৭৮ জন নির্বাচক বাছাই করেছেন ৫০টি নন্দিত নাটক
৭৮ জন নির্বাচক বাছাই করেছেন ৫০টি নন্দিত নাটক

মঞ্চনাটক

৫০ বছরের নন্দিত ৫০ নাটক

স্বাধীনতার ৫০ বছরে সংস্কৃতি অঙ্গনের অন্যতম প্রাপ্তি মঞ্চনাটক। স্বাধীনতার পর একঝাঁক তরুণের হাতে গড়ে ওঠে বাংলাদেশের মঞ্চাঙ্গন। ৫০ বছর পর দেশের চলচ্চিত্র, সংগীত, নৃত্যসহ অন্যান্য মাধ্যমের পাশাপাশি সংস্কৃতিতে অবদান রেখে যাচ্ছে এই মাধ্যমটি।

সম্প্রতি এ অঙ্গনের কর্মকাণ্ডের অতীতে দৃষ্টি ফেরাতে বাছাই করা হয়েছে ৫০ বছরের নন্দিত ৫০ নাটক। ১০০ নাটকের একটি তালিকা থেকে ৭৮ জন নির্বাচক এ নাটকগুলো বাছাই করেছেন। তরুণ ও জ্যেষ্ঠ এ নির্বাচকদের মধ্যে ছিলেন রামেন্দু মজুমদার, প্রয়াত মান্নান হীরা, মফিদুল হক, নাসির উদ্দিন ইউসুফ, আব্দুল্লাহেল মাহমুদ, বিপ্লব বালা, ফয়েজ জহির, আজাদ আবুল কালাম, রাহমান চৌধুরী, মোহাম্মদ বারী, গোলাম সারোয়ার, মাসুম রেজা প্রমুখ।

এ ৫০ নাটকের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে ’পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’, ’দেওয়ান গাজীর কিস্‌সা’, ’কিত্তনখোলা’, ’কোপেনিকের ক্যাপ্টেন’, ’নূরলদীনের সারাজীবন’, ’এখনও ক্রীতদাস’, ’ম্যাকবেথ’, ’কেরামতমঙ্গল’, ’নানকার পালা’, ’গ্যালিলিও’, ’হাতহদাই’, ’কোকিলারা’, ’বিষাদ সিন্ধু’, ’চাকা’, ’শেষ সংলাপ’, ’দর্পণে শরৎশশী’, ’তুঘলক’, ’কোর্ট মার্শাল’, ’লোক সমান লোক’, ’গোলাপজান’, ’ইডিপাস’, ’জয়জয়ন্তী’, ’সক্রেটিসের জবানবন্দী’, ’বনপাংশুল’, ’সার্কাস সার্কাস’, ’এ ম্যান ফর অল সিজনস’, ’ময়ূর সিংহাসন’, ’আরজ চরিতামৃত’, ’প্রাচ্য’, ’সঙক্রান্তি’, ’নিত্যপুরাণ’, ’রাঢ়াঙ’, ’বিনোদিনী’, ’মানগুলা’, ’একশ বস্তা চাল’, ’অহরকণ্ডল’, ’অ্যাম্পিউটেশন’, ’রাজা এবং অন্যান্য...’, ’ধাবমান’, ’খনা’, ’কহে বীরাঙ্গনা’, ’মহাজনের নাও’, ’শাইলক অ্যান্ড সিকোফ্যান্টস’, ’জ্যোতিসংহিতা’, ’সে রাতে পূর্ণিমা ছিল’, ’ক্রাচের কর্নেল’, ’মাতব্রিং’, ’রিজওয়ান’, ’রহু চণ্ডালের হাড়’ ও ’লেট মি আউট’।

‘রাঢ়াঙ’ নাটকের দৃশ্য

মঞ্চনাটক নিয়ে এ জরিপটি করেছে থিয়েটারবিষয়ক সাময়িকী থিয়েটারওয়ালা। পত্রিকাটির ৩৩তম সংখ্যায় নির্বাচন করা হয়েছে মঞ্চনাটকের ৫০টি প্রযোজনা। ‘স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর: নির্বাচিত ৫০ প্রযোজনা’ শিরোনামে সংখ্যাটি রয়েছে প্রকাশের অপেক্ষায়। ইতিমধ্যে তাদের অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে স্বাধীনতার ৫০ বছরের নির্বাচিত সেই ৫০ নাটকের নাম, পোস্টার ও সেসব নাটক নিয়ে আলোচনা। তাদের তালিকায় যেমন রয়েছে স্বাধীনতার ঠিক পরের নাটক, তেমনি আছে বেশ কিছু নতুন নাটকও। জ্যেষ্ঠ নির্দেশকদের পাশাপাশি তরুণদের নির্দেশিত নাটকও আছে।

শিল্প–সংস্কৃতি বিষয়ে জরিপে সমালোচনার দায় এড়ানো কঠিন। এ বিষয়ে সাময়িকীটি দিয়েছে ব্যাখ্যা। থিয়েটারওয়ালার সম্পাদক হাসান শাহরিয়ার জানান, তাঁরা ১০০ নাটকের একটি তালিকা করে পাঠিয়েছিলেন নাট্যসংশ্লিষ্ট বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মানুষের কাছে। তাঁরা তালিকা নিয়ে নিজেদের মতামত পাঠিয়েছেন। তালিকার বাইরেও যোগ করেছেন বেশ কিছু নাম। ফলে তাঁদের পছন্দই নাটক নির্বাচনে গুরুত্ব পেয়েছে। প্রযোজনাসংশ্লিষ্ট নাট্যকার, দল, নির্দেশক ও কলাকুশলীদের নামও প্রকাশ করেছে পত্রিকাটি। তারা জানায়, এই তালিকায় থাকা প্রযোজনাগুলো ‘সেরা’ কিংবা ‘প্রধান’ নয়। তালিকার বাইরেও অনেক ভালো নাটক আছে। কেবল তালিকা সংক্ষিপ্ত করা এবং ৫০ বছর শেষে ৫০টি প্রযোজনা নির্বাচন করাই ছিল এর উদ্দেশ্য।

‘খনা’ নাটকের দৃশ্য

প্রযোজনাসংশ্লিষ্ট নাট্যকার, নির্দেশক ও কলাকুশলীদের নামও প্রকাশ করেছে পত্রিকাটি। যে শিল্পীর অন্তত তিনটি প্রযোজনা ৫০টি প্রযোজনার মধ্যে রয়েছে, রাখা হয়েছে তাঁদের নামও। নির্দেশনায় আছেন আবদুল্লাহ আল মামুন, আলী যাকের, মামুনুর রশীদ, সৈয়দ জামিল আহমেদ, নাসির উদ্দীন ইউসুফ ও আজাদ আবুল কালাম। নাট্যকার হিসেবে আছেন সেলিম আল দীন, মামুনুর রশীদ, সৈয়দ শামসুল হক, বার্টল্ট ব্রেখট। মঞ্চপরিকল্পক হিসেবে নাম রয়েছে সৈয়দ জামিল আহমেদ, শেখ মনসুর উদ্দিন আহমেদ, কামালউদ্দিন কবির, ফয়েজ জহির, কামরুজ্জামান রুনুর। আলোক পরিকল্পনাকারী হিসেবে আছেন সৈয়দ জামিল আহমেদ, ঠাণ্ডু রায়হান, কামরুজ্জামান রুনু, নাসিরুল হক খোকন, সৈয়দ লুৎফুর রহমান। পোশাকে শিমূল ইউসুফ ও কাজী তৌফিকুল ইসলাম। আবহসংগীত পরিকল্পনায় শিমূল ইউসুফ ও কে বি আল আজাদ রয়েছেন। রূপসজ্জায় বঙ্গজীৎ দত্ত, নূরুল হক ও শুভাশীষ দত্ত তন্ময়। পোস্টার ডিজাইনে আছেন আফজাল হোসেন, আনওয়ার ফারুক ও শাহীনুর রহমান। নাট্যদল হিসেবে আছে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়, থিয়েটার (বেইলি রোড), আরণ্যক নাট্যদল, ঢাকা থিয়েটার ও প্রাচ্যনাট।

‘কোর্ট মার্শাল’ নাটকের দৃশ্য

থিয়েটারওয়ালা আরও জানিয়েছেন, এখানে কোনো ক্রম উল্লেখ করা হয়নি। নাটক মঞ্চায়নের সময়কাল ধরে নামগুলো উল্লেখ করা হয়েছে কেবল। হাসান শাহরিয়ার বলেন, ‘যতগুলো ভালো নাটক নির্বাচন করি না কেন, এর বাইরেও ভালো নাটক থাকবে। আমি স্পষ্ট করে লিখে দিয়েছি, এই তালিকার বাইরেও যেকোনো নাটক নির্বাচকেরা পাঠাতে পারেন।’

রিজওয়ান নাটকের দৃশ্য

এ জরিপ নিয়ে পাওয়া গেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ কেউ একে অভিনন্দন জানিয়েছেন। কেউ আবার জরিপের প্রক্রিয়া নিয়ে তুলেছেন প্রশ্ন, আদৌ এই তালিকার গুরুত্ব কতখানি? তরুণ থিয়েটারকর্মী হুমায়ুন আজম বলেন, ‘নির্বাচন সততই আপেক্ষিক। বাংলাদেশের নাটকের ধারাবাহিক ইতিহাস পাঠের একটা পাঠসূত্র অন্তত পাওয়া গেল এবং নিশ্চিতভাবেই বাংলা নাটকের ইতিহাস সংরক্ষণ, গবেষণা ও একাডেমিক পাঠের খামতিটুকুও চকিত পাঠ করা গেল। সেই খামতির দিকে বরং নজর ফেরানো যাক।’

‘কহে বীরাঙ্গনা’ নাটকের একটি মুহূর্ত।

হাসান শাহরিয়ার বলেন, ‘আমরা কথায় কথায় বলি যে এখন আর ভালো নাটক হচ্ছে না। আমাদের সময়ের নাটক ছিল আসল নাটক। কিন্তু আমাদের মনে হয়েছে যে সব সময়ই কিছু ভালো নাটক হয়। স্বাধীনতার ৫০ বছরে তাই পঞ্চাশটি নাটক নির্বাচন করে দেখানো। তবে এর বাইরের নাটকগুলো আমরা খারিজ করে দিচ্ছি না। নাটকগুলোর তৎকালীন সমালোচনাও প্রকাশ করেছি। এটা একটা অসামান্য সংকলনও হবে।’

নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘এ ধরনের উদ্যোগ খুব একটা পছন্দ করি না। কারণ, এসব নিয়ে একটা বিতর্ক থেকেই যায়। তবে আমরাও উল্লেখযোগ্য নাটক চিহ্নিত করতে চাই। কিন্তু শিল্প–সংস্কৃতির ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব কিংবা প্রতিযোগিতা সমর্থন করি না।’