নব্বইয়ের দশকে টেলিভিশন নাটকের প্রিয়মুখ আফসানা মিমি এখন অভিনয়ে অনিয়মিত। মাঝেমধ্যে ওটিটিতে দেখা যায় তাঁকে। এবার এই অভিনেত্রী ফিরছেন মঞ্চে। নিজের দল নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের প্রযোজনায় দেখা যাবে তাঁকে।
৩৩ বছর আগে ‘দর্পণ’ নাটক দিয়ে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে পথচলা শুরু হয় আফসানা মিমির। ২০০২ সালের শেষের দিকে ‘খাট্টা তামাশা’, ‘নূরলদীনের সারাজীবন’ ও ‘দেওয়ান গাজীর কিস্সা’ নাটকে দেখা গেছে তাঁকে। মাঝে ২০ বছর মঞ্চে দেখা যায়নি অভিনেত্রীকে। দুই দশক পর তিনি ফিরছেন ৩৩ বছর আগে অভিনয় করা সেই নাটক দিয়ে। মাঝে অবশ্য প্রাচ্যনাটে কাজ করেছেন এই অভিনেত্রী। এই দলের হয়ে ‘রাজা এবং অন্যান্য’ নাটকে ২০০৭ সাল থেকে টানা চার বছর অভিনয় করেছেন।
‘দর্পণ’ নাটকটির নির্দেশক নায়লা আজাদ নূপুর। মিমির ফেরার বিষয়টি পাকাপোক্ত, প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে। চরিত্রের নানা দিক নিয়ে নির্দেশকের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। পুরোদস্তুর মহড়া শুরু হবে শিগগিরই।
নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ে ফেরা নিয়ে বেশ রোমাঞ্চিত আফসানা মিমি। তার বেশ কয়েকটি কারণও আছে বলে জানালেন তিনি, ‘আমার রোমাঞ্চিত হওয়ার অনেকগুলো কারণ আছে, প্রথম কারণটা হচ্ছে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়। আমার মূল দল তো এটাই, এখানেই বেড়ে উঠেছি। সে জায়গাতে আবার অনেক বছর পর ফিরছি। ২০ বছরের বেশি সময় পর কাজ করতে যাচ্ছি।’
নাটকের পাশাপাশি আফসানা মিমি ‘দিল’, ‘চিত্রা নদীর পারে’, ‘নদীর নাম মধুমতী’, ‘প্রিয়তমেষু’, ‘পাপ-পুণ্য’, ‘পাতালঘর’–এর মতো চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে ওটিটিতে ‘নিখোঁজ’ ও ‘মহানগর ২’–এ অভিনয় করে নিজের জাত চিনিয়েছেন। বিরতির পর এসব কাজ করতে গিয়ে মঞ্চে ফেরার তাগিদ অনুভব করেন তিনি।
সেই ঘটনাটা বললেন এভাবে, ‘আমি দীর্ঘদিন ক্যামেরার পেছনে কাজ করেছি। প্রযোজনা ব্যবসায়ও ব্যস্ত ছিলাম। অভিনয় থেকে অনেকটা দূরে সরে গিয়েছিলাম। দুই বছর ধরে যখন একটু একটু করে অভিনয় করছিলাম; তখন প্রতিদিনই মনে হতো—আমি তো কিচ্ছু জানি না। কিচ্ছু হয় না। বারবার মনে হতো, আমার থিয়েটারের পাঠশালাটা যদি আবার ফিরে পেতাম, খুব ভালো হতো। থিয়েটার তো আমাদের কাছে শেখার সবচেয়ে বড় স্কুল, পাঠশালা। ওখানে গিয়ে একজন নির্দেশকের তত্ত্বাবধানে কাজ করি, শিখি, চর্চা করি—ওটা খুব মিস করছিলাম। ভাবছিলাম, ইশ্, কেউ যদি মঞ্চে কাজ করতে ডাকত আমায়, খুব ভালো হতো!’
ওই ভাবাভাবির সময়ে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায় থেকে অভিনয়ের প্রস্তাব পাই। সারা আপা (যাকের) ‘দর্পণ’ নাটকের আমাকে হ্যামলেটের মা চরিত্রের জন্য নির্বাচন করেন। এরপর নায়লা আজাদ নুপুরের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। এমনিতে তাঁর নির্দেশনায় কাজ করার অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল মিমির। ফেরার কাজটা তাঁর মাধ্যমে হওয়াতে ভীষণ উচ্ছ্বসিত মিমি, ‘ঘটনাটা গত মাসের। নূপুর আপা আমাকে ফোন করে জেনে নেন আগ্রহ ও সময় বিষয়ে। একে তো সারা জীবন তাঁর ভক্ত, মনের মধ্যে একটা সুপ্ত ইচ্ছা ছিল, যদি তাঁর সঙ্গে কাজ করতে পারতাম। আমরা যে সময়টায় কাজ করতাম, তিনি তখন দেশের বাইরে। তা ছাড়া তিনি তো একজন ফ্রিল্যান্সার ডিরেক্টর। যেভাবেই হোক, তাঁর সঙ্গে কাজ করার সুযোগটা হয়নি। এই প্রথম সুযোগ হলো।’
এদিকে দীর্ঘদিন পর মঞ্চে ফেরা নিয়ে কিছুটা সংশয়ও কাজ করছে আফসানা মিমির। কথা প্রসঙ্গে সেটাই জানালেন। তিনি বললেন, ‘জীবনে তো অনেক কিছু ঢুকে পড়েছে। নিজেকে আলাদা করে উৎসর্গ করতে হবে তো। আমি তো জানি, নাগরিক নাট্য সম্প্রদায় কতটা সিরিয়াস। এখন কতটা সময় দিতে পারি, সেটা নিয়ে একটু ভয় আছে।’
‘দর্পণ’ নাটকটি উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের হ্যামলেট থেকে হয়েছে, যেটার বাংলা রূপান্তর করেছিলেন আলী যাকের, তিনি নির্দেশনাও দিয়েছিলেন।
এই নাটকে ওই সময়টায় ছোট একটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন। একটা গানের দল ছিল, সেটাতে কাঁসর বাজাতেন মিমি, গলাও মেলাতেন। এবার তিনি অভিনয় করবেন হ্যামলেটের মায়ের চরিত্রে। এদিকে আবার যখন ফিরছেন, পাচ্ছেন পুরোনো বন্ধু ও সহকর্মীদেরও, যাদের মধ্যে আছেন শাহীন খান, গোলাম সরওয়ার, বাবলু ...। এত বছর পর মঞ্চে ফেরা, প্রিয় মানুষদের সঙ্গে কাজ করা ও বন্ধুদের দেখা পাওয়া—সবকিছু মিলিয়ে রোমাঞ্চিত মিমি।