এই বছরই পারিবারিকভাবে বিয়েটা সারবেন তরুণ অভিনেত্রী প্রিয়ন্তী উর্বী। চার মাস ধরে তারই পরিকল্পনা চলছে। আর চলছে বিয়ের কেনাকাটা।
‘উর্বী আপু বলছেন?’ ফোনের অপর প্রান্ত থেকে জিজ্ঞাসা করলেন এক তরুণ। তিনি একটি সংবাদপত্রের বিপণন বিভাগের কর্মকর্তা। কুশল বিনিময়ের পর উর্বীকে জানালেন, তাঁকে নিয়ে মা দিবসের একটি প্রচারণা ভিডিও প্রকল্প (প্রজেক্ট) করতে চান।
সেই প্রকল্প নিয়ে আলাপ আলোচনা করতে তারপর থেকে প্রায়ই দেখা-সাক্ষাৎ হতে থাকে, একপর্যায়ে দুজনের বন্ধুত্ব হয়ে যায়।
প্রকল্পটা শেষ পর্যন্ত হয়নি; তবে সেই তরুণকে বিয়ে করছেন তরুণ অভিনেত্রী প্রিয়ন্তী উর্বী। এই বছরই পারিবারিকভাবে বিয়েটা সারবেন তাঁরা। চার মাস ধরে তারই পরিকল্পনা চলছে। আর চলছে বিয়ের কেনাকাটা।
পাত্রের নামটা আপাতত বললেন না; তবে পরিচয় থেকে বিয়ের প্রস্তাব—সবটাই বললেন। বিয়ের প্রস্তাবের সেই গল্পটাও কম সিনেমাটিক না। পেশাগত আলাপের পর সম্পর্কটা তত দিনে বন্ধুত্বে গড়িয়েছে। তবে কখনো প্রেমের কথা বলা হয়নি। এর মধ্যেই এই জুলাইয়ে উর্বীর জন্মদিন ছিল।
জন্মদিনে ছয় বন্ধুকে নিয়ে কক্সবাজারে গিয়েছিলেন তিনি। সঙ্গে সেই বন্ধুও ছিল। সমুদ্রের তীরে বসে ছিলেন তাঁরা। তখনই সিনেমাটিক স্টাইলে নায়িকাকে পায়েল পরিয়ে দিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দেন ওই তরুণ।
ব্যাপারটা এরপর আর দুজনের মধ্যে আটকে থাকেনি; পারিবারিক পর্যায়ে গড়িয়েছে। কয়েক দফায় দুই পরিবারের মধ্যে আলাপ হয়েছে। একাধিকবার হবু পাত্রকে সাক্ষাৎকারও দিতে হয়েছে। তবে উর্বীর দাবি, তিনি নাকি প্রথম সাক্ষাৎকারেই উত্তীর্ণ হয়ে গেছেন। এখন শুধু বিয়ের দিনক্ষণ ঘোষণা বাকি। ‘উর্বী আপু বলছেন?’ থেকে বিয়ের প্রস্তাব—সিনেমার মতো এই দুই দৃশ্যের ব্যবধান বছরখানেক।
‘ও আমার খুব ভালো বন্ধু। বিয়ের প্রস্তাবের আগে আমরা প্রেম করিনি। প্রস্তাবের পর থেকে প্রেম করছি (হাসি)। ভাবলাম, দুই বছর আগে কিংবা পরে বিয়ে তো করতেই হবে। আমাদের বোঝাপড়া খুব ভালো,’ বলেন এই তরুণ অভিনেত্রী।
সংসার কীভাবে সাজাবেন, হানিমুনে কোথায় যাবেন, তা নিয়ে যাবতীয় পরিকল্পনাও সেরে ফেলেছেন তাঁরা। ঘুরতে ভালোবাসেন উর্বী। থাইল্যান্ড থেকে সিঙ্গাপুর; ঘুরেছেন সাতটিরও বেশি দেশ। হানিমুনে কোথায় যাবেন? পাত্রী বলছেন, মালয়েশিয়া। কারণ হিসেবে বলছেন, পাত্র মালয়েশিয়ায় সাড়ে তিন বছর পড়াশোনা করেছে। হানিমুনে গিয়ে তাঁর স্মৃতির জায়গাগুলো নববধূকে ঘুরে দেখাতে চান।
মডেলিং থেকে অভিনয়
প্রিয়ন্তী উর্বী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের স্নাতক। ২০১৯ সালে মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় অংশ নেন উর্বী। ২০২০ সালের শেষভাগে বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন। ২০২১ সালের মার্চে অনিরুদ্ধ রাসেলের ‘ভেজা বিড়াল’ নাটক দিয়ে অভিনয়ে নাম লেখান।
২০২২ সালে চরকির অ্যানথোলজি সিনেমা ‘এই মুহূর্ত’র ‘কোথায় পালাবে বলো রূপবান’ দিয়ে ওটিটিতে নাম লেখান। পরে ‘ক্যাফে ডিজায়ার’, ‘ইন্টার্নশিপ’, ‘অপলাপ’, ‘কালপুরুষ’-এর মতো আলোচিত ওয়েব সিনেমা-সিরিজে তাঁকে পাওয়া গেছে।
এখন অবশ্য নাটকেই তাঁকে দেখা যাচ্ছে বেশি। বুক পকেটের গল্প নামের একটি নাটকে অভিনয়ের পর দর্শকমহলে প্রশংসাও কুড়িয়েছেন উর্বী। এই সপ্তাহে মুক্তিপ্রাপ্ত প্রেমে ডুবি নাটকে অভিনয়ের জন্যও আলোচিত হয়েছেন। এতে প্রথমবারের মতো আরশ খানের সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন উর্বী।
দর্শকেরা নাটকটি পছন্দ করছেন। সামনে আরশ–উর্বীর আরও দুটি নাটক আসবে। এর মধ্যে একটি নাটকের শুটিংয়ে তোলা দুজনের একটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে; দুজনের রসায়নের প্রশংসা করছেন দর্শক। নাটকের দ্বিতীয় পর্বও আসতে পারে।
নাটকে বেশি কেন, জানতে চাইলে বললেন, ‘বুক পকেটের গল্প দেখার পর অনেকে বলেছেন, আপু আরও নাটক করেন। দর্শকেরা আমাকে পছন্দ করছেন। ফলে নাটকে নিয়মিত হয়েছি। তবে মাসের মধ্যে ২৫ দিনই নাটকে কাজ করব, ব্যাপারটা তেমন না। চিত্রনাট্য বেছে কাজ করব।’ সামনে আরও দুটি নাটক মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এতে উর্বীর বিপরীতে থাকছেন মীর রাব্বি ও খায়রুল বাসার।
সিনেমার কাজও করছেন উর্বী। বাণিজ্যিক সিনেমার বাইরে বিকল্প ধারার সিনেমা নিয়েই বেশি আগ্রহী তিনি। মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে নীলচক্র, জুন ও বকুলের বুকে রক্তকরবী নামে তিনটি সিনেমা।
ও ভালো কথা, উর্বী জানালেন, হবু বরের সঙ্গে পরিচয় ও বিয়ে নিয়ে স্বল্পদৈর্ঘ্য একটা চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিকল্পনাও তাদের রয়েছে।
আমাদের আশা, তাদের প্রথম প্রকল্পটা বাস্তবায়িত না হলেও প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখবে।