জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরীকে টিভি নাটক ও ওটিটিতে বরাবরই ছকভাঙা ও নারীপ্রধান গল্পে দেখা যায়। এবার ভিকি জাহেদের ‘তিথিডোর’ নাটকে নিশাত চরিত্রে সাবলীল অভিনয় করে আলোচিত হয়েছেন তিনি।
নিশাতের মধ্যে নিজেকে খুঁজে ফিরছেন দর্শকেরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে লিখছেন, ‘আমিই নিশাত; এ তো আমারই জীবনের গল্প।’ ৩০ বছর বয়সী এক নারীর জীবনের টানাপোড়েন পেরিয়ে বেঁচে থাকার গল্পে ‘তিথিডোর’ নির্মাণ করেছেন নির্মাতা ভিকি জাহেদ।
২০ জুন চ্যানেল আই প্রাইম ইউটিউব চ্যানেল মুক্তি পেয়েছে ‘তিথিডোর’। এর গল্প লিখেছেন জাহান সুলতানা। এই ঈদে মেহজাবীনের একমাত্র নাটক এটি।
নিজেকে ভেঙেচুরে বিষাদঘন নিশাত চরিত্রে প্রাণ দিয়েছেন মেহজাবীন চৌধুরী। সাবলীল অভিনয়ে চরিত্রটাকে জীবন্ত করে তুলেছেন; দর্শকের হৃদয়ে দাগ কেটেছেন। পর্দার নিশাতকে দেখে জীবনযুদ্ধে জর্জর নারী দর্শকেরা বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা খুঁজছেন।
নিজেকে ভেঙেচুরে বিষাদঘন নিশাত চরিত্রে প্রাণ দিয়েছেন মেহজাবীন চৌধুরী। সাবলীল অভিনয়ে চরিত্রটাকে জীবন্ত করে তুলেছেন; দর্শকের হৃদয়ে দাগ কেটেছেন।
নাটকটি দেখে স্বর্ণা হাওলাদার নামের এক দর্শক ইউটিউবে মন্তব্যের ঘরে লিখেছেন, ‘নাটকে মেহজাবীনের চরিত্রে আমি নিজেকে দেখছিলাম। বিশ্বাস ভেঙে দেওয়া মানুষ, পরিবার থেকে বিয়ের চাপ—সবই আমার জীবনের সঙ্গে মিলে যাচ্ছিল। আমি কতটা ভেঙেচুরে বেঁচে আছি, সেটা কেবল আমিই জানি। প্রাণশক্তির জোগান দেওয়ার জন্য নির্মাতাকে ধন্যবাদ জানাই।’
নুসরাত জাহান নামের আরেক দর্শক লিখেছেন, ‘মেহজাবীনের অভিনয়দক্ষতা বরাবরের মতোই সেরা। নাটকের এক পর্যায়ে মনে হচ্ছিল, আমিই নিশাত। সত্যিই চোখজোড়া ভিজে এসেছিল।’
অনেকে বিষণ্নতাকে নীরবে বয়ে বেড়ান, ফলে মানসিক স্বাস্থ্যের জটিলতা আরও ঘনীভূত হয়। ভরা মজলিশে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে খুব একটা আলাপ দেখা যায় না। নাটকটি দেখে অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষণ্নতার কঠিন সময়ের না-বলা গল্প লিখছেন।
অনেকে বিষণ্নতার কথা চেপে রাখার চেষ্টা করেন। তবে নাটকটি দেখে দর্শকেরা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা লিখছেন, বিষণ্নতার কথা তুলে ধরছেন। অনেকে লিখছেন, আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম। নাটকটি দেখে অনুপ্রেরণা পেয়েছি। দর্শকের এই আবেগ সত্যিই আমাকে ছুঁয়ে গেছে।মেহজাবীন চৌধুরী
দর্শকদের এসব আবেগঘন অনুভূতি মেহজাবীনকে ছুঁয়ে গেছে। গত সোমবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘অনেকে বিষণ্নতার কথা চেপে রাখার চেষ্টা করেন। তবে নাটকটি দেখে দর্শকেরা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা লিখছেন, বিষণ্নতার কথা তুলে ধরছেন। অনেকে লিখছেন, আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম। নাটকটি দেখে অনুপ্রেরণা পেয়েছি। দর্শকের এই আবেগ সত্যিই আমাকে ছুঁয়ে গেছে।’
দর্শকেরা বলছেন, নিশাত চরিত্রের মধ্যে তাঁরা লীন হয়েছেন। এই চরিত্রের মধ্যে মেহজাবীন কতটা আছেন? এই তারকার ভাষ্যে, ‘যে ধরনের চরিত্রের সঙ্গে আমার মিল নেই, সে ধরনের চরিত্রে চ্যালেঞ্জ থাকে। আমি বরাবরই চ্যালেঞ্জ নিতে ভালোবাসি। নিশাত চরিত্রের সঙ্গে আমার খুব বেশি মিল না থাকলেও আমাদের আশপাশে অনেক নিশাত আছে।’
ছকভাঙা চরিত্রে তিনি আলাদা
টিভি নাটক ও ওটিটিতে বরাবরই ছকভাঙা ও নারীপ্রধান গল্পে দেখা যায় মেহজাবীনকে। তিথিডোর-এর মতো গল্প ঢাকার নাটকে খুব বেশি দেখা যায় না; নিশাতের মতো ছকভাঙা চরিত্রে নিজেকে সমসাময়িকদের চেয়ে আলাদা করেছেন তিনি।
গত বছরের শেষ ভাগে মোস্তফা কামাল রাজের ‘অনন্যা’ নাটকে অভিনয় করেও আলোচিত হয়েছেন তিনি। নাটকে অনন্যা চরিত্রে অভিনয় করে মেরিল–প্রথম আলো পুরস্কার-২০২৩ পেয়েছেন। কর্মজীবী এক মায়ের সংগ্রামের গল্পে নির্মিত নাটকটি বহু দর্শককে অনুপ্রাণিত করেছে।
‘এ ধরনের কনসেপ্ট নিয়ে খুব একটা কথা হয় না। আমি আমার কাজের মাধ্যমে সমাজে ইমপ্যাক্ট রাখার চেষ্টা করি,’ বলেন এই তারকা অভিনেত্রী।
এর বাইরে ‘সাবরিনা’সহ আরও কয়েকটি নারীপ্রধান গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্রে দেখা গেছে তাঁকে। পাশাপাশি ভিকি জাহেদের আলোচিত ফ্র্যাঞ্চাইজি ‘পুনর্জন্ম’র রোকেয়া চরিত্রে অভিনয় করে সমালোচকদের পাশাপাশি দর্শকদের কাছেও সমাদৃত হয়েছেন তিনি।
এ ধরনের কনসেপ্ট নিয়ে খুব একটা কথা হয় না। আমি আমার কাজের মাধ্যমে সমাজে ইমপ্যাক্ট রাখার চেষ্টা করি।মেহজাবীন চৌধুরী
মেহজাবীনের প্রশংসায় রঞ্জিত মল্লিক
মেহজাবীনের অভিনয়ের প্রশংসা করেছেন কলকাতার প্রখ্যাত অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিক ও তাঁর স্ত্রী দীপা মল্লিক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক ভিডিও বার্তায় তাঁরা জানান, তাঁরা মেহজাবীন ও অপূর্বর নাটক নিয়মিত দেখেন। তাঁদের নাটক দেখার জন্য তাঁরা অপেক্ষায় থাকেন।
রঞ্জিত মল্লিক দম্পতির প্রশংসায় আপ্লুত মেহজাবীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওনারা আমার কাজ দেখেন, এটা জানা ছিল না। এটা গর্বের বিষয়। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বাইরের মানুষও আমার কাজ দেখছেন, প্রশংসা করছেন, এটা শুধু আমার নয়, ইন্ডাস্ট্রির জন্য গর্বের।’
নির্মাতা-অভিনেত্রী জুটি
মেহজাবীনের ক্যারিয়ারের সেরা কাজগুলো যাঁরা নির্মাণ করেছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম নির্মাতা ভিকি জাহেদ। এই নির্মাতার ‘পুনর্জন্ম’, ‘রেডরাম’, ‘চিরকাল আজ’, ‘চম্পা হাউজ’ থেকে ‘তিথিডোর’-এর মতো আলোচিত কাজ করেছেন তিনি।
ভিকি জাহেদের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে মেহজাবীন বলেন, ‘আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে কম পরিচালকই আছেন, যাঁরা নারীকেন্দ্রিক কাজ করার সাহস রাখেন। সেখানে ভিকি জাহেদ ভাই বরাবরই নিরীক্ষাধর্মী কাজ করার চেষ্টা করেন।’
এই অভিনেত্রীর ভাষ্যে, ‘তিনিও (ভিকি জাহেদ) যে ধরনের কাজ করতে চান, আমিও তেমন ধরনের চ্যালেঞ্জিং গল্পে কাজ করতে চাই। নির্মাতা ও শিল্পীর চাওয়া মিলে গেলে অনেক কাজ করার সুযোগ তৈরি হয়। দর্শকেরাও আমাদের কাজ পছন্দ করছেন।’
সামনে সিনেমা
টিভি নাটকের কাজ অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছেন মেহজাবীন চৌধুরী। টুকটাক নাটক করলেও আপাতত সিনেমা ও সিরিজেই থিতু হয়েছেন তিনি। ১৪ বছরের ক্যারিয়ারে ২০২৩ সালে নিজের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘সাবা’র কাজ শেষ করেছেন তিনি। নির্মাতা মাকসুদ হোসেন পরিচালিত ছবিটি মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে।
দ্বিতীয় পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা ‘প্রিয় মালতী’র কাজও শেষ করেছেন। ফ্রেম পার সেকেন্ড ও চরকির যৌথ প্রযোজনায় সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন শঙ্খ দাশগুপ্ত। এ ছবিও রয়েছে মুক্তির অপেক্ষায়।
দুটিই নারীপ্রধান গল্পের সিনেমা, এগুলোর কেন্দ্রীয় চরিত্রে থাকছেন এই তারকা। সামনে আরও কয়েকটি সিনেমায় দেখা যাবে তাঁকে, চূড়ান্ত ঘোষণার জন্য অনুরাগীদের অপেক্ষায় থাকতে হবে।