গত বছরের নভেম্বরে ঢাকায় নাটকটির বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী হয়। ড্রয়িংরুম থিয়েটার বা অন্তরঙ্গ পরিবেশের নাটক এটি। এর মধ্যে অনেক লেখালেখি হয়েছে নাটকটি নিয়ে। সে লেখা পড়ে চট্টগ্রামের দর্শকেরাও জেনে গেছেন এর কাহিনি ও পটভূমি। সেইমতো মানসিক প্রস্তুতিও ছিল। কিন্তু সব পূর্বপ্রস্তুতি ভেঙে দিয়ে দর্শককে বিমূঢ় করে দিলেন নাটকের নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পী। নাটক শেষ হতেই নানা শব্দের তালিকার দিকে তাকিয়ে দর্শক যেন ভাবতে বসেছিলেন, জীবন আসলেই বিস্ময়কর। তালি দিতেও যেন ভুলে গিয়েছিলেন অনেকে।
চট্টগ্রামের খুলশীর একটি বাড়িতে গত সোমবার আর গতকাল মঙ্গলবার চটেশ্বরী রোডের আরেকটি বাড়িতে নাটকটির প্রদর্শনী হয়। মূল নাটকের নাম ‘এভরি ব্রিলিয়ান্ট থিং’। লিখেছেন ব্রিটিশ নাট্যকার ডানকান ম্যাকমিলান। সৈয়দ জামিল আহমেদের অনুবাদে বাংলায় এটি হয়ে উঠেছে ‘বিস্ময়কর সবকিছু’। স্পর্ধা ইনডিপেনডেন্ট থিয়েটার কালেকটিভের প্রযোজিত ও বিস্তার আর্ট কমপ্লেক্সের উদ্যোগে নাটকটি প্রদর্শিত হয়। নাটকে অভিনয় করেছেন মহসিনা আক্তার।
দেড় ঘণ্টার এ নাটকে মহসিনা দর্শকদেরও টেনে এনেছেন। কাউকে বাবা, কাউকে শিক্ষিকা, কাউকে চিকিৎসক বানিয়ে অভিনয় চালিয়ে গেছেন। বলা যায়, জনা বিশেক দর্শকের সবাই ছিল এই নাটকের কুশীলব। দর্শক আর অভিনয়শিল্পীর এমন স্থান বদল কিংবা রূপান্তর এ শহরের নাট্যমোদীদের অভিজ্ঞতায় একেবারেই নতুন।
‘বিস্ময়কর সবকিছু’ এক আত্মহত্যাপ্রবণ মায়ের সন্তানের কাহিনি। মায়ের বিষণ্নতা দেখতে দেখতে সে বড় হয়েছে। মাকে জীবনে টেনে আনবার কৌশল রপ্ত করতে গিয়ে সে আবিষ্কার করে এক অদ্ভুত খেলা। শিশুর চোখে পৃথিবীর যা কিছু বিস্ময়কর, তারই একটা তালিকা তৈরি করা শুরু করে সে। বৃষ্টির পর রংধনু, বাকরখানি, পাখি থেকে শুরু করে কী নেই সেই তালিকায়। বলা যায়, জীবনের যাবতীয় বিস্ময়ে ঠাসা সেই তালিকা। মাত্র সাত বছর বয়সে সেই তালিকা তৈরির কাজ শুরু। আর সেটা চলতে থাকে জীবনভর।
তবে তালিকা শেষ পর্যন্ত তার মাকে বাঁচাতে পারে না। আত্মহত্যার পথই তিনি বেছে নেন। একপর্যায়ে সেই মেয়ে আবিষ্কার করে, মায়ের মতো সেও বিষণ্নতায় আক্রান্ত। কিন্তু তবু এর থেকে বের হওয়ার পথ খোঁজার নামই তো লড়াই। আর তার মনে পড়ে যায়, শৈশবে বিস্ময়কর সবকিছুর তালিকাই এ লড়াইয়ের অস্ত্র। ক্রমে তালিকা লম্বা হতে লাগল। ছাড়িয়ে গেল ১০ লাখও। আসলে বিস্ময়বোধ ছাড়া বাঁচাই তো অসম্ভব।
অভিনেত্রী মহসিনা আক্তার ক্ষণে ক্ষণে নাটকের অভিনয় ছেড়ে বের হয়ে এসে দর্শকের সঙ্গে বিনিময় করেছেন। প্রতিটি সংলাপ বলার সময় মনে হয়েছে, নিজের কথাই বলছেন তিনি। দর্শক যেমন তার অকৃত্রিম হাসি দেখেছেন, তেমনি অভিনয় থামিয়ে বারবার চোখ মুছতেও দেখা গেছে তাকে।
নাটকের প্রান্তে এসে দর্শকদের মনে হতে পারে, জীবনে যা কিছু বিষাদের, যার ভার আর সওয়ার নয়, তা কাউকে না কাউকে বলতেই হবে। খুঁজে নিতে হবে নিজের বিস্ময়কর মুহূর্ত ও ঘটনার তালিকা।
যদি ‘সাইফ আলী খান রবীন্দ্রনাথের আত্মীয়’ এমন মজার আবিষ্কারও হয়, তাতেও অসুবিধা নেই। কারণ, জীবন আসলেই বিস্ময়কর।
নাটকের আলোক পরিকল্পনায় মো. ইকবাল হোসেন, সংগীতে মো. সোহেল রানা ও প্রপস করেছেন মো. সোহেল রানা, স্বাতী ভদ্র ও রাশেদ কবির সৌমিক।