জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়ে গেল দুই দিনব্যাপী সংগীত উৎসব। উৎসবের আহ্বায়ক ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের চেয়ারপারসন অণিমা রায়। উৎসব, নিজের গান, বর্তমানে শুদ্ধ সংগীতের সংকট ও সম্ভাবনা নিয়ে কথা বললেন প্রথম আলোর সঙ্গে।
দুই দিনব্যাপী আয়োজন নিয়ে বলুন...
এটা ছিল তৃতীয় সংগীত উৎসব। সংগীত বিভাগের কর্মকাণ্ডগুলো উপস্থাপন করারই একটি প্রয়াস এটি। এবারের উৎসবটিকে এই ভূখণ্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সংগীতের যে সুরের ভেরিয়েশন, সেটাকে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। এখানে জার্মানি, ভারতীয় শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেছেন। এখানে আবার সংগীতের সব ক্ষেত্রের শিল্পীদের সমন্বয় ঘটানোর চেষ্টা করেছি। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের কর্মকাণ্ডগুলো উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি।
এই উৎসবের বিশেষত্ব কী ছিল?
সংগীতের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ভাবের আদান–প্রদান ঘটে, মানুষের মধ্যে মানবিক বোধ জাগে, প্রকৃতির প্রতি মানুষের প্রেম তৈরি হয়। এই পুরো ব্যাপারটিতে সংগীতের যে বিশাল ক্ষমতা আছে, সেটাকে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। এই আয়োজনটা হয়েছে পুরান ঢাকায়। সাধারণত এই শহরে সব অনুষ্ঠান ধানমন্ডি বা ওই এলাকাকেন্দ্রিক হয়। পুরান ঢাকায় শুদ্ধ সংগীতের ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলটা একটু অবহেলিত। সে কারণেই আমাদের ভাবনা ছিল পুরান ঢাকার মানুষকে একত্র করা। বাংলা সংগীতে আমাদের যে ধারাগুলো আছে, সেগুলো এই মানুষদের কাছে পৌঁছানো। পুরান ঢাকার সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগগুলোর শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে সুরের মেলায় আবদ্ধ করার চেষ্টা করেছি। মূলধারার সংগীতের ক্ষমতা মানুষকে জানানোর চেষ্টা করেছি।
গান নিয়ে আপনার ব্যস্ততা বলুন?
এই তো বিভাগ নিয়ে ব্যস্ততা আছে। মঞ্চ পরিবেশনা করছি। নিজের একটা প্রতিষ্ঠান আছে সুরবিহার নামে। সেখানে সময় দিচ্ছি। আর যা কিছুই করছি সব আমার নিজের গানকে কেন্দ্র করেই। নিজের গানটা ঠিকঠাক না চলত, ব্যক্তি মানুষ সুখী থাকতে পারতাম না। ওই জায়গাটা ঠিক থাকছে বলেই বাকি সবকিছুতে আনন্দ পাচ্ছি। পাশাপাশি নতুন অ্যালবাম নিয়ে কাজ করছি। বিবর্তন নাম অ্যালবামটির। চারটি মিউজিক ভিডিও হয়েছে। তিন কবি—অতুলপ্রসাদ সেন, দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ও রজনীকান্ত সেনের গান নিয়ে অ্যালবামটি। বৈশাখের আগে মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা আছে।
প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে সংগীত প্রকাশের মাধ্যমগুলোতেও যে পরিবর্তন এল, এটাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
যাঁরা আমরা মূলধারার গান করি, তাঁদের জন্য বিষয়টা একটু হুমকিস্বরূপ। কারণ আমরা গানটাকে শোনাতে চাই। গানটিকে চোখ বন্ধ করে যে শোনা, যে উপলব্ধি করা—সেই জায়গাটায় নিতে গান করি। কিন্তু এখন দেখার একটা প্রবণতা হয়ে গেছে। সময়ের দাবি হয়ে গেছে দেখানো, শোনানো নয়। তাই এটা হুমকিস্বরূপ। তবে পরিবর্তনকে গ্রহণ করা উচিত। কিন্তু গড্ডলিকায় গা ভাসিয়ে দিয়ে নয়।