১২ দিনব্যাপী কান চলচ্চিত্র উৎসব শুরু হয়েছে। বরাবরের মতো ফ্রান্সের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের শহর কানে বসেছে চলচ্চিত্রজগতের সম্মানজনক এ আসর। এখন পর্যন্ত জানা খবর, অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে আশনা হাবিব ভাবনা সেখানে পৌঁছেছেন। নিজের আগ্রহ থেকে কান চলচ্চিত্র উৎসবের অভিজ্ঞতা সরাসরি নিতে তাঁর এই যাওয়া। বাংলাদেশ সময় ১২ মে দিবাগত রাতে ভাবনা কান চলচ্চিত্র উৎসব আয়োজনে অংশ নিতে সেখানে পৌঁছান। পৌঁছেই ফেসবুক পোস্টে ভাবনা লিখেছেন, ‘ফ্রম পুরান ঢাকা টু ফেস্টিভ্যাল ডি কান।’
মা-বাবা ও একমাত্র ছোট বোন নিয়ে এখন ঢাকার ধানমন্ডিতে থাকলেও একটা সময় ভাবনার কেটেছে পুরান ঢাকায়। পড়াশোনার পাশাপাশি ছোটবেলায় মা–বাবা তাঁকে ভর্তি করিয়ে দেন নাচের স্কুলে। নাচের শিল্পী হিসেবে ভাবনার রয়েছে জাতীয় পুরস্কারও। মায়ের ইচ্ছা ছিল, মেয়ে গানেও পরিচিতি পাক। কিন্তু ভাবনা সবচেয়ে বেশি পরিচিতি পান অভিনয়ে। ছোট পর্দার পাশাপাশি একটা সময় বড় পর্দায়ও অভিনয় শুরু করেন। এখন তো অভিনয়ের নতুন মাধ্যম ওটিটিতেও কাজ করছেন তিনি।
স্কুলে থাকতেই নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর পরিচালনায় প্রথম অভিনয়ে নাম লেখান। অনেকটা শখের বশে অভিনয় শুরু করা ভাবনা একটা সময় এসে অভিনয়ে আনন্দ খুঁজে পান। অভিনয়টাকেই এখন ধ্যানজ্ঞ্যান মনে করছেন। বিভিন্ন নাটকে বৈচিত্র্যময় চরিত্রে অভিনয় করে নিজেকে প্রমাণ করেছেন এই অভিনয়শিল্পী।
নিজের অভিনয়জীবন শুরু প্রসঙ্গে ভাবনা বলেন, ‘আমার বাবা থিয়েটারের মানুষ। আমি অভিনয়শিল্পী হব, এমনটা ভাবিনি। যেন অনেকটা “দেখি না কী হয়”—এমনভাবেই আমার অভিনয়ে পা ফেলা। তবে এখন আমি একজন সু-অভিনেত্রীই হতে চাই। মাঝেমধ্যে ভাবি, আমার অভিনয় দেখে আমাকে কি কেউ মনে রাখবে অড্রে হেপবার্নের মতো!’
সিংহ রাশির জাতক ভাবনার খুবই প্রিয় অভিনয়শিল্পী রোমান হলিডের অড্রে হেপবার্ন; এমনকি তাঁর চুলের কাটেও আছে সেই রাজকন্যার ছায়া। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ব চলচ্চিত্রের আরও অনেকে তাঁর প্রিয় তালিকায় আছেন। বিশ্ব চলচ্চিত্রের প্রিয় সব তারকার বিশ্বের মর্যাদাপূর্ণ আসর কান চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নেওয়ার খবর শুনেছেন। যখনই এমনটা শুনতেন, মনের মধ্যে স্বপ্ন আঁকতেন, তিনিও একদিন যাবেন কান চলচ্চিত্র উৎসবে। তাঁর অভিনীত সিনেমাও প্রদর্শিত হবে। সিনেমা প্রদর্শনের স্বপ্ন আপাতত পূরণ না হলেও এবার নিজ উদ্যোগে উৎসবটি সশরীর দেখে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। বছরের শুরুর দিকে ভাবনা মনস্থির করেন, তিনি কান চলচ্চিত্র উৎসবে যাবেন। অভিজ্ঞতা নেবেন। সুযোগ মিললে বিশ্ব চলচ্চিত্রের রথী-মহারথীদের সামনাসামনি দেখবেন, কথা বলার সুযোগ পেলে তা লুফেও নেবেন। এই যাত্রায় কতটা কী হবে, তা সময়ই বলে দেবে।
গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যায় যখন প্রথম আলোর সঙ্গে ভাবনার কথা হচ্ছিল, তখন তিনি সাল দেবুসি মিলনায়তনে নেপোলিয়ন ছবিটি উপভোগ করছিলেন। বলছিলেন, ‘এটা সত্যিই স্বপ্নের মতো। এই মিলনায়তনে ছবি দেখছি। কখনো ভাবিনি, পুরান ঢাকার একটা মেয়ে আমি, বাংলাদেশের মতো ছোট্ট দেশে অভিনয় করছি। এখন বিশ্ব চলচ্চিত্রের মর্যাদাপূর্ণ আসর কান চলচ্চিত্র উৎসবে এসে সিনেমাও দেখছি। কী অসাধারণ পরিবেশ! সবাই মগ্ন হয়ে ছবি দেখছেন। মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই।’ ছবি দেখতে আসার আগে ভারতীয় সাংবাদিকদের সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বলে জানান ভাবনা।
ছোট পর্দার অভিনেত্রী ভাবনাকে বড় পর্দায় প্রথম দেখা যায় ‘ভয়ংকর সুন্দর’ চলচ্চিত্রে। অনিমেষ আইচ পরিচালিত ছবিতে ভাবনার বিপরীতে অভিনয় করেন ভারতের পরমব্রত চট্টোপধ্যায়। এরপর ভাবনাকে লাল মোরগের ঝুঁটি চলচ্চিত্রেও দেখা গেছে। মুক্তির অপেক্ষায় আছে ভাবনার তিন চলচ্চিত্র। ‘যাপিত জীবন’, ‘দামপাড়া’ ও ‘পায়েল’।
কান চলচ্চিত্র উৎসবে নিজের অভিনীত কোনো ছবি না থাকা সত্ত্বেও কেন সেখানে যাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছেন ভাবনা, এমন প্রশ্নে বললেন,‘একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবে নিজেকে আন্তর্জাতিকভাবে দেখতে চাই। এই উৎসবে আসাটা আমার সেই প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করছি। সে হিসেবে এখানে আসাটা আমার স্বপ্নপূরণের প্রাথমিক একটা ধাপ। আমি নিজের যোগ্যতায় কান চলচ্চিত্র উৎসব কর্তৃপক্ষ থেকে আমন্ত্রণপত্র পেয়েছি, এটা আমার জন্য অনেক সম্মানের। বিশ্ব চলচ্চিত্রের সেরা মানুষদের কাছ থেকে দেখাটাও আমার জন্য ভীষণ ভালো লাগার।’