ঊষা গাঙ্গুলি বলতেন, ‘আমার কোনো লাইফ নেই থিয়েটার ছাড়া।’ তিনি দুই বাংলায় সুপরিচিত নাট্যনির্দেশক ও অভিনয়শিল্পী ঊষা গাঙ্গুলি। আজ সকালে থেমে গেছে তাঁর জীবনযাত্রা। দক্ষিণ কলকাতার তাঁর নিজের বাড়িতেই শে নিশ্বাস ত্যাগ করেন ঊষা গাঙ্গুলি। বয়স হয়েছিল ৭৫ ৷ জানা গেছে, কয়েক সপ্তাহ আগে তাঁর ভাই মারা যান৷ তারপর থেকেই মানসিক চাপে ভুগছিলেন তিনি। প্রাথমিকভাবে স্থানীয় চিকিৎসকের ধারণা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই ঊষা গাঙ্গুলির মৃত্যু হয়েছে।
কলকাতা থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানাগেছে, আজ সকালে ঊষা গাঙ্গুলি গৃহকর্মী এসে দেখেন বাড়ির দরজা খোলা। ঊষা গাঙ্গুলি মাটিতে সম্পূর্ণ অচেতন অবস্থায় পড়ে আছেন। গৃহকর্মী তখন আশপাশের মানুষদের ডাকেন। চিকিৎসককেও ডাকা হয়। কীভাবে তাঁর মৃত্যু হলো তা বুঝতে ঊষা গাঙ্গুলির মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে আনন্দবাজারের একটি খবরে।
ঊষা গাঙ্গুলির মৃত্যুতে বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবাংলার নাট্য ও সংস্কৃতি জগতে শোকের ছায়া নেমে আসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যায়, ঢাকার অনেক নাট্যব্যক্তিত্ব তাঁকে স্মরণ করেছেন, শোক প্রকাশ করেছেন তাঁর পুরোনো ছবি দিয়ে।
পরিচালক-অভিনেত্রী এবং সক্রিয় সমাজকর্মী হিসেবে ঊষা গাঙ্গুলি পরিচিত ছিলেন। সত্তর ও আশির দশকে কলকাতা শহরে হিন্দি থিয়েটারের রূপায়ণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি।
১৯৪৫ সালে জন্ম হয় ঊষা গাঙ্গুলির, ভারতের উত্তর প্রদেশে। উত্তর প্রদেশের নেরভা গ্রামের বাসিন্দা হলেও ঊষা গাঙ্গুলির জন্ম এবং বেড়ে ওঠা রাজস্থানে। তারপর কলকাতায় আসা। এ কারণে মাতৃভাষা হিন্দি হলেও বাংলা থিয়েটারে তিনি রেখেছেন অসামান্য কৃতিত্বের স্বাক্ষর। ছোটবেলা থেকেই নাচ-গান ও নাটকের প্রতি আলাদা টান ছিল তাঁর। ভরতনাট্যমে পারদর্শী ছিলেন। হিন্দি সাহিত্য নিয়ে তাঁর অগাধ পড়াশোনা ছিল৷ মাস্টার ডিগ্রিও সম্পন্ন করেন হিন্দি সাহিত্যে৷ পরে ভবানীপুর এডুকেশন সোসাইটি কলেজে শিক্ষকতা করেন। শিক্ষকতা করতে করতেই ১৯৭৬ সালে রঙ্গকর্মী হিসেবে একটি থিয়েটার দল তৈরি করেন উষা গঙ্গুলি। কলকাতায় হিন্দি নাটকের ক্ষেত্রে নতুন এক ধারা তৈরি করেছিলেন ঊষা গাঙ্গুলি। রঙ্গকর্মী গ্রুপ থিয়েটারে তাঁর পরিচালনায় ‘মহাভোজ’, ‘রুদালি’, ‘কোর্ট মার্শাল’ ও ‘অন্তর্যাত্রা’র মতো নাটকগুলো প্রশংসা কুড়িয়েছিল। ‘রুদালি’ নাটকটি বেশ সাড়া জাগিয়েছিল। ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘রেনকোট’ ছবির চিত্রনাট্যেও পরিচালককে সাহায্য করেছিলেন তিনি।
১৯৯৮ সালে পরিচালনার জন্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। তৃপ্তি মিত্রের পরিচালনায় ইবসেনের নাটক '‘আ ডলস্ হাউস’ অবলম্বনে '‘গুড়িয়া ঘর’–এ অভিনয়ের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের থেকে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কারও পেয়েছিলেন ঊষা গাঙ্গুলি।