বাংলাদেশে কোনো নাটক দর্শকপ্রিয় হয়ে উঠলে সেটি টেনে বাড়ানো হয়। ‘ফ্যামিলি ক্রাইসিস’ ধারাবাহিকের পরিচালক মোস্তফা কামাল রাজ সেই পথে হাঁটতে চান না। প্রচারের পর থেকেই টেলিভিশন ও অনলাইনে এ নাটক দেখতে দর্শক অপেক্ষা করে থাকেন। তবু কেন এত দ্রুত নাটকটি শেষ করছেন?
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত মাসে হাসপাতালে ছিলেন ‘ফ্যামিলি ক্রাইসিস’ ধারাবাহিকের পরিচালক মোস্তফা কামাল রাজ। সেখানকার চিকিৎসক ও নার্সরাও তাঁকে ‘ফ্যামিলি ক্রাইসিস ভাই’ নামে সম্বোধন করতেন। জনপ্রিয় এ নাটক নিয়ে এর ভক্তদের জন্য আছে একটি দুঃসংবাদ। শিগগিরই শেষ হতে যাচ্ছে নাটকটি। তবে শেষের দিকে থাকবে বেশ কিছু চমক।
নির্মাতা মনে করেন, বাংলাদেশে কোনো নাটক দর্শকপ্রিয় হয়ে উঠলে সেটি টেনে বাড়ানো হয়। তিনি সেই পথে হাঁটতে চান না। প্রচারের পর থেকেই টেলিভিশন ও অনলাইনে এ নাটক দেখতে দর্শক অপেক্ষা করে থাকেন। তবু কেন এত দ্রুত নাটকটি শেষ করছেন? রাজ জানালেন, দর্শকপ্রিয় থাকতে থাকতেই নাটকটি শেষ করতে চান তিনি। তিনি বলেন, 'অন্য কোনো কারণে এই সিরিয়াল বন্ধ করে দিচ্ছি, তা কিন্তু নয়। এখনো দর্শকের কাছে নাটকটির চাহিদা আছে। আমার মনে হয়, ভালো জিনিস তাড়াতাড়ি শেষ হওয়াই ভালো। পরে দেখা যাবে নাটকটি নিয়ে মানুষের মধ্যে বিরক্তি তৈরি হয়েছে। আমি এর জনপ্রিয়তা কমাতে চাই না।’
তবে ধারাবাহিকটি নিয়ে একটি ভালো খবরও দিয়েছেন এই নির্মাতা। জানিয়েছেন, এক বছর বিরতি দিয়ে আবারও তিনি ‘ফ্যামিলি ক্রাইসিস’-এর দ্বিতীয় মৌসুম নিয়ে ফিরবেন। সেখানে একই পরিবারের পরের প্রজন্মের গল্প দেখানো হবে। রুমার বিয়ে হবে, পরিবারের স্কুলপড়ুয়া ছোট্ট মেয়েটি একটু বড় হয়ে প্রেম করছে। এসব ছাড়াও সেই মৌসুমে যোগ হবে নতুন আকর্ষণ। সবকিছুর পরও নাটকটি এখনো দর্শক আগ্রহ নিয়ে দেখেন। তবে নির্মাতার মতে, এই ধারাবাহিকের আহামরি কোনো মান নেই। প্রতিটি পর্বেই খুব ভালো গল্প দেখানো হয়, সেটাও তিনি মনে করেন না।
বড়জোর ধারাবাহিকতা বজায় রাখার চেষ্টা করেন। মূলত এখানে একটি পরিবারের প্রতিদিনের গল্প দেখানো হয়। নাটকটির জনপ্রিয়তার রহস্য তাহলে কী? জানতে চাইলে রাজ বলেন, ‘কোনো রহস্য নেই। আমাদের দর্শক গল্পে যখন নিজের বা পরিচিত কোনো চরিত্র দেখেন, তখনই তাঁরা নাটকের সঙ্গে ইনভল্ব হয়ে যান। গল্পগুলোকে পরিবারের সঙ্গে মেলাতে পারলেই তাঁরা আনন্দ পান। আমি মনে করি, দর্শক এই নাটকে তাঁর আশপাশের চরিত্রগুলোকে খুঁজে পান, যে চরিত্রগুলো তাঁদের মনে দাগ কাটে।’
নিজের দেখা বাস্তব ঘটনা এবং চারপাশের চরিত্রগুলোকেই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ‘ফ্যামিলি ক্রাইসিস’ নাটকে। নাটকের শেফালি খালার চরিত্রটি নির্মাতার নিজের পরিচিত এক নারীর। তিনি জানান, তাঁর চেনা পরিবারগুলোর মধ্যে ফ্যামিলি ক্রাইসিসের মতো পরিবারও রয়েছে, যেখানে বড় ভাই রোজগার করেন, মায়ের কোনো কাজ নেই তবু তিনি সম্মানের সঙ্গে পরিবারে অবস্থান করেন। তবে ভাবি চরিত্রটিকে এমন ইতিবাচক করে তুলে ধরা প্রসঙ্গে ভিন্ন কথা বললেন রাজ।
তিনি মনে করেন, সমাজে ভাবিদের নিয়ে নেতিবাচক ধারণাই বেশি। ১০টা খারাপ ভাবির মধ্যে একটি ভালো ভাবিও পাওয়া যায়, যিনি পরিবারের জন্য অনেক কষ্ট করলেও কাউকে বুঝতে দেন না। তিনি বলেন, ‘নাটকের শুরু থেকেই চেয়েছি পরিবারের পজিটিভ বিষয়গুলো সবার মধ্যে ছড়িয়ে যাক। প্রথমে শেফালি খালা নেগেটিভ চরিত্র ছিল। পরে তাকে পজিটিভ বানানো হলে দর্শকের কাছ থেকে ভালো রেসপন্স পেয়েছি।’
‘ফ্যামিলি ক্রাইসিস’-এর শুটিংয়ের শুরু থেকেই নির্মাতা ও সহশিল্পীরা হয়ে উঠেছেন আরেকটি ফ্যামিলি। শুটিংয়ের ফাঁকে সেখানে প্রতিনিয়ত জমে আড্ডা। শুটিংয়ে প্রায়ই সবাই সবার জন্য উপহার নিয়ে আসে। তবে উপহার সবচেয়ে কম আসে নির্মাতার জন্য। অবশ্য উপহার কম পেলেও ভক্তদের বাড়িতে নেমন্তন্ন কম পান না রাজ। গত বছর নাটকটির প্রচার শুরু হওয়ার পর থেকে অনেক ভক্তের বাড়ির দাওয়াতে যেতে হয়েছে তাঁকে। তিনি বলেন, ‘গত বছর নিউইয়র্কে গিয়েছিলাম বেড়াতে। সেখানকার বাঙালিরা নাটকের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। অনেক প্রবাসী জোর করে তাঁদের বাসায় নিয়ে গেলেন। সেখানকার অনেক বাসায় দাওয়াত খেতে হয়েছে।’