকা দিতি) মারা যাওয়ার পর তাঁর বাসায় এই পরিচালকের সঙ্গে প্রথম দেখা। ছবির কাজ করতে গিয়ে ভালোভাবে জানার সুযোগ হয়। পরিচালক হচ্ছেন ক্যাপ্টেন, এই ছবিতে কাজ করতে গিয়ে তা বেশ ভালোভাবে উপলব্ধি করলাম। শুধু ক্যামেরার সামনের বিষয় নয়, পেছনেও তিনি সব শিল্পী ও কলাকুশলীর খেয়াল রেখেছেন। প্রত্যেক শিল্পীর পোশাকের দিকে খেয়াল রেখেছেন, যদিও ড্রেস ডিজাইনার ছিল।
কেমন চরিত্রে অভিনয় করতে চান, যা আগে করা হয়নি?
নির্বাক চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলাম, অল্প সময়ের জন্য ছিল বলে মনঃপূত হয়নি। তবে ‘চন্দ্রগ্রহণ’ ছবিতে নির্বাক চরিত্রে অল্প সময়ের অভিনয় দিয়ে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছিলাম। তাই নির্বাক চরিত্রে লম্বা সময় ধরে কাজ করার স্বপ্নটা এখনো রয়ে গেছে। এই বয়সে আমি এমন একটা চরিত্র করতে চাই, যেখানে তরুণী, যুবতী, বৃদ্ধ— সব বয়সের আমাকে দেখা যাবে। এত সময় ধরে যে অভিনয় করলাম, কী শিখলাম, তা দেখতে চাই। আমি আদৌ এই ধরনের চরিত্রে কাজ করতে পারব কি না, বুঝতে চাই।
দেশের চলচ্চিত্র এখন কেমন আছে?
করোনায় তো সব থমকে গেল। তবে তার আগে যে অনেক ভালো ছিল, তা বলব না। একটু ভালোর চেষ্টা হচ্ছিল। চলচ্চিত্রের আগের অবস্থা দেখতে হলে, কয়েক বছর ধরে যে দলাদলি তৈরি হয়েছে, তা দূর করতে হবে। যাঁরা চলচ্চিত্রে বিভাজন তৈরি করেছেন বা করার চেষ্টায় এখনো আছেন, তাঁদের চিহ্নিত করে প্রতিহত করতে হবে। সব সমিতিকে একসঙ্গে মিলিত হয়ে চলচ্চিত্রের মঙ্গলের জন্য কাজ করতে হবে। এই চলচ্চিত্রের সবাই একটা পরিবার, এটা ভাবতে হবে। দলাদলিতে আমাদের চলচ্চিত্র কখনো এগোতে পারবে না।
চলচ্চিত্র এখন যে অবস্থায় আছে, সেখানে কোনো আশার আলো দেখছেন কি?
আমি তরুণদের মধ্যে স্বপ্ন দেখি। বিশ্বাস করি, তরুণেরাই একদিন আমাদের চলচ্চিত্রের চেহারা বদলে দেবে। পুরোনোদের মধ্যে কেউ কেউ কাজ করছেন। আবার কেউ ছবির কাজ পাচ্ছেন না, কিন্তু তাঁদের মেধা, শক্তি, সামর্থ্য সবই আছে। ভালো কাজের সুযোগের অভাবে নিজেদের প্রমাণ করতে পারছেন না। চলচ্চিত্রে অভিজ্ঞ যাঁরা আছেন, তাঁদের সঙ্গে তারুণ্যের সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। কারণ, একজন তরুণ জানে এখনকার পৃথিবী কোন দিকে যাচ্ছে। অন্যদিকে এর সঙ্গে পুরোনোদের অভিজ্ঞতার মিশেল ঘটাতে পারলে দারুণ কিছু হবে বলে আমার বিশ্বাস। বলতে পারেন, আমাদের ফিউশন করতে হবে। তাতে আমরা ভালো কিছু করতে পারব।
নতুন কোনো চলচ্চিত্রে কাজের ব্যাপারে আলাপ হয়েছে কি?
কথা হয়েছে। কাজী হায়াৎ ভাই কিছুদিন আগে অপূর্ব দুটি গল্প শুনিয়েছেন। তিনি চাইছেন আমি কাজ দুটি করি। জানুয়ারিতে করোনা পরিস্থিতি কেমন হয় দেখতে চাই, এরপর সিদ্ধান্ত নেব। দেলোয়ার জাহান ঝন্টু ভাইও যোগাযোগ করছেন। ‘শান’ নামের একটি ছবির কিছু অংশের কাজ বাকি আছে। সবকিছু স্বাভাবিক হলে আগে এই কাজ শেষ করতে চাই।
কোনো পরিচালক যদি আপনাকে নায়িকা হিসেবে ছবি বানান, তাহলে কাকে নায়ক চাইবেন?
প্রথমত কাঞ্চন (ইলিয়াস কাঞ্চন) ভাইকে চাইব। আর যদি হিরো আমার চেয়ে বয়সে কম হয়, তাহলে অবশ্যই শাকিব খানকে চাইব। কারণ, ওর মতো সুদর্শন, স্মার্ট ও নির্ভরযোগ্য নায়ক এখনো তৈরি হয়েছে বলে মনে হয় না।
আপনাদের তিন বোনকে (সুচন্দা, ববিতা ও চম্পা) নিয়ে কেউ ছবি বানাতে চাইলে কি সম্ভব হবে?
‘তিন কন্যা’ নামের একটি ছবিতে তো আমরা অভিনয় করেছিলাম। এরপর আর ভাবিওনি। আপনার কথা শুনে মনে হলো, এমনটা আবার হলে তো দারুণ হয়। করোনাকাল শেষ হলে কেউ যদি ভালো গল্পে আমাদের নিয়ে ভাবেন, তাহলে করব।