শাটিকাপ রাজশাহীর স্থানীয় মানুষের মুখে উচ্চারিত একটি আঞ্চলিক শব্দ। এই নামে রাজশাহীর ছেলে মোহাম্মদ তাওকীর ইসলাম একটি ওয়েব সিরিজ বানিয়েছেন; যার ১৩৭ জন কলাকুশলীর সবাই রাজশাহীর স্থানীয়। ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম চরকিতে দেখা যাচ্ছে এই সিরিজ। তরুণ এই নির্মাতার সিরিজ নিয়ে দেশে–বিদেশে হইচই পড়ে গেছে। এই সিরিজ নির্মাণের বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন নির্মাতা মোহাম্মদ তাওকীর ইসলাম।
‘শাটিকাপ’ রাজশাহীর স্থানীয় সীমিত কিছু মানুষের মুখে উচ্চারিত একটি শব্দ। এই নামে ওয়েব সিরিজ বানানোর কথা মাথায় এল কীভাবে।
ভাবনাটা আগে থেকে ছিল না। কাজ করতে গিয়ে এসেছে। শুটিংয়ের সময় নিজেরা কথা বলার সময় শব্দটি এসে যায়। জো চরিত্রে যে অভিনয় করেছে, সে প্রথম এই শব্দটি উচ্চারণ করে। এরপর শব্দটি সবার মনে ধরে যায়। সিদ্ধান্ত হয় এই নামই থাক।
পরিচালকেরা অনেক সময় বাণিজ্যিক চিন্তা মাথায় রেখে বিষয় নির্বাচন করে থাকেন। এ রকম একটি জীবনঘনিষ্ঠ সিরিয়াস বিষয় সামনে এল কীভাবে?
প্রথম থেকেই আমাদের ভাবনা ছিল যে সমাজে যারা জীবন যাপন করেন, সেখানে তারা যেভাবে থাকেন, ঠিক সেভাবে তার ছবিটা তুলে আনার চেষ্টা করব। সেটা খুঁজতে গিয়েই সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষের হেরোইন পাচারের মতো সাংঘাতিক বিষয়টি চলে আসে।
এই সিরিজ সাড়া ফেলবে, ভেবেছিলেন আগে?
আমরা কাজ করার আনন্দেই সিরিজটি বানিয়েছি। কাজের আনন্দই ছিল মুখ্য। এটা শেষ পর্যন্ত হবে কি না, হলেও কী হবে, কোথায় যাবে না যাবে—কিছুই মাথায় ছিল না।
‘স্ল্যাং’–এর ব্যবহার নাকি গভীর থেকে উঠে আসেনি, আরোপিত হয়েছে—এমন সমালোচনা কেউ কেউ করছেন। এ ব্যাপারে পরিচালক হিসেবে আপনি কী বলবেন?
আমরা এ ব্যাপারে পুরোপুরি সচেতন ছিলাম, কোনোভাবেই যেন আমরা অতিরঞ্জন না করি। আসলে ওই মানুষগুলোর জীবনের শব্দই কম। তাদের একটাই ব্যবসা। এ জন্য একই কথা তারা ঘুরেফিরে বলে। যারা তাদের সঙ্গে মিশেননি, তাদের কাছে এটা আরোপিত মনে হতে পারে। আমরা কাজ করতে গিয়ে তাদের সঙ্গে মিশে যেভাবে তাদের পেয়েছি, সেভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। আর প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে ভালো–খারাপ আছে। আমরা চেয়েছি, তার সবটুকু যেন উঠে আসে।
আপনি নিজে রাজশাহীতে বড় হয়েছেন। নইলে কি এভাবে স্থানীয় দৃশ্য, ঘটনার সবটুকু এভাবে নিংড়ে দেওয়া সম্ভব হতো বলে করেন?
না, অন্য শহরের কাহিনি হলে এটা সহজে করা যেত না। হয়তো আরও সময় লাগত। এত সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা যেত না। শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে গেলেই দেখা যায়, মানুষ অন্য রকম করে কথা বলছে। ভাষার মারপ্যাঁচ আছে। ধরন আলাদা হয়। নিজের অভিজ্ঞতায় ভাষা উঠে এসেছে। এ জন্য কাজটা সহজে করা সম্ভব হয়েছে।
ট্রেলারে ব্যবহৃত ‘গুরু গুরু গুজগুজ চ্যাং, নৌকা নদী হোলা ব্যাঙ’ গানটা এখন রাজশাহীর বিভিন্ন জায়গায় সজোরে বাজছে। মানুষের মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে। এই গানের কি কোনো অর্থ আছে? গানের গীতিকার কে?
‘গুরু গুরু গুজগুজ চ্যাং’ আসলে একটা রূপক বলতে পারেন। এর মর্মার্থ আছে। গরুর পেটের ভেতরে হেরোইন আসে। আমাদের পেটের ভেতরে কিছু হলে তো গুর গুর করে। নৌকা–নদী আমাদের সিনোপসিসের একটা প্রতীক। আর হোলা ব্যাঙ বলা হয়েছে এই কাজের সঙ্গে জড়িত মানুষদের। বাবু ও হান্নান চরিত্রে যে দুজন অভিনয় করেছে, তারা এই গান রচনা করেছে। তারা বললে এই গানের মর্মার্থ হয়তো আরও ভালো বলতে পারবে।
আট পর্ব দেখেও একটা সাসপেন্স থেকে যাচ্ছে। বাবু কি ছাড়া পাবে? জয়নালরা কী করবে? এসব প্রশ্নের উত্তর জানার ব্যাপক আগ্রহ থাকছে দর্শকদের মধ্যে। তাই এর পর্ব বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা আছে কি না।
আপাত এই সাসপেন্সটাই দর্শক আরও ধরে থাকুক। ভাবুক আরেকটু।