মারা গেছেন উপমহাদেশের বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী অমলাশঙ্কর। আজ শুক্রবার ভোরে ঘুমের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। গত ২৭ জুন ১০১ বছর পূর্ণ করেন অমলাশঙ্কর। বার্ধক্যের কারণেই অমলাশঙ্করের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁর নাতনি শ্রীনন্দা। তিনিই টুইটারে অমলাশঙ্করের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেন।
অমলাশঙ্কর ভারতীয় নৃত্যজগতের প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব উদয়শঙ্করের স্ত্রী। কালজয়ী সেতারবাদক রবিশঙ্কর তাঁর দেবর। উদয়-অমলার দুই সন্তান প্রয়াত সুরকার আনন্দশঙ্কর ও অভিনেত্রী-নৃত্যশিল্পী মমতাশঙ্কর।
আজ সকালে নাতনি শ্রীনন্দাই সোশ্যাল মিডিয়ায় অমলাশঙ্করের মৃত্যুর খবর প্রকাশ করেন। নানা সময়ের চারটি ছবি দিয়ে তিনি লেখেন, ‘১০১ বছর বয়সে আজ আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন ঠাম্মা। গত মাসেই ওঁর জন্মদিন পালন করেছিলাম আমরা। খুব অস্থির লাগছে, কারণ মুম্বাই থেকে কলকাতা যাওয়ার বিমান চলছে না। তাঁর আত্মার শান্তি পাক—এ কামনা করছি। একটা যুগের অবসান হলো। ঠাম্মা, তোমাকে খুব ভালোবাসি। সবকিছুর জন্য ধন্যবাদ।’
১৯১৯ সালের ২৭ জুন অবিভক্ত বাংলাদেশের যশোরে জন্ম অমলাশঙ্করের। গ্রামের সেই ছোট্ট মেয়ে ‘অম’ অসাম্প্রদায়িক উদার চেতনার বলয়ে বেড়ে উঠেছিলেন বাবার আদর্শে। শৈশবেই তাঁর প্রতিভার বিকাশ ঘটে। ১৯৩১ সালে মাত্র ১১ বছর বয়সে প্যারিসের ইন্টারন্যাশনাল কলোনিয়াল এক্সিবিশনে অংশগ্রহণ করেন তিনি। সেখানেই শঙ্কর পরিবার তথা স্বামী ও গুরু উদয়শঙ্করের সঙ্গে আলাপ কিশোরী অমলার। এরপরই উদয়শঙ্করের কাছে তালিম নিতে শুরু করেন তিনি। উদয়শঙ্করের ডান্স গ্রুপের সঙ্গে দেশ-বিদেশে ঘুরে অনুষ্ঠান পরিবেশন করতে থাকেন।
১৯৪২ সালে উদয়শঙ্করের সঙ্গে বিয়ে হয় অমলার। একাধিক সাক্ষাৎকারে অমলা জানিয়েছেন, এক দিন রাতে হঠাৎই তাঁর ঘরে এসে বিয়ের প্রস্তাব দেন উদয়শঙ্কর। ঘটনার আকস্মিকতায় কেঁদে ফেলেছিলেন তিনি। বিয়ের পর আরও বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে উদয়-অমলা জুটি। বিশ্বের বিখ্যাত নৃত্যশিল্পী জুটিদের মধ্যে অন্যতম হয়ে ওঠেন তাঁরা।
উদয়শঙ্কর পরিচালিত ছবি ‘কল্পনা’য় উমার চরিত্রে অমলার নৃত্যাভিনয় দেশ-বিদেশে প্রশংসিত হয়। কান চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয় সেটি। সেই সময় কান চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নেওয়া কনিষ্ঠতম তারকা ছিলেন অমলাশঙ্কর। তার ৮১ বছর পর ২০১২ সালে ফের কান চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দেন তিনি।
শুধু নৃত্য নয়, ছবি আঁকা হাত ছিল অমলাশঙ্করের। তবে যাঁর হাত ধরে শিল্পজগতে আধিপত্য বিস্তার তাঁর, সেই উদয়শঙ্করের সঙ্গে অমলার দাম্পত্যে একসময় চিড় ধরে। উদয়শঙ্করের জীবৎকালেই তাঁরা আলাদা থাকতেন। ১৯৭৭ সালে উদয়শঙ্করের মৃত্যু হয়।
উদয়-অমলার দুই সন্তান—প্রয়াত সুরকার আনন্দ ও মমতাশঙ্কর। মেয়ে এবং ছেলের স্ত্রী তনুশ্রীশঙ্করের সঙ্গে মিলে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত শঙ্কর ঘরানাকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন অমলাশঙ্কর। অমলাশঙ্করের প্রয়াণের সঙ্গে সঙ্গে একটি যুগের অবসান হলো।