পূজা এলেই হু হু করে ব্যস্ততা বাড়ে হৈমন্তী রক্ষিত দাশের। তাই এ সময় তাঁকে খুঁজে পাওয়া দায়। সকালে আর দুপুরে ফোন করে পাওয়া গেল না তাঁকে। বিকেলে জানালেন, রাতে বাড়ি ফিরে কথা বলতে পারবেন। প্রতিবছর পূজা উপলক্ষে একটি করে গান করেন। তবে ২০২০ ব্যতিক্রম। এবার একটি নয়, দুটি পূজার গান করেছেন তিনি। প্রথমটির নাম ‘দুর্গতিনাশিনী’। ঢাকার রমনা কালীমন্দিরে ধারণ করা হয় এই গানের মিউজিক ভিডিও। আকাশ সেনকে সঙ্গী করে ‘পূজো এলো’ শিরোনামে আরও একটি গান করেছেন হৈমন্তী। কথা হলো এই শিল্পীর সঙ্গে।
সারা দিন কোথায় ছিলেন?
তিনটা চ্যানেলের জন্য গাইলাম। পূজা কীভাবে আসে, কীভাবে যায়, টের পাই না। এটাই আমার বছরের সবচেয়ে ব্যস্ততম সময়।
আপনার হৈমন্তী নামটা কি হৈমন্তী শুকলার থেকে অনুপ্রাণিত?
হতে পারে। সবাই আমার নাম শুনেই প্রথমে তাঁর কথা বলেন। ব্যাপারটা বেশ লাগে।
গান দুটি থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
দারুণ। ২০১৮ আর ২০১৯ সালে যে দুটি গান গেয়েছিলাম, সে দুটি গানও এই দুটি গানের সঙ্গে এবারের পূজায় বাজছে। সবাই গানগুলো শুনে নাচানাচি করছে। সেই ভিডিও পাঠিয়ে দিচ্ছে ইনবক্সে। দেখে খুবই ভালো লাগছে। আমার গান মানুষের উৎসবের সঙ্গী হয়েছে, এটাই তো চাওয়া ছিল।
করোনার প্রথম ধাক্কার দিনগুলোতে নিজের শিল্পীসত্তার চর্চা করলেন কীভাবে?
অন্য সময় দেশে, দেশের বাইরে স্টেজ শো করা হয়, টিভি অনুষ্ঠান আর প্লেব্যাকে সময় চলে যায়। রাস্তায় বেশ খানিকটা সময় যায়। সব মিলিয়ে ঘরে বসে নিরিবিলি গান শোনা বা রেওয়াজ করার ফুরসত মেলে না। এই সময়টায় গান শুনেছি, রেওয়াজ করেছি, অনলাইনে প্রোগ্রাম করেছি। আমার ঘরেই ছোটখাটো একটি স্টুডিও আছে। সব মিলিয়ে করোনাকালে দ্বিগুণ সংগীতচর্চা হয়েছে।
পূজায় কী কী কিনলেন?
আমি তো সরাসরি পূজা উপলক্ষে কেনাকাটাই করি না। কেনাকাটা করি পূজার সময় টিভিতে গানের শোগুলোর জন্য। শো করেই আমার পূজা কাটে।
আপনার প্রথম স্টেজ শোর গল্পটা শুনি।
তখন আমি খুবই ছোট। হয়তো ক্লাস টুতে পড়ি। চিটাগং মুসলিম হলভর্তি আমার একক সংগীতানুষ্ঠান। হলভর্তি দর্শক আমাকে ঠিকমতো দেখতেই পায় না। ২০–২২টি গান গেয়েছিলাম। ১৫–২০ জন মিউজিশিয়ান আমার সঙ্গে বাজিয়েছেন। ওই দিনই চট্টগ্রাম শহরের মানুষ আমাকে চিনে ফেলল। ছোট্টবেলা থেকে এই পরিচিতির জন্য কখনো সেভাবে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে পূজা দেখতে যাওয়া হয়নি। যেখানেই যেতাম, একটা ভিড়, গন্ডগোল লেগে যেত। এমনও হয়েছে, গাইতে গিয়েছি, কিন্তু স্টেজেই উঠতে পারছি না।
ক্লাস ফাইভে পড়ার সময় তো প্রথম অ্যালবাম বের হলো...
হ্যাঁ। প্রথম অ্যালবাম বেরোল। আর দ্বিতীয় অ্যালবামের কাজ চলছিল। আমার গানের হাতেখড়ি হয়েছে বাণী কুমার চৌধুরীর কাছে। পরে গান শিখিয়েছেন বাসুদেব ঘোষ। সেটা ১৯৯৪ সাল। আগের বছর আমি নতুন কুঁড়িতে নজরুলসংগীতে বিজয়ী হলাম। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসি গানের রেকর্ডিংয়ের জন্য। তখন বাসায় এসে রাতে হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছি। ঘুম থেকে তুলে নিয়ে পায়ের নিচে টুল বা মোড়া দিয়ে চলেছে রেকর্ডিং। কারণ, রেকর্ডিংয়ের শিফট বা শিডিউল ওই সময়ে ছিল। এভাবেই শিল্পী হওয়া। আমার মা–বাবা কখনো চায়নি আমি ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হই। মা–বাবা আমাকে শিল্পী হিসেবেই দেখতে চেয়েছেন।