কোনো বার্তা পৌঁছে দিতে শক্তিশালী ভূমিকা রাখে মূকাভিনয়। ঢাকাসহ সারা দেশে বহু তরুণকে মূকাভিনয়ের চর্চায় যুক্ত হতে দেখা যায়। কিন্তু এতে শেষ পর্যন্ত লেগে থাকা শিল্পী পাওয়া যাবে হাতে গোনা দু–একজন। মূকাভিনয়ের চর্চা অনিয়মিত। আজ বিশ্ব মাইম দিবস। এ উপলক্ষে দেখে নেওয়া যাক দেশের মাইমচর্চার বর্তমান চিত্র।
মূকাভিনয়শিল্পী পার্থপ্রতিম মজুমদার বলেছিলেন, ‘কথা না বলেও আমরা অনেক কথা বলি, ভাষা ব্যবহার না করেও আমরা এমন অঙ্গভঙ্গি করি, যা ভাষা উচ্চারণের চেয়েও অনেক প্রকট ও শক্তিশালী। যাকে নাম দেওয়া হয়েছে বডি ল্যাংগুয়েজ বা দৈহিক ভাষা। এগুলোর সম্মিলিত শিল্পই মূকাভিনয়।’ সামাজিক নানা অসংগতিকে মূকাভিনয়ের মাধ্যমে তুলে ধরার চর্চা বেশ পুরোনো। সে রকম একটি প্রযোজনা ঢাকায় মঞ্চস্থ করেছিল ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম অ্যাকশন। যৌন নির্যাতনের শিকার হলে আত্মহত্যা না করার আহ্বান জানিয়ে তাঁদের প্রযোজনা ‘হ্যাশট্যাগমিটু’ সাড়া ফেলেছিল। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠার ১২ বছরে পদার্পণ করে দলটি। ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম অ্যাকশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মীর লোকমান জানালেন, তাঁদের নিয়মিত সদস্যসংখ্যা ২০–৩০। বেশির ভাগ সদস্যই শিক্ষার্থী। লোকমান বলেন, ‘মূকাভিনয়কে একমাত্র পেশা হিসেবে নেওয়া কঠিন। পড়াশোনা শেষ করে অন্য একটি পেশায় যুক্ত হয়েছি। কিন্তু মূকাভিনয়চর্চা নিয়মিত চালিয়ে যাচ্ছি।’
মূকাভিনয় আঙ্গিক অভিনয়। এই শিল্পে যাঁরা নিয়মিত, তাঁদের অনেকেই অন্য শাখায় ভালো করছেন। তরুণ অভিনয়শিল্পী খায়রুল বাশার বলেন, ‘সাধারণ বক্তব্যকে সরল এবং ভিন্নমাত্রায় উপস্থাপন করার শক্তি দেখেই মূকাভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত হই। অভিনয়ের জন্য মূকাভিনয় তো বটেই, পথচলার প্রতিটা পদক্ষেপে কাজে লাগে।’ আরেক শিল্পী মৌসুমী মৌ ইতিমধ্যে সঞ্চালক হিসেবে কুড়িয়েছেন সুনাম। তিনিও নিয়মিত মূকাভিনয়ের চর্চা করতেন।
২০০৯ সালে বিশিষ্ট মূকাভিনেতা রিজওয়ান রাজন পরিচালিত প্যান্টোমাইম মুভমেন্ট থেকে ১০ দিনের একটি কর্মশালা করেছিলেন শহিদুল মুরাদ। ব্যতিক্রমী এই শিল্পমাধ্যমে কিছু করার ইচ্ছে হয় তাঁর। একে একে কর্মশালা করে ফেলেন কাজী মাশরুর হুদা, পার্থপ্রতিম মজুমদারের। একসময় উচ্চতর ডিগ্রি নেন ভারতের ন্যাশনাল মাইম ইনস্টিটিউট থেকে। বর্তমানে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের কাজের পাশাপাশি মাইমচর্চা করেন তিনি। টুকটাক অভিনয় ছাড়া পর্দার আড়ালেই বেশি সক্রিয় এই শিল্পী। ভারতের অরঙ্গবাদের সরস্বতী বিদ্যা ইউনিভার্সিটির নাট্যকলা বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষক (মূকাভিনয়) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। মূকাভিনয়ের অনুশীলন তেমন দেখা যায় না কেন—জানতে চাইলে শহিদুল মুরাদ বলেন, ‘আমাদের দেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মাইম শেখার সুযোগ নেই। তিন, পাঁচ বা সাত দিনের কর্মশালা থেকে খুব বেশি শেখা যায় না। বাংলাদেশে মাইমের ওপর পোস্টগ্র্যাজুয়েশন করেছেন, এ রকম ব্যক্তি আছেন তিনজন। যদিও বৈশ্বিক নিরিখে আমাদের দেশের মাইমচর্চা অনেক অগ্রসর।’ দ্য মামারস দলের নেতা শহিদুল মুরাদ বলেন, ‘আমরা আশাবাদী। কারণ, আমাদের দেশের মাইম ওয়ার্ল্ড স্ট্যান্ডার্ড মেনে চর্চা করা হয়। বিজ্ঞাপন, নাটকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে মাইমকে গুরুত্ব দিলে মাইমের পাশাপাশি এ শিল্পমাধ্যমও লাভবান হবে।’
সংকটপূর্ণ সময়ে অনেক কথা বলার এক দারুণ শিল্প মূকাভিনয়। বাংলাদেশের শিল্পীরা কি সেই সংকটের অপেক্ষায় আছেন?