গল্পটা অনেকেরই জানা। রাজার পুত্র হওয়ার কথা। কিন্তু কন্যা হলো। কন্যা হলেও পুত্রের মতো করেই মানুষ হলেন চিত্রাঙ্গদা। একসময় শিকারে গিয়ে ‘স্বপ্নের নায়ক’ অর্জুনের সঙ্গে দেখা। কিন্তু ছেলের মতো মানুষ হওয়া চিত্রাঙ্গদাকে দেখে ছেলেই ভাবলেন অর্জুন এবং স্বাভাবিকভাবেই আকৃষ্ট হলেন না। এরপরই চিত্রাঙ্গদার মধ্যে একটা নারীসত্তা জেগে ওঠে।
রবীন্দ্রনাথের ‘চিত্রাঙ্গদা’ অবলম্বনে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের নতুন নাটক ‘অন্তরে বাহিরে চিত্রাঙ্গদা’। দলের এই ৪৭তম প্রযোজনাটির পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় আছেন সারা যাকের। আজ শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটায় রাজধানীর নাটক সরণির মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে নাটকটির উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হবে। আগামীকাল সন্ধ্যায় একই মঞ্চে নাটকটির দ্বিতীয় মঞ্চায়ন হবে।
আগেও নানা সময়ে ঢাকার মঞ্চে নৃত্যনাট্য কিংবা কাব্যনাট্য হিসেবে মঞ্চায়িত হয়েছে ‘চিত্রাঙ্গদা’। তারপরও ‘অন্তরে বাহিরে চিত্রাঙ্গদা’র কারিগরি মঞ্চায়নের কয়েকটি দৃশ্য দেখে মনে হলো সেট, সংলাপ, আলো, কোরিওগ্রাফি, পোশাক মিলিয়ে ঢাকার দর্শকদের জন্য এটি নতুন এক অভিজ্ঞতা হতে যাচ্ছে। নাগরিকের জ্যেষ্ঠ সদস্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর বলেন, নিজের দ্বৈত সত্তার সব দ্বন্দ্ব ও দ্বিধাকে জয় করে অর্জুনকে পাওয়ার অনন্য প্রণয় কথা ‘চিত্রাঙ্গদা’। রবীন্দ্রনাথের কাব্যনাট্য ও নৃত্যনাট্যের রসায়নে সেই আখ্যানেরই এক নবরূপায়ণ সবার সামনে তুলে ধরবে সারা যাকেরের ‘অন্তরে বাহিরে চিত্রাঙ্গদা’।
২০১৮ সালে ‘দ্য ওপেন কাপল’ নাটকের পর নতুন নাটক নির্দেশনা দিলেন সারা যাকের। তিনি বলেন, ‘দলপ্রধান আলী যাকেরের চিরপ্রস্থানের পর আমরা দীর্ঘ স্থবিরতায় ভুগছিলাম। ২০২৩ সালের শুরুতে “আলী যাকের নতুনের উৎসব” আয়োজন করলেও নাগরিকের কোনো নাটক সেখানে মঞ্চস্থ করতে পারিনি। সে উৎসবের পর “চিত্রাঙ্গদা” নিয়ে ভাবনা শুরু। খুব কম সময়ের মধ্যেই মহড়া শুরু করি আমরা। শুধু আমাদের দলই নয়, বরং নৃত্যকলা ও সংগীতভুবনের অনেকেই এই নাটকের সঙ্গে বিভিন্নভাবে সম্পৃক্ত হয়েছেন।’
প্রযোজনাটিতে কাব্য অংশ যেমন প্রাধান্য পেয়েছে, একইভাবে প্রাধান্য পেয়েছে গানও। নির্দেশক সারা যাকেরের ভাষায়, নৃত্যনাট্যের পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথ কাব্যনাট্যের মাধ্যমেও চিত্রাঙ্গদা নতুন রূপে নির্মাণ করেছেন। কিন্তু কাব্যনাট্যে তিনি চিত্রাঙ্গদার দ্বন্দ্ব ও চরিত্রের নির্মাণ এবং অর্জুনের আবির্ভাব যেভাবে বর্ণনা করেছেন, নৃত্যনাট্যে তা অনুপস্থিত। খুব স্বাভাবিকভাবেই সংগীত ও বিভিন্ন মুদ্রার মাধ্যমে আঙ্গিক প্রকাশটাই নৃত্যনাট্যে প্রাধান্য পেয়ে থাকে।
চিত্রাঙ্গদা নৃত্যনাট্যেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু ‘চিত্রাঙ্গদা’ কাব্যনাট্যে সংলাপের কথামালায় চিত্রাঙ্গদা ও অর্জুন চরিত্র দুটোকে বহুমাত্রিকতায় বিশ্লেষণ করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। চরিত্র দুটির ব্যক্তিত্বের দ্বন্দ্ব, আবেগ-অনুভূতি, প্রেম-ভালোবাসা, মিলন, মান-অভিমান, সম্পর্কের দূরত্ব ও শুভ পরিণয় কাব্যিক ভাষায় মেলে ধরেছেন। দর্শকের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘কিছু শব্দ ও সংলাপ শুনতে হয়তো অপরিচিত বা কঠিন মনে হবে। কিন্তু তার সঙ্গে যখনই অভিনয়, সংগীত ও নৃত্যের নান্দনিক সম্মিলন ঘটে, তখন তা হৃদয়গ্রাহী ও বোধগম্য হয়ে উঠবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
নাটকে চিত্রাঙ্গদা রূপে দেখা যাবে র্যাচেল প্রিয়াঙ্কা ও ফারজানা মুক্তোকে। এ চরিত্রের গানগুলো গেয়েছেন ফারহিন খান জয়িতা। নাটকের অর্জুন চরিত্রে অভিনয় করেছেন মাহফুজ রিজভী, তার গানগুলো গেয়েছেন রোকন ইমন। এ ছাড়া নাটকে আরও আছেন আবু নাসের, সন্দীপন দাস, জোবায়দুর রহমান, ওয়াহিদুজ্জামান মিথুন, আনিসুর রহমান, লাবনী বন্যা, ঐশ্বরিয়া মিত্র প্রমুখ।
সর্বশেষ ২০১৯ সালে ‘কালো জলের কাব্য’ মঞ্চে এনেছিল নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়। সাড়ে তিন বছর পর নতুন নাটক ‘অন্তরে বাহিরে চিত্রাঙ্গদা’ নিয়ে আসছে তারা।