মঞ্চনাটক

লড়াই করে ফিরতে হচ্ছে দলগুলোকে

‘আওরঙ্গজেব’ নাটকের দৃশ্য
সংগৃহীত

দীর্ঘদিন পর মঞ্চে ফিরছে নাটকের দল প্রাঙ্গণেমোর। আওরঙ্গজেব নাটকটি মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে নতুন স্বাভাবিকে প্রদর্শনী শুরু করতে যাচ্ছে দলটি। দীর্ঘদিন মঞ্চের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ফেরার জন্য মুখিয়ে ছিলেন প্রাঙ্গণেমোরের সদস্যরা। এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে বাবার সঙ্গে মঞ্চে উঠছে অনন্ত হিরা ও নূনা আফরোজ দম্পতির সন্তান প্রকৃতি শিকদার।

নতুন স্বাভাবিকের প্রথম প্রদর্শনীতে সহশিল্পী হিসেবে নিজেদের সন্তানকে পেয়ে উচ্ছ্বসিত অনন্ত হিরা। এ নিয়ে ফেসবুকে তিনি লেখেন, ‘একজন বাবা হিসেবে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার দিনটি আমার কাছে বিশেষ ভাবে “বিশেষ”। ওই দিনের ‘আওরঙ্গজেব’ নাটকের প্রদর্শনীটি আরও বিশেষ। নাট্যকার, নির্দেশক, অভিনেতা বা সংগঠক হিসেবে নয়, শুধুই একজন বাবা হিসেবে।’ অনন্ত হিরা জানান, এর আগেও দলের অনেক নাটকে অভিনয় করেছে প্রকৃতি। তবে শুক্রবার সন্ধ্যায় সে আওরঙ্গজেব নাটকে আওরঙ্গজেব-কন্যা ‘জিনাত আরা’ চরিত্রে মহিলা সমিতির মঞ্চে বাবার সহশিল্পী হতে যাচ্ছে।

গত ৫ মার্চ প্রাঙ্গণেমোর তাদের শেষ নাট্য প্রদর্শনীতে অংশ নেয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে। এত দিন পর নতুন একটি পরিবেশে প্রদর্শনী করতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে তাদের। ২০১২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর প্রথম মঞ্চস্থ হয় আওরঙ্গজেব। আজ হবে ৪৫তম প্রদর্শনী। অনন্ত হিরা বলেন, ‘দলের প্রায় সব সদস্য ঢাকার বাইরে। চাকরি হারিয়ে অনেকে গ্রামের বাড়িতে চলে গেছে। সেখান থেকে সবাইকে নিয়ে আসতে হচ্ছে। দলকে রীতিমতো পুনর্গঠন করতে হয়েছে। সেই দিক থেকে একটা ধকল গেছে। তারপরও মঞ্চে ফিরছি, এর একটা এক্সাইটমেন্ট আছে। গত ৩০ বছরে এত বড় বিরতি কখনো নিতে হয়নি।’

আওরঙ্গজেব নাটকের দৃশ্য

সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার প্রয়োজনে মিলনায়তনের আসন যাবে কমে। নাটক দেখতে দর্শকই বা কতটা আগ্রহী হবে? এসব নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে নাটকের দলগুলো। অনন্ত হিরা বলেন, ‘অনেকে স্ট্রাগল করে মঞ্চে ফিরছে, কিন্তু একটা শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। আসলে দর্শক কেমন হবে আমরা বুঝতে পারছি না। আমাদের একটা নতুন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। যেসব দর্শক মঞ্চ থেকে চলে গেছে, সেই তাদের আবার মঞ্চে ফিরিয়ে আনা আরেকটা লড়াই। এই জায়গায় দলগুলোর দায়িত্বশীলতা আরও বেড়ে গেল।’ তিনি মনে করেন, এই লড়াইয়ে প্রতিটি দলকেই আর্থিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। তাই প্রদর্শনীর ক্ষেত্রে নাটকের দলগুলোর জন্য অন্তত এক বছর মিলনায়তনের ভাড়া মওকুফ বা আর্থিক প্রণোদনার ব্যবস্থা করলে খুব ভালো হয়।

কাঁটাবনে নিজস্ব মহড়াকক্ষে নাটকের দল প্রাচ্যনাট আয়োজন করেছে উঠান নাটকের মেলা ‘মহলা মগন’। ৪ সেপ্টেম্বর শুরু হয় এ উৎসব। চলবে মাসব্যাপী। প্রতি সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার সন্ধ্যা সাতটায় দর্শনীর বিনিময়ে ২০ জন দর্শক এখানে নাটক দেখার সুযোগ পান। আজ ও আগামীকাল হান্ড্রেড বাই হান্ড্রেড, ২৫ ও ২৬ সেপ্টেম্বর কর্নেলকে কেউ চিঠি লেখে না এবং আগামী ২ ও ৩ অক্টোবর সেখানে ফাউস্ট অথবা অন্য কেউ নাটকটি দেখা যাবে।

‘হানড্রেড বাই হানড্রেড’ নাটকের দৃশ্য

নাটকের দলগুলোর জন্য এ এক নতুন অভিজ্ঞতা। দীর্ঘদিন প্রদর্শনী বন্ধ থাকায় থিয়েটারকর্মী ও দর্শকের তৈরি হয়েছে অনভ্যস্ততা। থিয়েটারচর্চায় তাদের ফিরিয়ে আনার একটা প্রস্তুতি হিসেবে প্রাচ্যনাটের এই নাট্যমেলা। দলটির মুখ্য সম্পাদক তৌফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রায় পাঁচ মাস পর প্রদর্শনী হচ্ছে। দর্শক আদৌ আসবে কি না, এটা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মনে হচ্ছিল। যেহেতু স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয় আছে, সে কারণে আমরা নিরাপত্তার ওপর জোর দিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন মহড়া করতাম। আমাদের অভ্যাসটা তৈরি করাই এই আয়োজনের উদ্দেশ্য। আমরা যদি আগের অবস্থান ফিরে পেতে চাই, তবে দর্শককেও আগের অভ্যস্ততায় ফিরিয়ে আনতে হবে। একসঙ্গে আমরাও তৈরি হচ্ছি, দর্শকও নাটক দেখার জন্য তৈরি হচ্ছে।’

দলটির অন্যতম সদস্য সাইফুল জার্নাল জানান, মহড়ার সময় নিজেদের স্বাস্থ্যবিধি মানাটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে সে চ্যালেঞ্জকে গ্রহণ করে আনন্দের সঙ্গেই কাজ করছেন তাঁরা।