‘দাদা, আর যাব না অই ইশকুলে পড়তে’ গুনাইয়ের কান্নাজড়িত সুরের এই গান গ্রাম অঞ্চলের অনেকেই জানেন। প্রচলিত এই লোকগাথাই ‘গুনাইবিবির পালা’। ‘গুনাইবিবি’ বাংলার চিরায়ত লোকগাথা নয়। সত্য ঘটনাই গ্রাম্য লোককবির বয়ানে পেয়েছে চিরায়ত রূপ। গুনাইবিবির কাহিনি যুগ যুগ ধরে চলে আসছে।
শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে মঙ্গলবার রাতে মিলল ঐতিহ্যবাহী লোকনাট্য ‘গুনাইবিবির পালা’। একাডেমির নন্দন মঞ্চে চলমান ২১ দিনব্যাপী এই উৎসবের পঞ্চম দিন ছিল মঙ্গলবার। এদিনের আয়োজনের অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে মঞ্চস্থ হয় ‘গুনাইবিবির পালা’। পালাটি পরিবেশন করেন রাজবাড়ীর শিল্পীরা।
একাডেমি প্রাঙ্গণে রাত আটটায় দর্শনীর বিনিময়ে আবদুল মাজেক প্রামাণিক ও নাজমুল হোসেন নির্দেশিত লোকনাট্য ‘গুনাইবিবির পালা’ শুরু হয়। পালাটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন সামাদ, হাবিবুর শেখ, মোজাফ্ফর, মুন্নি, নাজিম হোসেন, খালেক আকিজ শেখ, নায়েব আলী, রোকেয়া, মুক্তা প্রমুখ। এ পালার পরিবেশনায় দারুণ সাড়া পড়ে দর্শকের মধ্যে। নির্ধারিত সব আসন পূর্ণ হয়, দাঁড়িয়েও অনেকে উপভোগ করেন পালাটি।
উৎসবের পঞ্চম দিন বিকেলে নন্দন মঞ্চে ছিল একাডেমির পরিবেশনায় অ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনী। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনায় বৃন্দ আবৃত্তি পরিবেশন করে হিসাম, সুপ্ত, তেসিফ, জাবের, সাফিন ও স্বর্ণালি। একক আবৃত্তি করেন শিল্পী লায়লা আফরোজ। ‘পিন্দারে পলাশের বন’ গানের সুরে আনিসুল ইসলাম হিরুর পরিচালনায় সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে সৃষ্টি কালচারাল একাডেমি।
রাজবাড়ী জেলার পরিবেশনার শুরুতে ছিল জেলা ব্র্যান্ডিংয়ের ওপর ভিডিও তথ্যচিত্র প্রদর্শনী। ‘ও পৃথিবী এবার এসে’ এবং ‘দে তালি বাঙালি’ গানের সুরে সমবেত নৃত্য পরিবেশন করেন অনিকা দেবনাথ, সাদিয়া, মেহজাবিন, মৌনিতা আঁচল, ঐশ্বর্য রিমঝিম, হেমন্ত, শিপন, শিলা ও উপমা। পরিবেশিত হয় ‘ধনধান্যে পুষ্পেভরা’ শীর্ষক সমবেত সংগীত। একক সংগীত পরিবেশন করেন রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী ছায়া কর্মকার এবং উপজেলা পর্যায়ের শিল্পী তৌকির আহমেদ। এ ছাড়া পরিবেশিত হয় যন্ত্রসংগীত।
বগুড়া জেলার পরিবেশনায় ছিল সমবেত সংগীত। ‘কাঁকন তুলে ঝুমুর নাচন’ গানের সুরে পরিবেশিত হয় সমবেত নৃত্য। একক সংগীত পরিবেশন করেন জাতীয় পর্যায়ের শিল্পী ম্যাক এপেল এবং উপজেলা পর্যায়ের সারিয়াকান্দির শিল্পী মো. জমিরুল ইসলাম। যন্ত্রসংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী হাসিনুর রহমান, বিমল কবিরাজ, আবদুর গফুর, নিখিল চন্দ্র দাস ও আরমানুর রশিদ।
মৌলভীবাজার জেলার পরিবেশনায় ‘শোনো একটি মুজিবরের থেকে’ এবং ‘কেমনে চিনিব তোমারে’ গানের সুরে পরিবেশিত হয় সমবেত নৃত্য। একক সংগীত পরিবেশন করেন জাতীয় পর্যায়ের শিল্পী অনুপম পাল এবং উপজেলা পর্যায়ের শিল্পী সুশান্দ দাস। এ ছাড়া পরিবেশিত হয় যন্ত্রসংগীত।
কাল বুধবার বিকেল চারটা থেকে একাডেমি প্রাঙ্গণ নন্দন মঞ্চে পরিবেশিত হবে পটুয়াখালী, বান্দরবান ও নরসিংদী জেলার সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। রাত আটটায় একাডেমি প্রাঙ্গণে দর্শনীর মিনিময়ে অনুষ্ঠিত হবে ঝালকাঠী জেলার কাঠালিয়ার মা মনসা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী লোকনাট্য ‘রয়ানী’।