ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম চরকির জন্য ভৌতিক কাহিনিনির্ভর ওয়েব সিরিজ ষ বানিয়ে কদিন আগে আলোচনায় আসেন নুহাশ হুমায়ূন। ষ–এর রেশ কাটতে না কাটতেই খবর এল, তাঁর নতুন চলচ্চিত্র মশারি আটলান্টা চলচ্চিত্র উৎসবে জুরি পুরস্কার জিতেছে। পাশাপাশি সম্প্রতি তিনি হলিউডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান অ্যানোনিমাস কনটেন্ট প্রোডাকশন কোম্পানি এবং সিএএ এজেন্সির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির পর নতুন কী করছেন, এসব নিয়েই কথা হলো তাঁর সঙ্গে
অভিনন্দন।
ধন্যবাদ।
অ্যানোনিমাস কনটেন্ট প্রোডাকশন কোম্পানি এবং সিএএ এজেন্সির সঙ্গে আপনার চুক্তির ধরন সম্পর্কে ধারণা দেবেন কি?
প্রতিষ্ঠান দুটি আমার এজেন্ট আর ম্যানেজার হিসেবে সাইন করেছে। কোনো একক প্রজেক্টের জন্য নয়, ওভারঅল আমার ক্যারিয়ারের জন্য—আমি যত কাজ করি। তারা আমাকে বাইরের দেশ থেকে বিভিন্ন কাজ এনে দেবে—সব হলিউড বেজড। ইন্টারন্যাশনাল যত কাজ আছে, সব এনে দেবে। অলরেডি একটা কাজ চলে এসেছে, একটা ইন্টারন্যাশনাল ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য। এটা কিন্তু বাংলাদেশ বা ইন্ডিয়ার কোনো ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য নয়। তবে সেই ওটিটির নাম এখনই প্রকাশ করতে পারছি না, তাই বলতেও পারছি না। কাজটা অলরেডি ফাইনাল হয়ে গেছে। আরও কয়েকটি কাজের কথা চলছে।
এই প্রতিষ্ঠান আপনার হলিউড প্রজেক্টের সঙ্গে যুক্ত থাকবে, নাকি অন্য কোনো দেশের সঙ্গে কাজ করলেও থাকবে?
তারা হলিউডের মধ্যে সেরা তিনটি এজেন্সির মধ্যে একটি। আন্তর্জাতিক অন্য প্রজেক্টও এনে দেবে। তবে ফোকাস থাকবে হলিউডভিত্তিক।
এই এজেন্সির সঙ্গে যুক্ত হওয়া নির্মাণ নিয়ে আপনার লক্ষ্য ও স্বপ্নকে কতটা এগিয়ে দিল বলে মনে করেন?
তাদের সঙ্গে সাইন করার পর দেখলাম, তাদের যে স্ট্র্যাটেজি, তাদের যে নলেজ হলিউডের ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে—সেই নলেজ আমার কাছে আগে ছিল না। আমার মনে হয়, আমাদের দেশে অনেক ক্রিয়েটিভ মানুষ আছেন কিন্তু আসলে যে জিনিসটা নেই, সেটা হচ্ছে নেটওয়ার্ক। আমাদের অনেকেরই অ্যাকসেসটা নেই। আমাদের খুব ভালো স্ক্রিপ্ট রাইটার আছেন, খুব ভালো গল্প আছে, খুব ভালো ডিরেক্টরও আছেন। কিন্তু এই তথ্য তো বাইরে ওয়ার্ল্ডেও পৌঁছাতে হবে। এখন তারা যে নোটিশ করেছে, তার মানে হচ্ছে যে এখন ওই সুযোগ আছে, আমার সঙ্গে বিভিন্ন টপ ইন্ডাস্ট্রির মানুষের সঙ্গে কানেক্ট করিয়ে দিচ্ছে। ওটার ফলে আমি কাজ পাচ্ছি। ওই অ্যাকসেসটাই আসলে আমাদের নেই। আমাদের ট্যালেন্টের অভাব নেই, কানেকশনটা নেই, ওটাই এজেন্সি করে দিয়েছে—এটা আমার ভালো লেগেছে। আর তারা খুব হেল্পফুল। তারা আমার পুরো ক্যারিয়ার ওয়াইজ হেল্পফুল থাকবে। আমার কাছে মনে হচ্ছে, এটা আমাদের পুরো ইন্ডাস্ট্রির জন্যই ভালো হবে। কারণ, বিদেশি প্রজেক্টগুলো যখন আসবে, দেশে শুটিং হোক বা বাইরে হোক—আমার চেষ্টা থাকবে, যতটা সম্ভব লোকাল ক্রু নিয়ে কাজ করা। আমার বাংলাদেশি যত আর্টিস্ট, মিউজিশিয়ান আছেন, তাঁরাই এসব প্রজেক্টে কাজ করবেন, যতটুকু সম্ভব। আমার চাওয়া, এ থেকে আমাদের ইন্ডাস্ট্রি যতটুকু শিখতে পারবে, ওইটা আমার একটা লক্ষ্য। এটা আসলে সম্ভব হয়েছে আমার মশারি শর্ট ফিল্ম যখন অ্যাওয়ার্ড পেল, তখন। এরপরই বিভিন্ন এজেন্সি কন্ট্যাক্ট করল। তাদের সঙ্গে আসলে নিজে থেকে কন্ট্যাক্ট করা যায় না, আবেদন করারও সুযোগ নেই।
তার মানে আপনি মনে করছেন, আটলান্টা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘মশারি’ পুরস্কার জেতার কারণে এমনটা সম্ভব হয়েছে?
এটা আসলে সাউথ বাই সাউথ ফেস্টিভ্যাল হওয়ার পরই হয়েছে। তখন থেকে প্রক্রিয়া শুরু হয়। বেশ কয়েকটি এজেন্সির সঙ্গে কথা হয়, শেষ পর্যন্ত তাদের সঙ্গে চুক্তি করলাম। আমার জন্য আরও অনেকগুলো অপশন ছিল।
আপনি বলেছেন, আপাতত কোন আন্তর্জাতিক ওটিটি, তা বলা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু প্রজেক্টটা কী, তা কি ঠিক করেছেন?
আমি এই প্রজেক্টের রাইটার ও ডিরেক্টর। শুটিং বাংলাদেশে হবে। এটা একটা শর্ট ফিল্ম। সবকিছুই ঠিক করে ফেলেছি। শিগগির এই প্রজেক্ট সম্পর্কে বিস্তারিত জানাব। কাজ অলরেডি শুরু হয়ে গেছে। তারা প্রজেক্ট লকও করে দিয়েছে। জুলাইয়ে শুটিং শুরু হচ্ছে।
এই কাজ কোন ধাঁচের...
অনেক জনরার মিক্সড থাকবে। একটু কমেডি থাকবে, ফ্যান্টাসি, হররও থাকবে। আমি বলব যে একই সময়ে এটা একটা পলিটিক্যাল গল্পও।
আটলান্টা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘মশারি’ পুরস্কার জেতার খবরটি আপনার জন্য কতটা আনন্দের ছিল। এই পুরস্কার পরের কাজের জন্য কতটা অনুপ্রেরণার?
আমি বলব, এটা আমার জন্য পুরোপুরি নতুন যাত্রা। যে পথে হাঁটছি আমি, আসলে কোনো বাংলাদেশিকে চিনি না, যিনি এই জায়গায় গেছেন। অস্কারের যাঁরা ক্যাম্পেইন করেন, ক্যাম্পেইন ম্যানেজারের সঙ্গে কথা হচ্ছে, এটা–ওটা নিয়ে জানছি। পুরো বিষয়টাই আমার কাছে নতুন। আমার কাছে অনেক এক্সাইটিং লাগছে। আসলে এতটুকু আসতে পারব, এটাই ভাবিনি। কারণ, এটা একটা হরর কনটেন্ট, বাংলাদেশ থেকে এত দূর যাবে, জুরি পুরস্কার পাবে, ভাবিনি! এটাই আমার জন্য গর্বের ব্যাপার। এটা অনুপ্রেরণার এই কারণে যে আমরা বাংলাদেশ থেকে ডিফারেন্ট জনরার ছবি বানাতে পারি, যেগুলো আন্তর্জাতিক রিকগনিশন পেতে পারে। নট নেসেসারিলি একই ধরনের কাজ হতে হবে। এটা হরর হতে পারে, পরবর্তীজন অন্য কিছু করবেন, আমার চেয়েও নতুন কিছু করবেন। আমার কাছে এটা ভীষণ আশাবাদের খবর। বাংলাদেশ থেকে ডিফারেন্ট জনরার কাজ বাইরে যাচ্ছে, নট জাস্ট এক ধরনের ফিল্ম বা আর্ট ফিল্ম।