গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে মারা যান অভিনেত্রী মিনু মমতাজ। জানা যায়, হাসপাতালের বকেয়া বিল পরিশোধ করতে না পারার কারণে আজ বুধবার বেলা একটা পর্যন্ত এই অভিনেত্রীর মরদেহ একটি বেসরকারি হাসপাতালের মর্গে ছিল। একজন অভিনেত্রীর মরদেহ এভাবে মর্গে থাকার ঘটনাটি গতকাল মঙ্গলবার রাতেই অভিনয় শিল্পী সংঘের নজরে আসে। পরে আজ সেই সংগঠনের পক্ষ থেকে হাসপাতালের বকেয়া বিল পরিশোধ করে মরদেহ দাফনের ব্যবস্থা করা হয়।
করোনাভাইরাসের লক্ষণ দেখা দিলে ৪ সেপ্টেম্বর মিনু মমতাজকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাঁর করোনা টেস্ট করা হলে ফলাফল ‘পজিটিভ’ আসে। তখন থেকে গতকাল মৃত্যুর আগপর্যন্ত মিনু মমতাজ ওই হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন ছিলেন। প্রায় ১৮ দিনে হাসপাতালে বড় অঙ্কের বিল বকেয়া পড়ে যায়। এই অঙ্কের বিল পরিশোধে অপারগ ছিল অভিনেত্রীর পরিবার।
‘হাসপাতালে থাকার সময় দেখলাম তাঁর নাতি-নাতনি এবং অন্য আত্মীয়স্বজন ডেথ সার্টিফিকেট নিতে চাইছিলেন। তাঁরা অনেকেই দাবি করছিলেন, যেন এটা তাঁদের দেওয়া হয়। মনে হয়েছে, এই ডেথ সার্টিফিকেট কে নেবে, সেটা নিয়েই কিছুটা জটিলতা আছে।আহসান হাবিব নাসিম
আজ বেলা একটার দিকে অভিনয় শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব নাসিমের সঙ্গে যখন কথা হয়, তখন তিনি সেই হাসপাতাল থেকে বের হচ্ছিলেন। নাসিম জানান, সংগঠনের পক্ষ থেকে তাঁরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিলের কিছু অংশ মওকুফ করিয়েছেন। বাকি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে অভিনয় শিল্পী সংঘের তহবিল থেকে। সাধারণ সম্পাদক নাসিম বলেন, ‘আমরা রাতে জানতে পারার পর থেকেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলি। আজ আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে বাকি টাকা দিয়ে মরদেহ মর্গ থেকে রিলিজের ব্যবস্থা করি। বাদ জোহর মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে মরহুমের মরদেহ দাফন করা হয়।’ এ সময় এই প্রয়াত অভিনেত্রীর ছেলে, পুত্রবধূ ও নাতি–নাতনিরা উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল মরদেহ কেন হস্তান্তর হয়নি, তা জানতে চাইলে অভিনেতা নাসিম জানান, মিনু মমতাজের সন্তানেরা হয়তো কিছুটা আর্থিক সংকটে থাকতে পারেন। তাই তাঁরা পুরো বিল পরিশোধ করে মরদেহ নিতে পারেননি। তা ছাড়া তিনি জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই অভিনেত্রীকে পাঁচ লাখ টাকার আর্থিক অনুদান দিয়েছিলেন। সেই টাকা সঞ্চয়পত্র করে রাখা। সেটা নিয়েই তাঁর সন্তান ও পরিবারের অন্যদের মধ্যে মনোমালিন্য আছে বলে আঁচ করা যায়। নাসিম বলেন, ‘হাসপাতালে থাকার সময় দেখলাম তাঁর নাতি-নাতনি এবং অন্য আত্মীয়স্বজন ডেথ সার্টিফিকেট নিতে চাইছিলেন। তাঁরা অনেকেই দাবি করছিলেন, যেন এটা তাঁদের দেওয়া হয়। মনে হয়েছে, এই ডেথ সার্টিফিকেট কে নেবে, সেটা নিয়েই কিছুটা জটিলতা আছে। পরে আমরা যেহেতু বিল পরিশোধ করেছি, তাই সংগঠন থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ছেলের হাতেই ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া হোক। যেহেতু তাঁর ছেলেকে আমরা হাসপাতালে পেয়েছি।’
মিনু মমতাজের তিন ছেলে। বড় ছেলে আগেই মারা গেছেন। এক ছেলে ঢাকায় থাকেন, অন্যজন যুক্তরাষ্ট্রে। এই অভিনেত্রী প্রায় চার দশক ধরে টেলিভিশন, মঞ্চনাটক এবং বেশ কিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। জানা যায়, তিনি দীর্ঘদিন ধরে কিডনি ও চোখের সমস্যায় ভুগছিলেন। আড়াই বছর ধরে এই প্রবীণ অভিনয়শিল্পীকে নানাভাবে সাহায্য করে আসছিল অভিনয় শিল্পী সংঘ।