২১ জানুয়ারি রাত ১টা ১৬ মিনিটে একটি মঞ্চনাটকের কয়েকটি স্থিরচিত্রসহ ২২২ শব্দের একটি স্ট্যাটাস লিখেছেন অভিনেত্রী ভাবনা। সেখানে তিনি সদ্য দেখা মঞ্চনাটক ‘হিমুর কল্পিত ডায়েরি’ দেখার অভিজ্ঞতা বিনিময় করেছেন। জানিয়েছেন নিজের অনুভূতি। ভাবনার সেই লেখাটি হুবহু তুলে ধরা হলো। সঙ্গে ‘হিমুর কল্পিত ডায়েরি’ নাটকের কিছু দৃশ্য এবং ভাবনার সাম্প্রতিক কিছু ছবি শেয়ার করা হলো।
‘“হিমুর কল্পিত ডায়েরি” দেখলাম, নাটকটি মঞ্চে একাই অভিনয় করলেন অভিনেতা সাদ্দাম রহমান। একজন অভিনেতা কতটা দক্ষ হলে এতক্ষণ ধরে দর্শক সারির সবাইকে হাঁ করে বসিয়ে রাখতে পারে, কতটা পরিশ্রম থাকলে দর্শক তার সাথে কাঁদতে পারে, তার ব্যথা অনুভব করতে পারে। আমি যতবার থিয়েটার দেখি, অভিনেতা হিসেবে নিজেকে তুচ্ছ মনে হয়, মঞ্চে যখন একজন অভিনেতাকে দেখি, আর সে যখন দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে, ইস আমার গা শিরশির করে, একটা নাটকের মাধ্যমে পরিচালক মুক্ত নীল যে প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন আমাদের সকলের কাছে, এটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় পাওয়া। আমি নাটক দেখতে দেখতে কখনো কাঁদছি, কখনো ক্ষোভে পা শক্ত করে ফেলছি, এই নাটকটি মানুষ হিসেবে, নারী হিসেবে আমাকে যে নাড়া দিয়েছে, তা নিয়ে থমকে ছিলাম কিছুক্ষণ।
আমি বা আমরা চুপ করে থাকি, এই নাটকের লাইনের মত আমিও বিশ্বাস করি প্রতিটা আত্মহত্যা একটি হত্যা, যে বা যারা মানুষটিকে আত্মহত্যা পর্যন্ত নিয়ে এল, এরা প্রত্যেকেই খুনি। আর ধর্ষণ? শারীরিক ধর্ষণ তো চলছেই, আর মানসিক ধর্ষণ?? আমরা চুপ থাকি, প্রতিবাদ করতেও ভয় আমাদের, আজকে নাটক থেকে বেরিয়ে আমি সাহস করেছি, কী সাহস সেটা অন্য কখনো বলব, আমার আজকের এই সাহসটার জন্যে অভিনেতা সাদ্দাম রহমান আপনাকে আমার শ্রদ্ধা অভিনেতা হিসেবে, এবং নির্মাতা মুক্ত নীল আপনাকেও, আপনার “ভগবান পালিয়ে গেছে”ও আমি দেখেছি, সেটিও অসাধারণ। খুবই শক্তি নিয়ে বাড়ি ফিরলাম মানুষ হিসেবে, অভিনেতা হিসেবে।’
থিয়েটার অঙ্গনে বহুল আলোচিত এই নাটকটির রচনা ও নির্দেশনায় রয়েছেন মুক্তনীল। একজন নওশাদ হাসান হিমু ওরফে হিমালয় হিমু, প্রথম যাঁর কথা ২০১৩-এর ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিকে কেন্দ্র করে মানুষ জানতে পারে। এক উন্মাদনার বশে ধ্বংসস্তূপ থেকে আহত ও নিহত লোকজনকে উদ্ধার করেন তিনি। এরপর ২০১৯ সালের ২৪ এপ্রিল গায়ে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যা করেন হিমু।
হিমুর প্রয়াণের তিন বছর অতিবাহিত হতে যাচ্ছে। হিমুকে কেন্দ্র করে এই নাটকের মধ্য দিয়ে সমাজের নানাবিধ বিচারহীনতার বাস্তব রূপকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছে ‘বাতিঘর’। নাটকটিতে অভিনয় করেছেন সাদ্দাম রহমানসহ বাতিঘরের নাট্যকর্মীরা। সংগীতে রয়েছেন মুহাইমিন অঞ্জন এবং আলোক প্রক্ষেপণে রয়েছেন তানজিল আহমেদ। এ ছাড়া ‘মাংকি ট্রায়াল’, ‘ঊর্ণাজাল’, ‘র্যাডক্লিফ লাইন’সহ বেশ কিছু আলোচিত নাটক রয়েছে বাতিঘরের ঝুলিতে।