‘ক্লোজেট ল্যান্ড’ নাটকের দৃশ্য। ছবি: অপেরার সৌজন্যে
‘ক্লোজেট ল্যান্ড’ নাটকের দৃশ্য। ছবি: অপেরার সৌজন্যে

আজ থিয়েটার অপেরার নাটক ‘ক্লোজেট ল্যান্ড’

কিছু নাটকের কিছু নির্দিষ্ট দৃশ্য দেখার জন্যই চোখ টানে, মন জুড়ায়, তবু খিদে মেটে না। থিয়েটার অপেরার তেমনই এক নাটক ‘ক্লোজেট ল্যান্ড’। একটি ক্লোজেটের ভেতর লুকিয়ে পালানো এক মেয়েশিশুর গল্প, যে বড় হয়ে লেখক হয়। আর লিখে বসে সেই ক্লোজেটকে নিজের একটি আলাদা জগৎ ভেবে সাজানো কিছু চরিত্রের উপাখ্যান। কেমন করে সেই গল্প হয়ে ওঠে একটি আস্ত রাষ্ট্রব্যবস্থার রূপক, তারই জন্য রিমান্ড সেলে আরও একবার মানসিক ও শারীরিক অত্যাচারের ভেতর দিয়ে যাওয়ার একটা যাত্রা তুলে ধরে এ নাটক।
নাট্যকার রাধা ভরদ্বাজের আলোচিত ইংরেজি নাটক ‘ক্লোজেট ল্যান্ড’-এর বাংলা অনুবাদ করেছেন নাহিদ স্মৃতি। নাট্যকারের অনুমতি সাপেক্ষে (রয়‍্যালটির অর্থ প্রদান করে) প্রথমবারের মতো নাটকটি বাংলাদেশে মঞ্চায়িত হচ্ছে। সাজ্জাদ সাব্বিরের নির্দেশনায় ২০২৩  সালের ১৫ ডিসেম্বর ঢাকার মঞ্চে উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হয় নাটকটির।
নাটকে নাম অনুল্লিখিত এক শিশুসাহিত্যিক মুখোমুখি হন এক নাম না-জানা জিজ্ঞাসাবাদকারী কর্মকর্তার।

শুরু হয় এক বাঘবন্দী খেলা! জিজ্ঞাসাবাদকারী কর্মকর্তা আর বন্দী সাহিত্যিকের কথোপকথন যত গভীরে যেতে থাকে, ততই এমন সব গোপনীয়তা উন্মোচিত হতে থাকে, যা আরও গভীরতর সব প্রশ্নকে সামনে এনে দাঁড় করায়। নাহিদ স্মৃতি ও সাজ্জাদ সাব্বির অভিনীত দুই চরিত্রের নাটকটিতে উঠে এসেছে মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, শিশু নির্যাতন, ক্ষমতার অপব্যবহারের মতো গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়।

ক্লোজেট ল্যান্ড’ নাটকের দৃশ্য। ছবি: অপেরার সৌজন্যে

নাটক প্রসঙ্গে নির্দেশক বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই অদ্ভুত এক নীরবতার সময় পার করছি আমরা। যেন সবাই ভয়ে নিশ্চুপ হয়ে আছি! ভয় অজানার, ভয় নতুনের, ভয় অপমানের, ভয় সুবিধা হারানোর! রাধা ভরদ্বাজ “ক্লোজেট ল্যান্ড” নাটকের দুটি চরিত্রকে এমনই এক ভয়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে ভয়েরই বিরুদ্ধে একটা কাউন্টার ন্যারেটিভ তৈরি করছেন। নিজের আত্মপ্রহরতাকে (সেল্ফ সেন্সরশিপ) প্রশ্ন করার জন্য এই নাটককে বেছে নেওয়া আমার কাছে যথোপযুক্ত মনে হয়েছে। যেখানে নাট্যকার ভীতি প্রদানকারীদের কদর্য মুখাবয়ব দ্ব্যর্থহীনভাবে তুলে এনেছেন, শিল্পের শর্ত ক্ষুণ্ন না করেই।’

ক্লোজেট ল্যান্ড’ নাটকের দৃশ্য। ছবি: অপেরার সৌজন্যে

অপেরার দলপ্রধান মাহাবুব আলমের ভাষ্য, ‘নাটকটি মঞ্চস্থ করার কথা আমরা কয়েক বছর ধরেই ভাবছিলাম। নাট্যকারের অনুমতি ও রয়‍্যালটি-সংক্রান্ত প্রক্রিয়ায় কিছুটা দেরি হয়ে গেলেও ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে আমরা মঞ্চে আনতে সক্ষম হই! প্রথম মঞ্চায়নের পর থেকেই নাটকটি দর্শকমহলে দারুণ প্রশংসা অর্জন করে। এর মধ্যেই আমরা নাটকটির পাঁচটি সফল মঞ্চায়ন সম্পন্ন করেছি! প্রযোজনাটির নিয়মিত মঞ্চায়ন ও ভবিষ্যৎ সাফল্য নিয়ে অপেরা আশাবাদী।’

ক্লোজেট ল্যান্ড’ নাটকের দৃশ্য। ছবি: অপেরার সৌজন্যে

দ্বৈত অভিনয়ের নাটক ‘ক্লোজেট ল্যান্ড’ চমকের ঠাসবুনন। দুটি চরিত্রই একেকটা নীরব অভ্যুত্থানের নামান্তর। প্রচণ্ড দ্বন্দ্ব আর সংঘাতেও যে চিৎকার না করে, উত্তেজিত না হয়ে একদম শীতল থেকে কেবল মানসিক দৃঢ়তা দিয়ে বিপরীত পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া যায়, তা-ই দেখানো হয়েছে এই নাটকে। এই নাটকের মূল প্রতিপাদ্যই হলো, ভয় থেকেই হয় শক্তির জন্ম।
থিয়েটার অপেরার ১৫তম প্রযোজনা ‘ক্লোজেট ল্যান্ড’। আজ শুক্রবার বিকেল ৫টা ও সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে এবং আগামীকাল শনিবার সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে বেইলি রোডে বাংলাদেশ মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহীম মিলনায়তনে নাটকটির পরপর তিনটি প্রদর্শনী হতে যাচ্ছে।