আড়াই মাস ধরে রাতে ঘুম হয় না চঞ্চল চৌধুরীর

চঞ্চল চৌধুরী। ছবি: ফেসবুক থেকে
চঞ্চল চৌধুরী। ছবি: ফেসবুক থেকে

মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রের অভিনয়শিল্পী চঞ্চল চৌধুরীর জন্মদিন। করোনার এই সংকটের সময়ে জন্মদিন কীভাবে কাটছে, তা জানতে দুপুরে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। জানালেন করোনা-পরবর্তী নাটকের অঙ্গনটা কেমন হওয়া উচিত, তা নিয়ে।

শুভ জন্মদিন, চঞ্চল চৌধুরী। কেমন কাটছে এবারের জন্মদিন?
আসলে জন্মদিন হচ্ছে, এই বয়সে জন্মদিন একটা বিব্রতকর পরিস্থিতি আরকি।

তা বয়স কত হলো, জানা যাবে কি?
(হাসি) তা হয়েছে আরকি একটা। এটা জানার দরকার কী? ওটা না-ই বলি। আমাদের জন্ম যখন হয়েছে, তখন জন্মদিন পালনের রীতি ছিল না। জন্মতিথি অনুযায়ী মা একটু পায়েস রান্না করে খাওয়ান। এখন একটা ট্রেন্ড বা কালচার শুরু হয়েছে, আমি আমার জন্মদিন বা সন্তানের জন্মদিন পালন করি। বিনোদন অঙ্গনে যখন ঢুকলাম, তথাকথিত পরিচিতির জগতে পা রাখলাম, তখন এটা পালন হয়, ভালোই লাগে। তবে কখনোই আলাদাভাবে কিছু চিন্তা করি না।

এইবার কি ভিন্ন কিছু ঘটেছে?
এখন তো ঘরের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমার ছেলে শুদ্ধকে দেখছিলাম খুব ব্যস্ত। ঘরের এদিক-ওদিক দৌড়াদৌড়ি করছে। মায়ের সঙ্গে কী কী পরিকল্পনা যেন করছে, বাবাকে কী সারপ্রাইজ দেওয়া যায়। বাবার জন্মদিন ঘিরে ছেলের যে উন্মাদনা, ঘরে থাকায় দেখলাম, এটাই বেশি ভালো লাগছে। বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই, তাই কেকও আনা হয়নি। মা-ছেলে ফুডিং বানিয়েছে, ওটাকে কেক ভেবে কেটে উদ্‌যাপন করেছি।

চঞ্চল চৌধুরী। ছবি: ফেসবুক থেকে

ভক্ত-শুভাকাঙ্ক্ষীরা জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানায়, কেমন লাগে?
এই যে ভক্ত-শুভাকাঙ্ক্ষী, সহকর্মী, বন্ধু ও পরিচিতজনেরা শুভেচ্ছা জানায়, এটা ঋণী করে ফেলে। সবার ভালোবাসা এই দিনে আরও আলাদাভাবে টের পাই। আমার মনে হয়, শতজন্মের একজন মানুষের কৃতকর্মের ফল আমি এই জন্মে ভোগ করতেছি।

জন্মদিনে সাধারণত কী উপলব্ধি হয়?
জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভালো—জন্মদিনে সেই মানুষটার শুভেচ্ছা জানাবে, যদি কর্মে মহীয়ান হই। জন্মের পর থেকে মানুষের কর্ম নিয়ে সবাই পরিচিতি লাভ করে, অনন্য হয়। এই কর্মের জন্য যে ভালোবাসা, সেটা যেন সচল রাখতে পারি, আমি কর্মটাই ঠিকমতো করে যাওয়ার চেষ্টা করছি। তাই আমি মনে করি, জন্মের চেয়ে কর্ম অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমার মনে হয়, একদিন তো মৃত্যু হবে, কী কর্ম রেখে যাচ্ছি, উপলব্ধিতে আসে।

মঞ্চে চঞ্চল চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

এই করোনায় অনেকেরই ঘুমের অনিয়মের কথা শুনি। অনেকে আবার ঘুমোতে যাওয়ার আগে পরদিন সকালে কী খবর অপেক্ষা করছে, তা নিয়ে চিন্তিত থাকেন। আপনারও কি তেমন কোনো অনুভূতি হয়?
আড়াই মাস ধরে রাতে আমার ঘুম হয় না। ভোরের আলো দেখার পর আমার ঘুম আসে। কত দিনের মধ্যে করোনা থেকে মুক্তি মিলবে, তার কোনো সমাধানের খবর শুনতে পাই না। এসব অনেক চিন্তা বাড়ায়। আমার সন্তান, স্ত্রী, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কী হবে, তা নিয়ে ভাবি। আমার নাটকের সংগঠন, সেখানকার সহকর্মী, বিনোদন অঙ্গনের কী হবে—সবাই কত ধরনের বিপদে আছে, এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে অস্থির হয়ে উঠি, হাঁসফাঁস লাগে। সারা পৃথিবী সংকটে ভাবলে আসলেই ঘুম আসার কথা নয়। রাত যত গভীর হয়, দুশ্চিন্তা তত বাড়ে। আগে শুনতাম, সারা দেশে এই পরিমাণ মানুষ করোনায় আক্রান্ত। এখন তো কাছের মানুষের খবর শুনি। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও পরিচিতজনের আক্রান্তের খবর শুনি বেশি। কারও আবার মৃত্যুসংবাদ। এই মুহূর্তে আমার পরিচিত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০!

একটি নাটকের দৃশ্যে। ছবি: সংগৃহীত

আজ থেকে শুটিং শুরুর অনুমতি মিলেছে। কেউ পক্ষে, কেউ আবার এখনই শুটিং করতে রাজি নন। আপনি কোন দলে?
আমি এটা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি নই। সংগঠনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্বাস্থ্যসচেতনতার নিয়ম মেনে যারা শুটিং করার, তারা করুক। যারা পারবে না, তারা করবে না। তবে আমি নিজে এখনই শুটিং করব না, আরও এক মাস পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে চাই।

টেলিভিশন নাটক বাজে সিন্ডিকেটে চলছিল। করোনার পর এই সিন্ডিকেট ভাঙবে কি?
কিছু কিছু মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন হওয়ার কথা। করোনা আমাদের যেভাবে ভাবিয়ে তুলেছে, তাতে উচিতও। তবে ইতিহাস বলে, আমরা তো খুব একটা বদলাই না। এই সংকটের ভেতরও কতজন কত কী যে করছে! এসব ভাবলে মনে হয়, বদল হবে আশা করাটাই ঠিক না। তবে প্রকৃতি যে শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে, তাতে যে সিন্ডিকেট করে লাভ নেই, তা বুঝিয়ে দিচ্ছে।