পেশায় চিকিৎসক শ্রাবণ্য তৌহিদা। ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক। উপস্থাপনা দিয়েই তিনি সবার কাছে পরিচিত। গেল ঈদে তিনটি নাটকেও অভিনয় করেছেন। এসব নাটক ও অন্যান্য প্রসঙ্গে তাঁর সঙ্গে কথা বলল বিনোদন।
বেশ কয়েক বছর পর ঈদের তিনটি নাটকে কাজ করলেন।
দীর্ঘদিন পর অভিনয় করতে গিয়ে কিছুটা নার্ভাস ছিলাম। আমি পেশাদার অভিনয়শিল্পী নই, তারপরও তিনটি নাটকের তিনটিতেই আমাকে ঘিরে গল্প তৈরি হয়েছে। প্রতিটি নাটকে অভিনয়ের আগে অনেক কিছু শিখেছি। চরিত্রের ভেতর ঢোকা, সংলাপ প্রক্ষেপণ, অভিব্যক্তি প্রকাশ করা—সবকিছুই আমি শিখেছি। এসব অভিজ্ঞতা আমার পরবর্তী সময়ের অভিনয়ে কাজে লাগবে। এ কারণে এবারের ঈদ আমার জন্য ছিল রোমাঞ্চকর এবং অন্য রকম।
নাটকগুলো থেকে সাড়া পেলেন কেমন?
আমাকে সবাই সব সময় উপস্থাপনায় দেখে। এবার নাটকে দেখতে পাওয়াটা ভক্তদের কাছে চমক ছিল। তিন নাটকের মধ্যে ‘প্রিয় ডাকবাক্স’–র সাড়া ছিল বেশি।
চিকিৎসা বিষয়ে পড়াশোনা করে উপস্থাপক হতে মন চাইল কেন?
স্কুল, কলেজ এবং মেডিকেলে পড়ার সময় বিভিন্ন ইভেন্টে আমি উপস্থাপনা, নাচ ও অভিনয় করতাম। পেশাদারভাবে শুরু করি, যখন আমি মেডিকেলে পড়াশোনা শুরু করি। তখন মডেলিংও শুরু, এরপর উপস্থাপনা। যেহেতু ডাক্তারি পড়া অনেক কঠিন এবং সময়ও দিতে হয় অনেক, তাই আমার মনে হলো উপস্থাপনাটা আমার ব্যক্তিত্বের সঙ্গে যায়। বেশির ভাগ অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতাম যা বিকেলে বা রাতে শুরু হতো, আমার মেডিকেল পেশার ক্ষতি না করে চালিয়ে যাওয়া যেত। শুরুর দিকে স্পোর্টস শো। মানুষের সাড়াও আমাকে কিছুটা অনুপ্রেরণা দিয়েছে উপস্থাপনা করতে।
অভিনয়ের মতো উপস্থাপনাও চর্চার বিষয়। চিকিৎসা পেশায় থেকে অভিনয় ও উপস্থাপনাচর্চার সময় কীভাবে বের করেন?
সবকিছুই চর্চার বিষয়। সেটা অভিনয় করতে গিয়ে আরও ভালোভাবে বুঝতে পেরেছি। নিয়মিত রেওয়াজ, উচ্চারণ অনুশীলন, সময় না পেলে গল্পের বই পড়া বা পত্রিকা জোরে পড়াও আমার কাছে প্র্যাকটিস করার মতো। আর অনুষ্ঠানের আগে অবশ্যই অতিথি বা আয়োজন নিয়ে হোমওয়ার্ক করা—এই তো।
উপস্থাপনার নানা মাধ্যমে আপনাকে পাওয়া যায়। কোন মাধ্যমটি বেশি উপভোগ করেন?
টেলিভিশনের অনুষ্ঠান উপস্থাপনা উপভোগ করি। একই সঙ্গে সরাসরি আয়োজনও। বিশেষ করে, খেলার অনুষ্ঠান বেশ উপভোগ করি। খোলা মাঠে যখন বড় কনসার্ট হয়, দর্শকদের একদম সরাসরি সংযোগ থাকে, সেটাও অনেক বেশি উপভোগ করি।
উপস্থাপকেরা বলেন, অভিনয় কঠিন। এরপরও অভিনয় করেন। কেন? অর্থ, খ্যাতি নাকি অন্য কিছু?
আমার কাছে এটা অর্থ বা খ্যাতির জন্য নয়, এটা শুধুই ভালোবাসা। কারণ, যা করতে আমি দক্ষ, যা আমাকে নাম, যশ এবং এত মানুষের ভালোবাসা দিয়েছে, সেটা কেউ কেন ছাড়বে বলেন! আমার কাছে অভিনয় কঠিন হলেও একটা চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলা অনেক চ্যালেঞ্জিং এবং উপভোগেরও বটে।
অভিনয়ে শুনেছি সার্কেল মেইনটেইন করতে হয়। উপস্থাপনার ক্ষেত্রেও কি এমন?
না, আমি তো এমন কিছু মেইনটেইন করি না। তবে ভালো বন্ধু তো আছে এবং থাকবে, সেটা সব ক্ষেত্রে।
উপস্থাপক হতে চায়, এমন একেবারেই নতুনদের জন্য তিনটি পরামর্শ
প্রথমে বলব, বাংলা উচ্চারণ শুদ্ধ হতে হবে। প্যাশন অ্যান্ড ডেডিকেশন থাকতে হবে। দেশ–বিদেশের সবকিছুর খবরাখবর রাখা এবং বই পড়ার অভ্যাস থাকতে হবে, সঙ্গে গ্ল্যামার থাকলে এক্সট্রা পয়েন্ট।
চিকিৎসক হিসেবে জটিল রোগী সামলানোর একটা গল্প জানতে চাই।
অনেক গল্প আছে। বিসিএস দেওয়ার পর আমার প্রথম পোস্টিং কেরানীগঞ্জ থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। একদিন নাইট ডিউটি করার সময় এক অজ্ঞান রোগী জরুরি বিভাগে এল। তাঁর পরিবারের সবাই মনে করে, স্ট্রোক অথবা হার্ট অ্যাটাক। আমিও তা–ই চিন্তা করি। কিন্তু তাঁর যেহেতু ডায়াবেটিস ছিল এবং ইনসুলিন নিতেন, তাই তিনি হাইপোগ্লাইসেমিয়ায় চলে গিয়েছিলেন। জরুরি বিভাগেই আমি তাঁকে একটা স্যালাইন ও ইনজেকশন দেওয়ার পর তিনি চোখ খুলে তাকান, দ্যাট ওয়াজ লাইক ম্যাজিক। আমাকে অনেক দোয়া ও ভালোবাসা দিয়েছিল ওই রোগীর পরিবার।
আপনাকে কেউ বলেনি, আরে তুমি তো সিনেমার নায়িকা হতে পার?
প্রতিনিয়ত শুনতে হয়। এত গ্ল্যামারাস, ওয়েল মেইনটেইনড ফিগার নিয়ে কেন সিনেমা করছি না, এই প্রশ্ন সবার। এই তো গত বৃহস্পতিবার লাইভ শোয়ে এক দর্শক ফোন করে বলেছেন, ‘আপনার ঈদের নাটক ভালো হয়েছে, আপনাকে সিনেমায় দেখতে চাই।’ কদিন আগে একটি অনুষ্ঠানে জাহিদ হাসান, আনিসুর রহমান মিলন এবং জায়েদ খানও বলেছেন, আমার সিনেমায় কাজ করা উচিত।
সিনেমায় অভিনয় নিয়ে ভাবনা কী?
সিনেমা নিয়ে আমার ভাবনা হলো, গল্প আমাকে টানতে হবে, পরিচালক কে সেটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। ‘আয়নাবাজি’, ‘ডুব’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘আগুনের পরশমনি’, ‘রেহানা মরিয়ম নূর’—এই ধরনের সিনেমার প্রস্তাব পেলে করার চিন্তা করব।
আপনার পরিবার উপস্থাপনা ও অভিনয় নিয়ে কী বলে?
উপস্থাপনা দেখে ভালো বলে। অনেক স্বাভাবিক আর সহাস্য থাকি, এটা ধরে রাখতে বলে। অভিনয়ের অনেক ভালো ফিডব্যাক পেলেও আমার বাসার অনেকেই চান না, আমি বিনোদন অঙ্গন নিয়ে এত ব্যস্ত হই বা এটা আমার প্রধান পেশা হোক। ওরা ভয় পায়, আমি ডাক্তারি ছেড়ে দিই নাকি। তবে আমার স্বামী সাপোর্টিভ হলেও অভিনয়ে নিয়মিত হতে মানা করেন।
আপনি কী চান?
আমি তো এখনো নিয়মিত উপস্থাপক হিসেবে কাজ করছি। পরিবার চায় না, ডাক্তারি ছাড়ি, আমিও চাই না। দুটোকে সমন্বয় করে নিজেকে এগিয়ে নিতে চাই।