বেঙ্গল শিল্পালয়ের নবযাত্রা

ক্যানভাসে সাধনার কাজ

শিল্পী কাজী গিয়াসউদ্দিনের (ডানে) একক চিত্রকলা প্রদর্শনী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ক্যাটালগ হাতে (বাঁ থেকে) লুভা নাহিদ চৌধুরী, আবুল খায়ের, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, স্যার ফজলে হাসান আবেদ, হিরোইয়াসু ইযুমি। গতকাল ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে। ছবি: প্রথম আলো
শিল্পী কাজী গিয়াসউদ্দিনের (ডানে) একক চিত্রকলা প্রদর্শনী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ক্যাটালগ হাতে (বাঁ থেকে) লুভা নাহিদ চৌধুরী, আবুল খায়ের, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, স্যার ফজলে হাসান আবেদ, হিরোইয়াসু ইযুমি। গতকাল ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে।  ছবি: প্রথম আলো

প্রায় বছর কুড়ি আগে ক্যানভাসে তেলরং চড়িয়েছিলেন কাজী গিয়াসউদ্দিন। তারপর আঁকা হয়েছে অনেক অনেক ছবি। কিন্তু সেই ছবিটি আর শেষ করা হয়নি। ২০১৭ সালে ছবিটিতে শেষ আঁচড় দিতে পেরেছিলেন চিত্রকর। বিমূর্ত সেই ছবির নাম ‘প্রকৃতি-১ ’। কী সূক্ষ্ম, সুনিপুণ, সংবেদনশীল সেই কাজ। তাতে নিসর্গের অন্তর্নিহিত স্পন্দন আর সৌন্দর্য। সেসব উপলব্ধি করে ক্যানভাসে তুলে রাখা সাধনার কাজ। ছবিটি এখন শোভা ছড়াচ্ছে রাজধানীর নান্দনিক গ্যালারি বেঙ্গল শিল্পালয়ে।

গতকাল শুক্রবার নতুন করে দুয়ার খুলল বেঙ্গল শিল্পালয়। ১৮ বছর আগে যাত্রা শুরু করে মাঝে তিন বছরের বিরতি নিয়েছিল সেটি। নবযাত্রার প্রথম প্রদর্শনী হচ্ছে খ্যাতিমান চিত্রকর কাজী গিয়াসউদ্দিনের তেলরং ও জলরঙের ৭৩টি চিত্রকর্ম নিয়ে। বিকেলে সেই প্রদর্শনী ‘দ্য ওয়ার্ক অব ক্রিয়েশন’-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। অতিথিদের মধ্যে ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপারসন স্যার ফজলে হাসান আবেদ, শিল্পী রফিকুন নবী, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত হিরোইয়াসু ইযুমি প্রমুখ।

কাজী গিয়াসউদ্দিন প্রথম বাংলাদেশি, যিনি ১৯৮৫ সালে টোকিও ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব ফাইন আর্টস অ্যান্ড মিউজিক থেকে চারুকলায় ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০১৮ সালে জাপানের সম্রাট তাঁকে দিয়েছেন ‘অর্ডার অব দ্য রাইজিং সান’ সম্মাননা। জাপানে চলে যাওয়ার আগে তাঁর গ্যালারি–ভর্তি ছবি উধাও হয়ে যায়। তিনি বলেন, ‘রফিকুন নবীর হাতে আমার চিত্রকলায় হাতেখড়ি। তাঁর সঙ্গে আউটডোরে করা একটি ছবি এখানে দেখা যাবে।’

নবরূপের বেঙ্গল শিল্পালয়ে ছবি কেনা-বেচা হবে না। এটি শুধু প্রদর্শনের জন্য। নিচতলার নাম সুবীর চৌধুরী প্রদর্শনশালা এবং দোতলা কামরুল হাসান প্রদর্শনশালা। ২০০০ সাল থেকেই বেঙ্গলের সঙ্গে ছিলেন আনিসুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘চিত্রশিল্পের বিকাশে বেঙ্গল গ্যালারির ভূমিকা আছে। চিত্রকলাকে সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া ও দর্শকরুচির উন্নয়নে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন যে ভূমিকা রেখেছে, সেটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’ কাজী গিয়াসউদ্দিনের চিত্রকর্ম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অসাধারণ সূক্ষ্মতা, রঙের সংগত ব্যবহারের মধ্য দিয়ে তিনি নিজস্বতা তৈরি করেছেন। তাঁর অনেক ছবিকে দূর থেকে অনেকটা গুহাচিত্রের মতো মনে হবে। কাছে এলে সূক্ষ্ম কাজের সামগ্রিকতা উপলব্ধি করা যাবে। একজন উপযুক্ত শিল্পীর কাজ দিয়েই গ্যালারির নবযাত্রা হলো।’

স্যার ফজলে হাসান আবেদ বলেন, ‘কাজী গিয়াসউদ্দিন সমসাময়িক শিল্পগুরু। জাপানের সম্মাননা পাওয়ায় তাঁকে অভিনন্দন। জাপান বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নেও অবদান রেখেছে। শিল্পকলা নিয়ে কাজ করার জন্য ঢাকায় এ রকম একটি ভবন নির্মাণ করতে পারায় বেঙ্গল ফাউন্ডেশনকে অভিনন্দন।’

বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের বলেন, ‘আমরা আর ছবি বিক্রি করব না। কেবল ভালো চিত্রকরদের চিত্রকর্ম দেখাব, সঙ্গে আমদের সংগ্রহে থাকা ৬ থেকে ৮ হাজার চিত্রকর্ম। আনিস মামার কাছে আমি ঋণী। আর আবেদ ভাই আমার গুরু, আমার ভালো-মন্দ সব কাজের দায় ও কৃতিত্ব তাঁর।’

অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী।