আবুল হায়াত
আবুল হায়াত

এমন মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারিনি: আবুল হায়াত

দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করছেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে এই আন্দোলন ঘিরে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে গত শুক্রবার কথা হয় নাট্যজন আবুল হায়াতের সঙ্গে। প্রতিক্রিয়া প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো

আমি খুব মর্মাহত। গতকাল (বৃহস্পতিবার) আমি কেঁদেছি। মৃত্যুর খবরে আমার কান্না থামাতে পারছিলাম না। বাচ্চাগুলোর একটার পর একটা মৃত্যুর খবর আসছিল, আমার কান্না কিছুতেই আটকে রাখতে পারিনি। আমি অসুস্থ, এখন বেশির ভাগ সময় বাসায় থাকি, কোথাও বের হই না—আমি তো ভাবতেই পারি না, ছোট ছোট বাচ্চার সঙ্গে এমনটা হতে পারে! আমাদের পুলিশ বাহিনী তাদের সামনে দাঁড়ানো কাউকে এভাবে মারবে, এটা কল্পনারও অতীত।

অনেক কিছু মনে আসে, লিখিও না, বলিও না—চুপচাপ থাকি; কিন্তু আমাদের সহ্যেরও তো একটা সীমা আছে। মনেরও তো কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা থাকে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) কি যে কান্না কেঁদেছি, আমার মেয়েরা আমাকে ফোন করে কত সান্ত্বনা দিয়েছে। বলেছে, কেঁদে কী লাভ, কেঁদে কিই–বা করবে; কিন্তু তারপরও আমি কেঁদেছি। না কেঁদে থাকতে পারিনি।

আমাদের বিল্ডিংয়ের একটা ফ্ল্যাটের একটা ছেলে মারা গেছে, ফারহান ফাইয়াজ। ওর মা–বাবা এবং আমরা একই বিল্ডিংয়ে থাকি। পুরো পরিস্থিতি নিয়ে আমার বলার কিছু নেই। সরকার অনেক দেরি করে ফেলেছে। যেটা এক দিনে সমাধান সম্ভব ছিল, সেটা তারা অনেক সময় নিয়ে করল—কষ্টটা এখানেই লাগে।

সেই একই সমাধানে তো এল তারা, যেটা বলেছিল সম্ভব না, সেটাই তো তারা এক দিনের ব্যবধানে করল! সুতরাং এটা সেদিনই সম্ভব ছিল, প্রথম দিন না হলে দ্বিতীয় দিনে সম্ভব হতো। এ জন্যই বলি, সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের দশ ফোঁড়। অনেক কষ্ট পেয়েছি। আমি আসলে এই কষ্ট প্রকাশ করতে পারব না। আমার চোখ এখনো ছলছল করছে। আমি এমন মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারিনি।