ছোটদের নাটকের বড় উৎসব শুরু

শিশু–কিশোর নাট্যোৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর ছিল অ্যাক্রোবেটিক পরিবেশনা। ছবি: আশরাফুল আলম
শিশু–কিশোর নাট্যোৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর ছিল অ্যাক্রোবেটিক পরিবেশনা।  ছবি: আশরাফুল আলম

নাচ-গান আর নাটক করে—সারা দেশের এ রকম শিশুরা এখন ঢাকায়। তাদের একজন যশোরের নাজিবুল। মেঝেতে বসে চেয়ারের ওপর রেখে একটি ফরম পূরণ করছিল সে। নিজের অনুভূতির কথা সেখানে লিখেছিল এভাবে—‘আজ ঢাকায় নাটক করতে এসে বেশ আনন্দ হচ্ছে। কারণ, অনেক নতুন বন্ধু পেয়েছি।’

ঢাকায় আছেন, অথচ শিল্পকলা একাডেমিতে কাল যাননি যাঁরা, তাঁরা বঞ্চিত হবেন। নির্মল আনন্দ আর ঝাঁকে ঝাঁকে উদ্যমী শিশু-কিশোরের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা দেখতে না যাওয়া রীতিমতো অন্যায়। কেননা, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে তারা এসেছে রাজধানীবাসীকে দেখাতে যে, অনেক সুযোগ-সুবিধা না পেয়েও সংস্কৃতিচর্চায় তারা পিছিয়ে নেই। তাদের নিয়ে ঢাকায় শুরু হয়েছে বড় একটি নাট্য ও সাংস্কৃতিক উৎসব।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হয়েছে চতুর্দশ জাতীয় শিশু-কিশোর নাট্য ও সাংস্কৃতিক উৎসব। প্রধান অতিথি হিসেবে উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সাদা ক্যানভাসে তুলি দিয়ে ছবি এঁকে চিত্রাঙ্কন আয়োজনের শুভ সূচনা করেন শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল কামাল বায়েজীদ ও শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।

গেরুয়া পোশাকের একটা ছোট্ট দল অপেক্ষা করছিল। পরিবেশনা শেষে নরসিংদী ফিরবে তারা। সে রকম ফরিদপুরের খেয়া সাংস্কৃতিক সংস্থা, গোপালগঞ্জের জেলা শিল্পকলা একাডেমি শিশু নাট্যদল আর যশোরের সম্মিলিত স্কুল নাট্যদল। সংস্কৃতিচর্চায় সবচেয়ে এগিয়ে থাকা জেলাগুলোর অন্যতম যশোর। সেখানকার জেলা কালচারাল অফিসার মো. হায়দার আলী জানালেন, এ উৎসবে যোগ দেওয়ার জন্য তাঁদের দেওয়া হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। অথচ যাওয়া-আসার বাস ভাড়াতে খরচ হচ্ছে ৮০ হাজার। এটাই তাঁদের সারা বছরের চিত্র। বছরে প্রায় ২২টি অনুষ্ঠান করতে হয় তাঁদের, এ জন্য পান মাত্র ৩ হাজার টাকা। তিনি জানান, জেলা শিল্পকলার হল ভাড়া দিয়ে কিছু টাকা যদি না আসত, এত অনুষ্ঠান করতে পারতেন না তাঁরা।

উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও উঠে আসে সংস্কৃতির বাজেটের কথা। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, মরা ডাল সংস্কৃতির শাখা হতে পারে না। এ শাখাটিকে হতে হবে ফুলে-ফলে, পত্রপল্লবে সুশোভিত। নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর মতো করে থমকে থমকে সংস্কৃতি চলতে পারে না। সংস্কৃতিবান্ধব প্রধানমন্ত্রীর কাছে যথাযথভাবে দাবি করলেই তিনি বরাদ্দ বাড়িয়ে দেবেন।

শিশুদের এই সাংস্কৃতিক উৎসব চলবে আগামী শনিবার পর্যন্ত। প্রতিদিন বিকেল চারটা থেকে শুরু হবে উৎসবের নাট্য ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। শিল্পকলা একাডেমিতে যত মিলনায়তন আছে, সব কটাতেই থাকবে কোনো না কোনো জেলার শিশুদের নাচ, গান, নাটক। এ উৎসবে অংশ নিচ্ছে সারা দেশের ৯৫টি শিশুনাট্য সংগঠনের ১০ হাজারের বেশি শিশু। যৌথভাবে এ উৎসবের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও পিপলস থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশন।